—প্রতীকী ছবি।
আড়াই বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে খুনের অপরাধে এক সহিসকে ফাঁসির আদেশ দিল কলকাতার নগর দায়রা আদালত। বৃহস্পতিবার ওই আদালতের মুখ্য বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল এই নির্দেশ দেন। সাজাপ্রাপ্তের নাম সুরেশ পাসোয়ান। তার বাড়ি বিহারের বৈশালীতে। এ দিন রায় ঘোষণার আগে সুরেশকে কাঠগড়ায় তুলে বিচারক জানিয়ে দেন, এটি বিরলতম ঘটনা। তাই ফাঁসির আদেশ।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের ২১ জুলাই সকালে হেস্টিংস থানা এলাকায় ঘোড়দৌড়ের মাঠের উত্তর দিকে একটি নর্দমা থেকে ওই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। বিদ্যাসাগর সেতুর নীচে একটি ঝুপড়িতে দিদিমার সঙ্গে থাকত সে। নাতনিকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে শিশুটির দিদিমা হেস্টিংস থানার তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর সৈকত নিয়োগীর কাছে অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়। শিশুটির দেহের ময়না-তদন্ত করে জানা যায়, তাকে প্রথমে ধর্ষণ, পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০ জুলাই রাতে নাতনিকে দুধ খাওয়াতে উঠে দিদিমা দেখেন, সে ঘরে নেই। পড়শি ফুটপাতবাসীরা শিশুটিকে খুঁজতে বেরোন। ২১ তারিখ ভোরে সুরেশকে ফোর্ট উইলিয়ামের দিক থেকে ট্রামলাইন ধরে হেঁটে আসতে দেখা যায়। সে কোথায় গিয়েছিল জানতে চাওয়া হলে সুরেশ বলে, লাভার্স লেনে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এখন বেকারি রোডের আস্তাবলে ফিরে যাচ্ছে। সেখানে তার কাকাও থাকেন। এর পরেই সুরেশ বেপাত্তা হয়ে যায়।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, শিশুটি যেখানে থাকত, ২০ জুলাই বিকেলে সুরেশ সেখানে এসে তাকে চকলেট দিয়ে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাচ্চাটির দিদিমা বাধা দেওয়ায় সে তখনকার মতো চলে যায়। ঘৌড়দৌড়ের মাঠের এক দারোয়ানও তদন্তকারী এক অফিসারকে জানিয়েছিলেন, ওই রাতে তিনি সুরেশকে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। এতেই সুরেশের উপরে সন্দেহ দৃঢ় হয় তদন্তকারী অফিসারদের। এর পরে সুরেশের কাকার বেকারি রোডের ঘরে হানা দেন তাঁরা। ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, সুরেশ দেশের বাড়ি বৈশালী যাওয়ার আগে তাঁকে খুনের কথা বলে গিয়েছে। এর পরেই হেস্টিংস থানার তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর তথাগত সাধু ও পুষ্পল ভট্টাচার্য বৈশালী থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন সুরেশকে। জেরায় সে ধর্ষণ ও খুনের কথা কবুল করে।
মামলার সরকারি কৌঁসুলি তমাল মুখোপাধ্যায় এ দিন জানান, ওই সহিসের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ ও খুনের ধারা ছাড়াও পকসো আইনের ধারাতেও চার্জশিট পেশ হয়। ধর্ষণের দায়ে ২০ বছর কারাবাস ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অপহরণের দায়ে আট বছর কারাবাস ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এ দিন রায় ঘোষণার আগে বিচারক হিন্দিতে ঘটনাটি সংক্ষিপ্ত ভাবে সুরেশকে জানান। রায় ঘোষণার সময়ে সে কাঠগড়ায় হাত জড়ো করে দাঁড়িয়েছিল। রায় ঘোষণা করে বিচারক তার কাছে জানতে চান, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার জন্য সুরেশের কোনও আইনজীবী রয়েছেন কি না। সুরেশ মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয়, তার কোনও আইনজীবী নেই। তমালবাবু জানান, নগর দায়রা আদালতে সুরেশের হয়ে সওয়াল করার জন্য লিগ্যাল এড সার্ভিস থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy