লোকের মুখে প্রচারিত কথায় কোনও অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিশুমৃত্যুর ১৭ বছর পর অভিযুক্ত পিসিকে বেকসুর খালাসের আগে মন্তব্য কলকাতা হাই কোর্টের।
ভাইপোকে খুনের ঘটনায় পিসিকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টে গিয়েছিলেন আসামি। মঙ্গলবার হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে বলে, ‘‘সন্দেহ যতই প্রবল হোক, সেটি কখনও প্রমাণের জায়গা নিতে পারে না।’’ তাদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘তদন্তকারী সংস্থা খুনের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই ভাইপোর মৃত্যুর সাজা থেকে পিসিকে মুক্তি দেওয়া হল।’’
আদালত সূত্রে খবর, মামলাটি হাওড়ার সাঁকরাইলের মানিকপুর গ্রামের। ২০০৮ সালের ১২ অগস্ট ঠাকুরমার কাছে দেড় বছরের শিশুকে রেখে বাবা-মা কাজে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, খেলতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে ভাইপোকে নিয়ে গিয়েছিলেন শিশুটির পিসি মনা নস্কর। পরে তিনি পুকুরের জলে ফেলে শিশুটিকে খুন করেন। স্থানীয়দের মুখে মুখে সেই কথা গোটা গ্রামে রটে যায়। শিশুটির দেহ পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
অন্য দিকে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উঠে আসে, ডুবে নয়, শ্বাসরুদ্ধ মারা গিয়েছে শিশুটি। দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলে। শিশুর শরীরে জল ও কাদা পাওয়া গিয়েছিল। যদিও বিচার চলাকালীন চিকিৎসক সাক্ষ্যে বলেন, কেউ জীবিত অবস্থায় ডুবে মারা গেলে তবেই তাঁর শরীরে জল ঢোকে। কিন্তু মৃতদেহকে জলে ফেলা হলে শরীরে জল ঢোকা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:
ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পিসিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০১৫ সালে নিম্ন আদালত তাঁকে আজীবন কারাবাসের রায় ঘোষণা করে। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যান অভিযুক্ত। দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এই মামলায় কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই। পুরো ঘটনা শুধুমাত্র অনুমানের উপর নির্ভর করে তৈরি। এই মামলায় ঠাকুরমার বক্তব্যও বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, তিনি নিজেই বলেছেন আসামি শিশুটিকে পছন্দ করতেন না। তার পরেও কেন তিনি শিশুটিকে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন? কী কারণেই বা শিশুটিকে খুন করা হয়েছে, পুলিশ তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ। তদন্তের মূল সাক্ষী সঙ্গীতা নামে এক মহিলা। অথচ পুলিশ তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করেনি বলে পর্যবেক্ষণ আদালতের। সঙ্গীতাই প্রথম খুনের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। হাই কোর্টের রায়, বিচার এবং তদন্তে অসঙ্গতির কারণে আদালত মনে করছে অভিযুক্তের দোষ প্রমাণিত হয়নি। তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করা হল।