Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Webinar

ওয়েবিনার নিয়ে নয়া নির্দেশেও বহাল বিধিনিষেধ

সপ্তাহখানেক আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার প্রসঙ্গে গত জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার আরোপিত বিধিনিষেধগুলি কার্যকর করা হচ্ছে না।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২১ ০৬:৩৮
Share: Save:

সপ্তাহখানেক আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার প্রসঙ্গে গত জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার আরোপিত বিধিনিষেধগুলি কার্যকর করা হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সেই নির্দেশিকায় উল্লেখিত সব ক’টি বিধিনিষেধ এখনও বলবৎ থাকছে। সম্প্রতি দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন’ (এআইসিটিই) এ বিষয়ে যে নির্দেশ পাঠিয়েছে, তাতে আগের বারের নির্দেশের সব ক’টি কথাই বলা রয়েছে।

বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করে গত ১৫ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রক যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল তাতে বলা হয়েছিল, দেশের যে কোনও মন্ত্রক, সরকারি দফতর, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, কেন্দ্রীয় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি এবং সরকার-নিয়ন্ত্রিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তরফে অনলাইনে কোনও আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রের আয়োজন করতে হলে আলোচ্যসূচি এবং আলোচকদের নাম আগাম জানিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদন নিতে হবে। দেশের নিরাপত্তা, সীমান্ত, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ বা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি ওই ওয়েবিনারের আলোচ্য বিষয় কি না, তা অনুমোদন দেওয়ার সময়ে খতিয়ে দেখবে মন্ত্রক। ভারতের একান্ত অভ্যন্তরীণ কোনও বিষয় যেন আলোচনাচক্রের বিষয়বস্তু না হয়, সে দিকেই নজর রাখবে কেন্দ্রীয় সরকার। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও কী ধরনের তথ্য, পরিসংখ্যান বা সারণি আদানপ্রদান হতে চলেছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। ভারতের মানচিত্র, পতাকা, জাতীয় অভিজ্ঞান যেন নির্ভুল ভাবে তুলে ধরা হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ওয়েবিনার করার জন্য যে অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার সার্ভার যেন কোনও মতেই ভারতবিরোধী দেশ বা সংস্থার মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণাধীন না-হয়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে। সার্বিক ভাবে ওই আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র যেন ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন, তথ্য-নিরাপত্তা, সংবেদনশীল তথ্য এবং ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার মাপকাঠি মেনে হয়— তা নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগে বিদেশি আর্থিক সাহায্যে কোনও সভা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে তা-ও আগাম জানাতে হত। সেই ব্যবস্থা এখনও বজায় থাকবে। এই সব আলোচনায় কেন্দ্র এবং রাজ্যের মন্ত্রী, সাংবিধানিক পদাধিকারী, সরকারি আধিকারিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক— এঁদের যোগদানের ক্ষেত্রে আগের মতোই বিদেশ মন্ত্রকের অনুমতি নিতে হবে। অনুমোদিত অনলাইন আলোচনা, প্রশিক্ষণ সভার অনলাইন লিঙ্ক বিদেশ মন্ত্রকে জমা দিতে হবে।

জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এই নির্দেশ দেওয়ার পরেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরে এই ধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আর্জিও জানিয়েছিলেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক এবং প্রাক্তন সাংসদ সুগত বসু এ প্রসঙ্গে আগেই বলেছিলেন, ‘‘এই নির্দেশ শিক্ষার স্বাধীনতায় আঘাত। এ কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়।’’ এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন আবুটা কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের কাছে এই নির্দেশ বাতিলের দাবি তোলে। তার পরেই মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সপ্তাহখানেক আগে আবুটা সচিব গৌতম মাইতিকে জানানো হয়, জানুয়ারি মাসের নির্দেশ আর কার্যকরী নয়। অথচ তার পরেও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ওই একই নির্দেশ পাঠিয়েছেন এআইসিটিই সদস্য সচিব রাজীব কুমার।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এ দিন বলেন, ‘‘জানুয়ারির ওই নির্দেশ বাতিলের দাবি আমরা জানিয়েছিলাম। এআইসিটিই-র পাঠানো সেই এক নির্দেশ বাতিলের দাবিও জানাচ্ছি। মাঝখানে শিক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল জানুয়ারির নির্দেশ বাতিল হয়েছে। এ থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিচারিতা স্পষ্ট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education AICTE Webinar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE