E-Paper

মুখে প্রবল হাওয়া, বিড়ালের মৃত্যুতে প্রশ্নে পোষ্য পরিচর্যা কেন্দ্র

অভিযোগ, কোনও রকম লাইসেন্স ছাড়াই কলকাতায় পোষ্যের গ্রুমিং ব্যবসা চালাচ্ছে ‘পেট প্লাজ়া’ নামে একটি সংস্থা। তাদেরই যোধপুর পার্কের পার্লারে ঘটেছে ঘটনাটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৩

—প্রতীকী চিত্র।

প্রবল শব্দে মুখের সামনে চলছে ‘ব্লোয়ার’। লোম পরিষ্কার করার নামে এমন ভাবে হাওয়া চালানোয় ছটফট করছে বছর আড়াইয়ের পার্সিয়ান বিড়াল ‘পুটকি’। কিন্তু তবু তাকে ছাড়ছেন না ‘গ্রুমিং সেশনের’ নামে কাজ চালানো যুবক। এর মধ্যে খাঁচায় ভরে মুখে হাওয়া দেওয়া শুরু হতে বিড়ালটির ছটফটানি আরও বেড়ে গেল। মিনিট কয়েক পরে হঠাৎই কাঁপতে শুরু করল বিড়ালটি। কয়েক বার খিঁচুনির পরে কাত হয়ে পড়েগেল সে।

পরিচর্যা করাতে নিয়ে গিয়ে এ ভাবেই আদরের পোষ্যের মৃত্যু দেখলেন সদ্য মুম্বই থেকে কলকাতায় আসা যুগল অনুপম চক্রবর্তী এবং অঙ্কিতা ব্যানার্জি। রবিবারের এই ঘটনা গড়ায় থানা-পুলিশ পর্যন্ত। ওই যুগলের অভিযোগ, কোনও রকম লাইসেন্স ছাড়াই কলকাতায় পোষ্যের গ্রুমিং ব্যবসা চালাচ্ছে ‘পেট প্লাজ়া’ নামে একটি সংস্থা। তাদেরই যোধপুর পার্কের পার্লারে ঘটেছে ঘটনাটি। প্রথমে যাদবপুর থানা থেকে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। ঘটনাস্থল যে হেতু লেক থানার অন্তর্গত, পরে সেখান থেকে পুলিশকর্মীরা যান। তবে লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও বুধবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করা হয়নি বলে অভিযোগ।

অঙ্কিতা বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে আমাদের বিয়ে। তাই মুম্বই থেকে সদ্য আমরা কলকাতায় এসেছি। কয়েক দিন আগেই আদরের তিনটি পোষ্য বিড়ালকে আনা হয়েছে। বিয়ের আগে ওদেরও সাজিয়ে নেব ভেবে যোধপুর পার্কের ওই গ্রুমিং সেন্টারে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওদের লাইসেন্সই নেই। আমাদের আদরের পুটকিকে ওরা খুন করেছে।’’

রবিবার নিজেদের তিনটি বিড়ালকে ওই সেন্টারে নিয়ে যান অনুপম-অঙ্কিতা। কাজ হয়ে গেলে তাঁদের ডেকে নেওয়া হবে বলে জানিয়ে বিড়ালগুলিকে রেখে যেতে বলা হয়। অনুপমের অভিযোগ, পরে ফিরে এসে বিকট আওয়াজ পেয়ে অঙ্কিতা ভিতরে দেখতে যান। তত ক্ষণে বিড়ালটির মৃত্যু হয়েছে।

এর পরে তাঁরা ওই পরিচর্যা কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চান। পোষ্যের কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, তা নজরে রাখতে ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকে। তাতে নজরদারিও করেন কয়েক জন। ঘটনার সময়েও তিন জন বসে ক্যামেরায় নজর রেখেছিলেন। অনুপমের প্রশ্ন, ‘‘তার পরেও এমনটা ঘটে কী করে? সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখি, পুটকি অত্যন্ত ভয় পাচ্ছে। তবু ওকে ছাড়া হচ্ছে না। বিকট শব্দে ব্লোয়ার চালিয়ে ওর গায়ে, মুখে হাওয়া দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে এমন চলার পরে আর সহ্য করতে না পেরে মরে গিয়েছে পুটকি।’’ এর পরে থানা থেকে পুলিশ এলেও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় বলে ওই যুগলের অভিযোগ।

‘পেট প্লাজ়া’ গ্রুমিং সেন্টারের মালিক অমিত প্রসাদ যদিও বলেন, ‘‘একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, সেটা নিয়ে বাড়িয়ে কোনও লাভ নেই। আমাদের অনেক সংস্থা, বহু নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ওই যুগলও আমাদের এখানে অনেক কিছু করেছেন। আমারও পাল্টা অনেক কিছু করতে পারতাম।’’

যদিও এই ঘটনায় পশুপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিড়ালটির মৃত্যুর ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। পশুপ্রেমী অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই ছেলেটিকে এখনই কাজ থেকে বরখাস্ত করা হোক। তিনি যেন কোথাও কোনও পশুর কাজ করতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা সিসি ক্যামেরায় নজর রেখেছিলেন, তাঁদেরও শাস্তি হওয়া উচিত। ব্যাঙের ছাতার মতো গ্রুমিং সেন্টার খোলা হলেও অধিকাংশেরই প্রশিক্ষণ নেই। কার লাইসেন্সআছে, কার নেই, সে দিকে প্রশাসনের নজর থাকে না।’’

পশু চিকিৎসক গোপাল সামন্ত বলছেন, ‘‘সমান মুখ এবং নাকের গড়ন ছোট হওয়ায় পার্সিয়ান বিড়ালদের এমনিই কিছু সমস্যা হয়। ফলে যাঁরা কাজটা করছেন, তাঁদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি।’’ পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এটা যে খেলনা নয়, জীবন্ত কিছু— এটা আগে বোঝা দরকার। এই বোধটাই অধিকাংশের নেই। জীবন্ত কিছুকে সামলাতে যে মানবিক দিকের প্রয়োজন, সেটা আছে কিনা এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ আছে কিনা, তা দেখে নিয়ে তবেই গ্রুমারের কাছে পোষ্যকে দিন। এ ক্ষেত্রেও এটা দেখে নিলে হয়তো বিড়ালটির মৃত্যু হত না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pet police investigation Jodhpur Park

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy