E-Paper

রাতের পার্কিংয়ে ‘ভূত’-এর দাপট, শিকেয় পুর আয়

শহর কলকাতায় রাতে বেআইনি ভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখলে পুর কর্মীরা গাড়ির চাকায় লোহার কাঁটা পরিয়ে দেন। নিয়মমতোযাঁর গাড়িতে কাঁটা পরানো হয়েছে, তিনি পুরসভায় টাকা জমা দিলে কাঁটা খুলে নেওয়া হয়।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২০

—প্রতীকী চিত্র।

সর্ষের মধ্যেই ভূত!

শহর কলকাতায় রাতে বেআইনি পার্কিংয়ের রমরমায় ‘ভূত’-এরকথাই শোনাচ্ছেন বিভিন্ন পার্কিং সংস্থার প্রতিনিধিরা। আর সেইভূতের দাপটেই শহরে রাতের পার্কিং ব্যবস্থা থেকে আয় শিকেয় উঠেছে কলকাতা পুরসভার। নিজেরওয়ার্ডেই (৮৮ নম্বর) রাতে বেআইনি পার্কিংয়ের রমরমায় সম্প্রতি মাসিক পুর অধিবেশনে ক্ষোভ সামলাতে পারেননি কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন তথা দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়। উত্তর কলকাতার তৃণমূলপুরপ্রতিনিধি মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়ের পার্কিং সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের পরেই নিজের চেয়ার থেকেমালা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে রাতে বেআইনি ভাবে গাড়ি দাঁড় করানো থাকে। ওখানকার টাকা পুরসভা পায় না। তা হলে কে পাচ্ছে? পুরসভা খতিয়ে দেখুক!’’

কলকাতা পুরসভা নিযুক্ত, ভবানীপুর এলাকায় রাতের পার্কিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার এক প্রতিনিধির কথায়, ‘‘স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে মানিয়ে-গুছিয়ে চলতে হয়। না-হলেই বিপদ!’’

কীসের বিপদ? উত্তরে ওই প্রতিনিধি বলেন, ‘‘ধরা যাক, কোনও রাস্তায় আমরা বৈধ ভাবে দায়িত্বে রয়েছেন। পাশেই দেখছি, কেউ অবৈধ ভাবে পার্কিং ফি আদায় করছেন। তাঁরা শাসকদলের বড়-মেজোদাদা-নেতাদের ঘনিষ্ট। এঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই কিন্তু বিপদ।’’ পুরসভা নিযুক্ত একাধিক পার্কিং সংস্থার প্রতিনিধিরা এটাকেই ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ বলতে চাইছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি পার্কিং সংস্থার প্রতিনিধি জানালেন,ভবানীপুর এলাকায় মাস আটেক আগে রাতের বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য গাড়ির চাকায় কাঁটা পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুরসভার তরফে। পরের দিন পুর কর্মীরা গিয়েদেখেন, লোহার কাঁটা ভেঙে গাড়ি হাপিস! পুরসভার পার্কিং দফতরের তরফে থানায় অভিযোগ করতে গেলে উল্টে পুর কর্মীদেরই মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।ভবানীপুর এলাকার ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি, পাপিয়াসিংহের স্বামী বাবলু সিংহ বছর দেড়েকের আগে এমনই এক ঘটনার কথা মনে করালেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এখানে পুর কর্মীরা রাতে গাড়ির চাকায় কাঁটা পরাতে এলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গাড়িচালকরা। এখানে রাতে শহরের রাস্তায় বেশিরভাগ ট্যাক্সি দাঁড় করানো থাকে। গরিবট্যাক্সিচালকদের অভিযোগ ছিল, রাতে পুরসভাকে ফি দিতে হলে তাঁদের চলবে কী ভাবে?’’

শহর কলকাতায় রাতে বেআইনি ভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখলে পুর কর্মীরা গাড়ির চাকায় লোহার কাঁটা পরিয়ে দেন। নিয়মমতোযাঁর গাড়িতে কাঁটা পরানো হয়েছে, তিনি পুরসভায় টাকা জমা দিলে কাঁটা খুলে নেওয়া হয়। রাতেরশহরে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য সাধারণ মানুষ অনলাইনেও পুরসভাকেপার্কিং ফি দিতে পারেন। পুর পার্কিং দফতরের কর্মীরা সপ্তাহে দু’-তিনরাত অবৈধ পার্কিং এলাকায় কাঁটা পরানোর কাজ করেন। ওই দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রয়োজনের তুলনায় পার্কিং দফতরের লোক অত্যন্ত কম। শুধু কাঁটা পরানোইনয়, সেগুলো খুলেও নিয়ে আসতে হয়। কাঁটা পরাতে গেলে পুলিশের সাহায্য লাগে। ফলে রাতে পার্কিং দফতরকে অভিযান চালাতে গেলে একাধিক বিষয়ের উপরে নির্ভর করতে হয়।’’

রাতের শহরে পার্কিং ব্যবস্থার একাধিক অভিযোগ সম্পর্কেকলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘এরকম হতেই পারে। আমাকে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Parking KMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy