Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Calcutta High Court

Abortion order: এটা একটা বিচ্ছিন্ন রায় হিসেবেই থাকুক

কিছু মা-বাবা বিরল রোগ বা বিশেষ ভাবে সক্ষম সন্তানকে ডাক্তার দেখাতে তারিখ ভুল করেন না। আবার অনেকে সামান্য ত্রুটি দেখলেই মুষড়ে পড়েন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায় (নবজাতক চিকিৎসক)
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৭
Share: Save:

জন্মের অধিকার প্রত্যেক শিশুরই আছে। তাই গর্ভাবস্থাকে অসম্পূর্ণ করা উচিত নয় এটা যেমন একটা মত, তেমনই অন্য মত হল গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক অক্ষমতা খুব বেশি হলে তাকে জন্ম দেওয়ার প্রশ্নে বাবা-মায়ের মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়া হোক। কারণ, আমরা যাই বলি না কেন, মা-বাবাকেই সেই শিশুর দায়িত্ব নিতে হবে। তাঁরা যদি অক্ষম হন, সেটা ওই শিশুর জীবনকে আরও দুরূহ করে তুলবে।

দীর্ঘদিন চিকিৎসা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যে কোনও সমস্যাই আপেক্ষিক।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা শিশু রোগীর দু’রকম মানসিকতার পরিবারের সঙ্গে
পরিচয় হয়েছে। কিছু মা-বাবা থাকেন, যাঁরা সত্যিই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের। কিন্তু বিরল রোগ, ডাউন সিনড্রোম বা বিশেষ ভাবে সক্ষম সন্তানকে ডাক্তার দেখাতে তাঁরা তারিখ ভুল করেন না। ডাক্তারের কথা মতো সন্তানের জন্য তাঁদের যথাসাধ্য করেন। আবার এমন পরিবারও দেখেছি, সন্তানের সামান্য শারীরিক বা মানসিক ত্রুটি দেখলেই যাঁরা মুষড়ে পড়েন।

সেই আপেক্ষিকতার কথা ভেবে বিচক্ষণ হওয়া উচিত চিকিৎসক এবং আইনের রক্ষাকর্তাদের। বৃহত্তর সামাজিক ক্ষেত্রে এই রায়ের প্রভাব পড়া কখনওই উচিত নয়। ‘কেস টু কেস’ বিচারের ক্ষেত্রে বরং
তোলা থাক এমন দৃষ্টান্তমূলক রায়। বিজ্ঞানের নিত্যনতুন গবেষণায় ডাউন সিনড্রোম বা বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের চিকিৎসার
ক্ষেত্রও উন্নত হচ্ছে। তাই এই ধরনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে
রিপোর্ট বা বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে, সেখানে যেন পারদর্শিতায় ফাঁক না থাকে। সেটা দেখতে হবে। অন্তঃসত্ত্বার যে ইউএসজি রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত ‘মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি’র রায় দিল, সেই রিপোর্ট যেন নিখুঁত হয়। তা না হলে সেটা সমাজের পক্ষে চরম হানিকর হবে।

এই সিদ্ধান্ত কি ২৪ সপ্তাহের মধ্যে নেওয়া যেত না? নিশ্চয়ই যেত। গর্ভধারণের ১৬-২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভবতীর আল্ট্রাসাউন্ড করে ভ্রূণের ত্রুটি ধরা পড়ার কথা। বহু ক্ষেত্রে ফাঁক থাকে সেখানেই। স্ক্যান করেন যে চিকিৎসক, তাঁরা অনেক সময়েই সেই কাজে পারদর্শী নন। যার ফল ভুগতে হয় মা-বাবাকে এবং গর্ভবতীর চিকিৎসককে। খানিকটা সেই ত্রুটির কারণে তৈরি হয় এমন অনভিপ্রেত পরিস্থিতি।

আমরা যেটা করতে পারি তা হল, বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে গর্ভাবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কড়া আইন জারি হোক। সরকারি হাসপাতালে সেই পরীক্ষার পরিকাঠামো আরও শক্তপোক্ত করা হোক। যাতে সময়েই ধরা পড়ে ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি। তা হলে এমন নীতি-যুক্তি-আবেগের লড়াই আর আমাদের যুঝতে হয় না।

  • লেখক নবজাতক চিকিৎসক
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Abortion Doctor's Advice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE