Advertisement
E-Paper

নথির গেরো, মা-ছাড়া তিন মাসের শিশু

মায়ের দাবি, ‘‘আমাকে বলা হয়েছে, হোম থেকে সন্তানকে নিয়ে আসতে হবে।’’ কিন্তু তা-ও যে কী ভাবে হবে, ভেবেই নাজেহাল তরুণী। 

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৭

লাল ফিতের ফাঁসে আটকে নবজাতকের ভাগ্য!

গত তিন মাস ধরে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সদের কাছেই বড় হচ্ছে এক শিশুপুত্র। অভিযোগ, দায়িত্ব নিতে চেয়েও তাকে কাছে পাচ্ছেন না মা। কাগজপত্রের কারণ দেখিয়ে তা আটকে দিয়েছে হাসপাতাল। মায়ের দাবি, ‘‘আমাকে বলা হয়েছে, হোম থেকে সন্তানকে নিয়ে আসতে হবে।’’ কিন্তু তা-ও যে কী ভাবে হবে, ভেবেই নাজেহাল তরুণী।

উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলার বাসিন্দা ওই তরুণীর পরিবার জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। সেই থেকে তিনি কখনও শ্বশুরবাড়ি, কখনও বাপের বাড়িতে থাকতেন। চলতি বছরের প্রথমে এক দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে তরুণী আর ফেরেননি। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের পরিচয়পত্রগুলি। পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজ করেও খবর পাননি। সেই ঘটনার প্রায় মাস খানেক পরে ঘোলা থানা থেকে জানানো হয়, তাঁদের মেয়ে শিলিগুড়ির একটি হাসপাতালে ভর্তি। এর পরে ঘোলা থানার পুলিশের সঙ্গে ওই তরুণীর মা শিলিগুড়ি গিয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন। তরুণীর মায়ের কথায়, ‘‘জামাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে আমার মেয়ে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই অবস্থাতেই ও বেরিয়ে গিয়েছিল। শিলিগুড়ি থেকে নিয়ে আসার সময়ে জানতে পারি মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা।’’

এর পরেই অন্তঃসত্ত্বা ও মানসিক ভাবে অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার জন্য ব্যারাকপুর আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা। সেই আদালতের নির্দেশেই ঘোলা থানার পুলিশের সাহায্য নিয়ে কলকাতার পাভলভ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তরুণীকে। এরই মধ্যে গত ১০ মে তরুণীর প্রসবের জন্য পাভলভ হাসপাতাল থেকে তাঁকে ভর্তি করা হয় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সে দিন সকালেই তাঁর একটি পুত্রসন্তান হয়। পরে ওই তরুণীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পাভলভে। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে ২৬ জুলাই তরুণী ফেরেন বাপের বাড়ি। কিন্তু তাঁর পুত্রসন্তান রয়ে গিয়েছে হাসপাতালেই।

গত তিন মাস ধরে শিশুটি সেখানে পড়ে আছে জানিয়ে বেনিয়াপুকুর ফাঁড়ির মাধ্যমে থানায় খবর পাঠায় হাসপাতাল। এর পরেই বেনিয়াপুকুর থানার মাধ্যমে সব তথ্য কলকাতা শিশুকল্যাণ সমিতির দায়িত্বে থাকা মুর্শিদাবাদের শিশুকল্যাণ সমিতির কাছে। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে সমিতি। তবেই সমিতি পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে। ফলে খালি হাতেই ফিরে যায় বেনিয়াপুকুরের পুলিশ। তবে এ বার কী পদক্ষেপ করা হবে? এ নিয়ে কথা বলতে রাজি নন হাসপাতালের সুপার সন্দীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে পারব না।’’

এ দিকে নিজের সন্তানকে কাছে পেতে আকুল মা। ওই তরুণী ফোনে জানান, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বার ওই হাসপাতাল থেকে ঘুরে এসেছেন। প্রতিবারই তাঁদের জানানো হয়েছে, তাঁর কাছে শিশুটিকে দেওয়া যাবে না। কারণ, তাঁর পরিচয়পত্র নেই।তরুণী মায়ের অভিযোগ, ‘‘আমার মেয়ে আদালতের নির্দেশে পাভলভে ভর্তি ছিল এবং সেখান থেকেই চিত্তরঞ্জনে ভর্তি করা হয়। সব তথ্য হাসপাতালের কাছে আছে। তবু শুধুমাত্র পরিচয়পত্রের দোহাই দিয়ে নাতিকে আটকে রেখেছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, তাঁদের বলা হয়েছে নাতিকে দেওয়া যাবে না। শিশুকল্যাণ সমিতিতে যেতে হবে। বারবার হাসপাতালে ঘুরেও শিশুপুত্রকে না পেয়ে ওই তরুণীর একটাই প্রশ্ন, ‘‘আমি তো এখন সুস্থ। কেন আমার সন্তানকে দেওয়া হচ্ছে না?’’

তবে শুধু ঘোলার ওই তরুণীই নন, আরও এক শিশুপুত্র লাল ফিতের ফাঁসে পড়ে আছে ওই হাসপাতালে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২৫ জুলা‌ই বাসে দু’মাসের অসুস্থ শিশুকে এক মহিলার কোলে দিয়ে নেমে যান এক দম্পতি। ওই মহিলা শিশুটিকে নিয়ে কী করবেন, তা বুঝতে না পেরে লেদার কমপ্লেক্স থানায় যান। সেখানেই জমা দেন শিশুটিকে। পরে থানা ওই শিশুপুত্রকে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেই থেকে সেখানেই আছে শিশুটি। সম্প্রতি এই দুই শিশুর তথ্য-সহ একটি চিঠি পুলিশের মাধ্যমে পাঠানো হয় শিশুকল্যাণ সমিতিতে। যদিও কলকাতা শিশুকল্যাণ সমিতির দায়িত্বে থাকা মুর্শিদাবাদের শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন শবনম রামস্বামীর দাবি, ‘‘চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোনও শিশু এ ভাবে আছে বলে আমাদের কাছে খবর নেই!’’

Child Mother Document Pavlov
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy