Advertisement
E-Paper

রোগীর মৃত্যুতে ধুন্ধুমার এনআরএসে

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জুনিয়র ডাক্তারদের মারধর করার অভিযোগ উঠল রোগীর পরিজনেদের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৮
ভোগান্তি: গোলমালের পরে হাসপাতাল চত্বরে ভিড়। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ভোগান্তি: গোলমালের পরে হাসপাতাল চত্বরে ভিড়। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ছুটির দিনে সরকারি হাসপাতালের পুরো পরিষেবাই সাধারণ ভাবে নির্ভর করে জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে। তাঁরা সেই পরিষেবা দিতে রাজি না হলে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের কী অবস্থা হয়, রবিবার দুপুর থেকে রাত তা দেখল এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জুনিয়র ডাক্তারদের মারধর করার অভিযোগ উঠল রোগীর পরিজনেদের বিরুদ্ধে। যার জেরে দুপুর থেকে কার্যত চিকিৎসাই বন্ধ হয়ে গেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। একাধিক রোগীর পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পরিষেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়েছেন। এমনকি, গোলমালের মধ্যে পড়ে চিকিৎসক না পাওয়ার অভিযোগে মারাও যান বছর বত্রিশের এক যুবক। আরও অভিযোগ, জুনিয়র ডাক্তারেরা ‘অন ডিউটি’তে থাকলেও রোগী দেখেননি।

যদিও জুনিয়র ডাক্তারদের পাল্টা বক্তব্য, তাঁরা কর্মবিরতি ঘোষণা করেননি। তাঁদের দাবি তাঁরা অধ্যক্ষকে জানিয়েছেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের কথায়, ‘‘আমরা সরকারি কর্মী। আমাদের চড় মারা মানে সরকারকে চড় মারা। এ বার সরকারই ঠিক করুক, তারা কী করবে।’’ দুপুরের পরে হাসপাতালের সুপার, অধ্যক্ষ এবং অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তাঁরা। ছিলেন এন্টালি থানার আধিকারিকেরাও। যদিও রাত পর্যন্ত কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, জুনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা রুজু হয়েছে।

কী হয়েছিল এ দিন?

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুরে ব্রেন স্ট্রোক এবং সুগারের সমস্যা নিয়ে তপসিয়া রোডের বাসিন্দা, বছর সাঁইত্রিশের পারভেজ হামিদকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তাঁর পরিবারের লোকজন। পারভেজের স্থূলতার সমস্যাও ছিল। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা প্রথমে তাঁকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে সিটি স্ক্যান করিয়ে আনতে বলেন। কিন্তু সিটি স্ক্যান চলাকালীনই মারা যান পারভেজ। তাঁর মামাতো ভাই আব্দুল রশিদের অভিযোগ, ‘‘দাদা খুব ঘামছিলেন। সিটি স্ক্যান করাতে গেলে আমাদের বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে স্ক্যান সম্ভব নয়। তখন ওয়ার্ডে ফেরত আনা হলে চিকিৎসকেরা একটি ইঞ্জেকশন দেন। তার ১০ মিনিটের মধ্যেই মারা যান দাদা।’’

এর পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ওয়ার্ডের জুনিয়র ডাক্তার এবং হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে গোলমালে জড়ান পারভেজের পরিবারের লোকজন। জুনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ, তাঁদের সহকর্মী এক মহিলা ডাক্তারকেও মারধর করা হয়। মুহূর্তে ওই খবর ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডে। ছুটে আসেন সকলে। তাঁদের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ এনে রোগী দেখতে অস্বীকার করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বন্ধ হয়ে যায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসা। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, আতঙ্কের জেরে তাঁদের এক সহকর্মীকে আইসিইউ-তে ভর্তি করতে হয়। খবর পেয়ে ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এন্টালি থানা থেকে পৌঁছয় বিশাল বাহিনী। রোগীর পরিবারের লোকজনকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে পুলিশ।

এরই মাঝে যাদবপুর থেকে এক যুবককে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চিকিৎসা না মেলায় পরিবারের লোকজন যুবককে নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়। বিকেল ৩টে নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে নড়েননি। ফলে বিপাকে পড়ে বহু রোগীর পরিবার। বহু ক্ষণ অপেক্ষা করেও চিকিৎসা না পেয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়। রক্তে শর্করার সমস্যা নিয়ে গড়িয়াহাটের বাসিন্দা, বছর বত্রিশের সেবক মল্লিককে এ দিন সকালে এন আর এসে ভর্তি করা হয়েছিল। সেবকের ভাই রবি জানিয়েছেন, বেলায় গোলমাল শুরু হওয়ায় সকলকে ওয়ার্ড থেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময়েই তাঁর দাদার কিছু সমস্যা হলে বৌদি ফোন করে ডেকে পাঠান। কিন্তু রবির অভিযোগ, গোলমাল চলাকালীন তিনি কোনও চিকিৎসককে পাননি। পরে ওয়ার্ডের সিস্টারেরা তাঁকে অন্য ইউনিট থেকে ডাক্তার ডেকে আনতে বললে রবি সেখানে দৌড়ন। ওই চিকিৎসক এসে জানান, সেবকের মৃত্যু হয়েছে। রবির কথায়, ‘‘গোলমালের মাঝে পড়ে বুঝতেই পারিনি কোথায় চিকিৎসককে পাব।’’

রোগী-ভোগান্তির ছবিটা বদলায়নি বিকেলের পরেও। নদিয়ার সইদুল শেখকে নিয়ে জরুরি বিভাগের সামনে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন আত্মীয়েরা। আবার রোগীর মৃত্যু হলেও ডেথ সার্টিফিকেট না পাওয়ায় বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন ইসলামপুরের ওয়াজেদ আলির (৬০) পরিবারের লোকজন। পরিবার সূত্রের খবর, ব্রেন স্ট্রোকের সমস্যা নিয়ে ওয়াজেদকে কলকাতায় আনা হয়েছিল। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মারা যান তিনি। কিন্তু বিকেল সাড়ে চারটে বেজে গেলেও পরিবারের লোকজন ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পাননি বলে অভিযোগ।

গোটা বিষয়টি নিয়ে এন আর এসের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়কে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন কেটে দিয়েছেন।

Death Chaos Hospita NRS
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy