রোহন আলি মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।
মা খেতে ডাকলেও বাড়ির বাইরে খেলছিল বালকটি। অদূরেই কাটা হচ্ছিল নারকেল গাছ। গাছ কাটা দেখতে দড়ি ধরে থাকা শ্রমিকদের কাছেই দাঁড়িয়েছিল সেই বালক। আচমকাই গাছ উপড়ে পড়তে শুরু করে। শ্রমিকদের হাত থেকে ফসকে যায় দড়ি। কোনও ভাবে সেই দড়ির সঙ্গে জড়িয়ে যায় বালকটিও। তার পরে গুলতি থেকে ছিটকে বেরোনো পাথরের মতো প্রায় তিরিশ ফুট দূরে উড়ে গিয়ে পড়ে ওই বালক!
শনিবার সকালে নিউ টাউন এলাকার হাতিয়াড়ার মাঝেরপাড়ায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। রবিবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় রোহন আলি মণ্ডল (১০) নামে ওই বালকের। ঘটনার পরেই এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। স্থানীয় ইকো পার্ক থানার পুলিশ জানায়, যাঁদের বাগানের গাছ কাটা হচ্ছিল এবং যে ঠিকাদার গাছ কাটাচ্ছিলেন, রবিবার সন্ধ্যায় তাঁদের বিরুদ্ধে বালকের পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলেও জানায় ইকো পার্ক থানা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই জমিতে প্রোমোটিং হবে, তাই সেখানের একটি পুকুরও ভরাট করা হচ্ছে।
মাঝেরপাড়া জায়গাটি বিধাননগর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর মহম্মদ মহসিন আহমেদ জানান, ওই গাছ কাটার জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। যাঁরা গাছ কাটছিলেন, তাঁদের সঙ্গে সোমবার কথা বলা হবে।
বালকের পরিবার জানাচ্ছে, শনিবার রোহনকে খেতে ডেকেছিলেন তার মা। তখন সে বাড়ির বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল। সেই সময়েই বাড়ির সামনের একটি জমিতে নারকেল গাছ কাটার কাজ চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উঁচু নারকেল গাছটির একটি দিক দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছিল এক বাতিস্তম্ভের সঙ্গে। অন্য দিকটি দড়ি বেঁধে ধরে রেখেছিলেন শ্রমিকেরা। মহম্মদ মনিরুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানাচ্ছেন, গাছটি পড়ার সময়ে সেটির সঙ্গের দড়িতে জড়িয়ে যায় রোহন। তার পরে প্রায় তিরিশ ফুট দূরে উড়ে গিয়ে পড়ে ওই বালক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা হয়েছিল।
বালকের মা নাসিমা বিবি এবং বাবা রহমান মণ্ডল একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পরে ভেঙে পড়েছেন। তাঁরা কোনও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বলেই জানিয়েছে পরিবার। তবে রোহনের কাকা মহম্মদ মইদুল মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘নারকেল গাছ উপর থেকে ধাপে ধাপে কাটার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিন করাতের ব্যবহারে গাছটি গোড়া থেকে কাটা হয়। তার জেরে দড়ির টান সামলাতে পারেননি শ্রমিকেরা। তাঁরা দড়ি ছেড়ে দিয়েছিলেন। দড়ির বাড়তি অংশের সঙ্গে কোনও ভাবে রোহন জড়িয়ে উড়ে গিয়েছিল।’’
স্থানীয়দের অভিযোগ, অদক্ষ শ্রমিকদের কাজে লাগানোর জেরেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা জানান, রোহনের পরিবার অত্যন্ত গরিব। তার বাবা রহমান মার্বেল কারখানার শ্রমিক। লকডাউনে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে বেকার ছিলেন। সবেমাত্র বারাসতে একটি জায়গায় নতুন কাজ পেয়েছেন রহমান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy