E-Paper

পরীক্ষা করবে কে, সবুজ বাজির আড়ালে তৈরি হচ্ছে চকলেট বোমাও

প্রতি বছর বেআইনি বাজির রমরমা আটকাতে কলকাতার টালা, বেহালা, কালিকাপুর এবং শহিদ মিনার চত্বরে পুলিশের উদ্যোগে বাজি বাজার বসে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:২০

—প্রতীকী চিত্র।

বিগত সমস্ত বছরের বাজির শব্দতাণ্ডব কি এ বার ছাপিয়ে যাবে? দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বাজির শব্দমাত্রার ঊর্ধ্বসীমা ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করে দেওয়ার পরে এ নিয়ে জোর চর্চা চলছে। এরই মধ্যে বাজি প্রস্তুতকারকদের দাবি আরও আতঙ্ক বাড়িয়েছে। তাঁরা কার্যত ধরেই নিয়েছেন, পর্ষদের এই সিদ্ধান্তে আদতে ঘুরপথে চকলেট বোমার মতো বাজিকেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। ১২৫ ডেসিবেলের মধ্যে রাখলেই হল, এই ভাবনা থেকে বাজি মহল্লাগুলিতে দেদার চকলেট বোমা তৈরি শুরু হয়ে গিয়েছে বলে খবর। তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে, কে, কী বাজি বানাচ্ছেন, তা দেখার কোনও প্রক্রিয়া না থাকা। চলতি বছরে পুলিশও বাজি পরীক্ষা না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে কালীপুজোর রাতে এবং ছটপুজোয় শিশু, প্রবীণ, অসুস্থ মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিদের ব্যাপক সমস্যা হতে পারে বলে পুরো মাত্রায় আশঙ্কা থাকছে।

গত কয়েক বছরে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর, মালদহের ইংরেজবাজার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ বা পাথরপ্রতিমার ঢোলারহাটের মতো বাজি তৈরির কারখানায় পর পর বিস্ফোরণে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি স্তর থেকে ক্লাস্টার তৈরির ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মহেশতলার এক বাজি প্রস্তুতকারী বললেন, ‘‘১২৫ ডেসিবেলের অর্থ, প্রচুর বাজি বানানো যাবে। চকলেট বোমাও বানানো বেআইনি নয়।’’ কিন্তু আদালত তো উৎসবের দিনগুলিতে শুধু কয়েক ঘণ্টা সবুজ বাজি ফাটানোর উপরে ছাড় দিয়েছে! নুঙ্গির এক বাজি ব্যবসায়ী রতন শিকদারের দাবি, ‘‘১২৫ ডেসিবেলের মধ্যে রেখে চকলেট বোমাও সবুজ বাজি হতে পারে। তা ছাড়া, কে কী বানাচ্ছে, দেখতে আসছে কে?’’

প্রতি বছর বেআইনি বাজির রমরমা আটকাতে কলকাতার টালা, বেহালা, কালিকাপুর এবং শহিদ মিনার চত্বরে পুলিশের উদ্যোগে বাজি বাজার বসে। তার আগে কোন কোন বাজি সেখানে বিক্রি করা যাবে, তা পরীক্ষা করে দেখে পুলিশ। সেখানে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পাশাপাশি উপস্থিত থাকেন ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-এর প্রতিনিধিরা। কিন্তু গত বছর নিরি-র প্রতিনিধিদের দেখা যায়নি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শব্দ মাপার যন্ত্র আনলেও দূষণ মাপার ব্যবস্থা তাদের সঙ্গে থাকে না বলে অভিযোগ।

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সবুজ বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ দেবে নিরি। প্রশিক্ষণের পরে পরীক্ষায় পাশ করলে এলাকায় ফিরে বাজি তৈরি করা যাবে। ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি, তুবড়ির মতো প্রতিটি বাজি আলাদা আলাদা করে পরীক্ষার জন্য নিরি-র দফতরে পাঠাতে হয় প্রতি বছর। এক-একটি বাজি পাশ করলে সেটির জন্য শংসাপত্র দেয় নিরি। অর্থাৎ, প্রতিটি ধরনের বাজির শংসাপত্র আলাদা। সেই শংসাপত্রই এত দিন কিউআর কোড হিসাবে বাজির বাক্সের গায়ে ছাপা থাকত। তাতে থাকত সিএসআইআর এবং নিরি-র লোগো। নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে স্ক্যান করলে প্রস্তুতকারী সংস্থার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং কোন কোন উপাদান দিয়ে বাজিটি তৈরি, তা জানা যেত। কিন্তু বর্তমানে কিউআর কোড বানানো বন্ধ করে দিয়েছে নিরি। বদলে পরীক্ষার জন্য বাজির নমুনা পাঠাতে বলা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে নিরি-র নথিভুক্ত ৭৩টি সংস্থার সবুজ বাজি তৈরির অনুমতি আছে। প্রশ্ন উঠছে, একটি করে বাজি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও পরে যে নিয়ম মেনেই সব বাজি তৈরি করা হচ্ছে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? এ ব্যাপারে নজরদারি চালানোর প্রক্রিয়াই তো নেই! বাজি বাজারের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, এই ‘বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো’র ফাঁক গলে আদতে তৈরি হচ্ছে যেমন খুশি বাজি।

এ ব্যাপারে নিরি-র প্রধান বিজ্ঞানী আর জে ক্রুপাদাম বলেন, ‘‘নকল বাজি এবং বাজি প্রস্তুতকারক সংস্থার নকল নামের তালিকা নিয়ে আমরাই জেরবার। সংশ্লিষ্টরাজ্যের পুলিশকেই পদক্ষেপ করতে হবে।’’ কলকাতা পুলিশের বাজি বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিজ়ার্ভ ফোর্সের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘পুলিশের বাজি পরীক্ষা করার পরিকাঠামোই নেই। আমরাই তো নকল ধরতে হিমশিম খাচ্ছি। বাজি পরীক্ষা করতে হবে নিরি-কেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Firecrackers Crackers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy