Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চারুচন্দ্রের অধ্যক্ষ চান সরে যেতে

বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের দাবি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য চার লক্ষ টাকা দেওয়ার আবদারকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সঙ্গে বারবার গোলমাল বেধেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের।

কলেজে অধ্যক্ষ সত্রাজিৎ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

কলেজে অধ্যক্ষ সত্রাজিৎ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫১
Share: Save:

চারুচন্দ্র কলেজে শিক্ষক নিগ্রহের জেরে এ বার পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন অধ্যক্ষ সত্রাজিৎ ঘোষ।

বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে আমি কোনও দ্বিধা না করেই সরে যাব। আমার কোনও সহকর্মীকে বিপর্যস্ত করা হলে সেটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’’ শিক্ষক নিগ্রহ-সহ নানা গোলমালে জড়িয়ে পড়া কলেজের অধ্যক্ষের এই ‘অসহায়তা’ প্রশ্ন তুলে দিল, আদৌ সেই কলেজে পঠনপাঠনের কোনও পরিবেশ আছে কি? এ দিন ওই কলেজে পড়ুয়াদের উপস্থিতি যেমন কম ছিল, তেমনই আতঙ্কে ছিলেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কড়া হাতে লাগাম ধরে কলেজ পরিচালনার জন্য সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর।

বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের দাবি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য চার লক্ষ টাকা দেওয়ার আবদারকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সঙ্গে বারবার গোলমাল বেধেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের। এ বার গণ্ডগোল হয় কলেজে নিযুক্ত বেসরকারি সংস্থার এক নিরাপত্তারক্ষীকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয় নিয়ে।

কলেজ সূত্রের খবর, দীর্ঘ ছ’বছর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক রক্ষীকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ওই সংস্থার কাছে সুপারিশ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারই বিরোধিতা করে ছাত্র সংসদ। সংসদের সাধারণ সম্পাদক অর্ণব বিশ্বাস জানান, ওই নিরাপত্তারক্ষী তাঁদের কাছে বিষয়টি জানানোর পরে তাঁরা মঙ্গলবার অধ্যক্ষের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কথায় কান দেওয়া হয়নি। এর পরেই শিক্ষকদের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। পরে যা ঘেরাও পর্যন্ত গড়ায়।

প্রশ্ন উঠেছে, কোন নিরাপত্তারক্ষীকে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাখবেন, তা তো তাঁরাই ঠিক করবেন। সে বিষয়ে ছাত্রেরা নাক গলাবেন কেন? অর্ণবের যুক্তি, তাঁদের কাছে ওই নিরাপত্তারক্ষী বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেছিলেন। সে কারণে তাঁকে লিখিত ভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিনের পরিচিত হওয়ায় আমরা শুধু তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ কোনও কথা শোনেননি। তখন আমরা কলেজের নানা অব্যবস্থার কথা তুলে ধরি।’’ অধ্যক্ষ জানান, কোন নিরাপত্তারক্ষীকে রাখা হবে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে কথা বলা উচিত। সেটাই করা হয়েছে। এর মধ্যে পড়ুয়াদের হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয়।

এর সঙ্গেই উঠে এসেছে শিক্ষক নিগ্রহের বিষয়টি। অর্ণবের অভিযোগ, শিক্ষকেরা ঠিক সময়ে কলেজে আসেন না। উপরন্তু, ওই দিন নানা বিষয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে কয়েক জন শিক্ষক নাকি ছাত্রীদের কটূক্তিও করেন। তাঁর সাফাই, ‘‘যেটুকু হয়েছে, তা রাগের বহিঃপ্রকাশ।’’ শিক্ষক মহলের অবশ্য বক্তব্য, যে অভিযোগই থাক, কোনও সভ্য সমাজে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয় না।

এ দিন সত্রাজিৎবাবু দাবি করেন, নির্ধারিত সময়ের থেকে অনেক বেশি সময় ধরে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা কলেজে কাজ করেন। কোনও অভিযোগ না থাকায় ভিত্তিহীন বিষয় নিয়ে যে ভাবে গোলমাল পাকানো হচ্ছে, তা অনভিপ্রেত। ভর্তি এবং আর্থিক সংক্রান্ত অনিয়ম কর্তৃপক্ষ বন্ধের চেষ্টা করার পরেই এই ধরনের ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটছে বলে দাবি তাঁর। তাই পদ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। সত্রাজিৎবাবুর আক্ষেপ, ‘‘হয়তো আমরা পড়ুয়াদের ঠিক ভাবে শেখাতে পারিনি।’’

উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে শক্ত হাতে লাগাম ধরার নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর। তবে অভিযোগ, গোলমালে যাঁরা জড়িত বলে অভিযোগ, তাঁরা বহু বছর ধরে একই ক্লাসে রয়ে গিয়েছেন। কলেজে মূলত কর্তৃত্ব কায়েমের জন্যই তাঁরা আছেন বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Charuchandra College Principal Resignation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE