Advertisement
E-Paper

সেল বাজারে নোট বাতিলের ছায়া

ক্যালেন্ডারের হিসেবে এখনও ফুরোয়নি বসন্ত। কিন্তু উষ্ণতার পারদ চড়তে শুরু করেছে। গরমের আঁচে অবশ্য ফাঁক পড়েনি আমজনতার চৈত্র সেলের চিরন্তন হুজুগে। হাতিবাগান থেকে গড়িয়াহাট, যাদবপুর থেকে নিউমার্কেট— খামতি নেই বিকিকিনিতে।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০১:২৭
সওদা: হাতিবাগানে কেনাকাটার ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সওদা: হাতিবাগানে কেনাকাটার ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ক্যালেন্ডারের হিসেবে এখনও ফুরোয়নি বসন্ত। কিন্তু উষ্ণতার পারদ চড়তে শুরু করেছে। গরমের আঁচে অবশ্য ফাঁক পড়েনি আমজনতার চৈত্র সেলের চিরন্তন হুজুগে। হাতিবাগান থেকে গড়িয়াহাট, যাদবপুর থেকে নিউমার্কেট— খামতি নেই বিকিকিনিতে। ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষই ঘামতে ঘামতে, হাঁসফাঁস করতে করতে কেনাবেচা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিকোচ্ছে দেড়শো টাকার কুর্তি থেকে দু’শো টাকার বারো হাত শাড়ি, বিছানার চাদর, বালিশের ঢাকা, গেরস্থালির হরেক জিনিস।

দিনভর রঙিন বিকিকিনিতে অবশ্য এখনও ছাপ রয়ে গিয়েছে মাস পাঁচেক আগের নোটবন্দি দশার। বিক্রেতারা অনেকেই বলছেন, দু’হাজারি নোট নিয়ে বিড়ম্বনা রয়েই গিয়েছে। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, পর্যাপ্ত পাঁচশোর নোট তো এখনও মিলছে না। তবে সমস্যায় সমাধান খুঁজে নিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা নিজেই। পেটিএম। ন্যূনতম বিনিয়োগে এবং সহজে দাম মেটানো যাচ্ছে ফুটপাথের বিকিকিনির।

হাতিবাগান ফুটপাথ দাপাতে এসেছিলেন একদল কলেজপড়ুয়া তরুণী। খলবল করে জাঙ্ক জুয়েলারি ঘাঁটতে ঘাঁটতেই দোকানদারকে প্রশ্ন ছুড়লেন এক কন্যা, ‘‘পেটিএম আছে তো? ক্যাশ নেই হাতে।’’ সেই বিক্রেতার ফোনে ছিল না পেটিএম। তাঁকে পেটিএম ইনস্টল করার মতামত দিয়ে পাশের দোকানে ঝুঁকলেন তরুণীর দল। সে দোকানের যুবক বিক্রেতা অবশ্য আগেই পেটিএম আছে সে কথা ঘোষণা করার জন্য গলা তুলে ডাক ছাড়লেন, ‘‘আসুন দিদি, নিয়ে যান। টাকা ছাড়াই দাম মেটান।’’

গড়িয়াহাটের বাজার অবশ্য একটু ঝিমিয়ে রয়েছে এই মাঝ চৈত্রেও। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, অন্য বছর এই সময় বাজার যতটা চাঙ্গা থাকে, তা এ বছর নেই। বিক্রির কমতি ভাল রকমই চোখে পড়ছে। আর তার বড় কারণ যে এখনও মানুষের হাতে পর্যাপ্ত খুচরো টাকা না-থাকা, মানছেন সকলেই। বেহালা থেকে আসা গৃহবধূ স্বপ্না মুখোপাধ্যায় জানালেন, ফুটপাথের তিনটে দোকানে জিনিস পছন্দ করেও ফিরেছেন দু’হাজারি নোট ভাঙাতে না-পেরে। উল্টো দিকে বিছানার চাদরের ব্যবসায়ী প্রৌঢ় জ্যোতির্ময় গুইন বললেন, ‘‘সকালে একটা দু’হাজারি নোট ভাঙিয়ে দিয়েছিলাম বউনি করার জন্য। তার পর হাত গুটিয়ে বসে রয়েছি।’’

গড়িয়াহাটের বাজার ততটা চাঙ্গা না হলেও, জমে গিয়েছে যাদবপুর। সোমবারের বিকেলে মানুষের ঢল নেমেছে । গায়ে গা ঠেকে যাওয়া ভিড়ে চিৎকার করে বিক্রেতা ডাকছে কিশোর ছেলেটি। ‘‘এ বছরের বিক্রি কেমন?’’ ঝটিতি উত্তর, ‘‘ভালই। তবে গরমটা আর একটু কম হলে ভাল হতো। জীবন বেরিয়ে যায় সারা দিন ফুটপাথে।’’

নিউ মার্কেট চত্বরের ফুটপাথের চেহারা চিরন্তন। পসরা-মানুষ-গাড়ি সেখানে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে দিব্যি জায়গা করে নেয়। পা ফেলার জায়গা মেলা দায় দিনভর। কাঠফাটা রোদে স্তূপ হয়ে পড়ে থাকে ব্যাগ, ওড়না, টেডিবিয়ার, জুতো, জামা, খেলনা। ছোট্ট রাবেয়াকে মা বোঝান, ‘‘এ মাসে এখনও মাইনে হয়নি বাবার।’’ আবার খান চারেক বিশাল টেডি নিয়ে বাবার হাত ধরে গাড়িতে ওঠে রাবেয়ারই বয়সি আর এক বালিকা।

শেষ বিকেলের নরম রোদ্দুরে ঝিকমিকিয়ে ওঠে চৈত্র-সেলের হাট।

Demonetisation Chaitra sale
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy