Advertisement
E-Paper

বাইকের বিকট শব্দে ‘জব্দ’ শহরবাসী

বিকেল সাড়ে তিনটে। নিমতলা ঘাট স্ট্রিট ধরে গঙ্গার দিক থেকে একটি বিকট আওয়াজ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। মিনার্ভা থিয়েটারের সামনের রাস্তায় সেই প্রবল আওয়াজ যখন পৌঁছল, তখন কানে তালা লেগে যাওয়ার অবস্থা!

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৭
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

বিকেল সাড়ে তিনটে। নিমতলা ঘাট স্ট্রিট ধরে গঙ্গার দিক থেকে একটি বিকট আওয়াজ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। মিনার্ভা থিয়েটারের সামনের রাস্তায় সেই প্রবল আওয়াজ যখন পৌঁছল, তখন কানে তালা লেগে যাওয়ার অবস্থা! দেখা গেল, পরপর চারটি মোটরবাইকে চেপে আসছে কয়েক জন যুবকের একটি দল। কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। ওই মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজের কারণ? প্রত্যেকটি মোটরবাইকেরই সাইলেন্সার খোলা!

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ওঠার মুখেই দাঁড়িয়ে কর্তব্যরত দুই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। ওই মোটরবাইকের চালকদের দেখেও আটকালেন না তাঁরা। উল্টে তাঁদের মধ্যেই এক জনকে বলতে শোনা গেল, ‘‘যেন পাহাড় যাচ্ছে! এত আওয়াজ আগে শুনিনি।’’ অন্য এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘চারটে বাইকেই এই অবস্থা! আরও চারটে যোগ হলে কী যে হত!’’ এত আওয়াজ যখন, আটকালেন না কেন? প্রশ্নকর্তার নাম-ধাম-পরিচয় জেনে নিয়ে এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘জোড়াবাগানের এই এলাকা চেনেন? সকলকে সব সময়ে ধরা যায় না! অনেক ব্যাপার থাকে।’’ কী ব্যাপার? উত্তর পাওয়া গেল না ওই আইন-রক্ষকদের কাছ থেকে।

অভিযোগ, এই অজানা ‘ব্যাপারের’ জন্যই শহরের পথে মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য কমে না। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে প্রচার এবং পথ নিরাপত্তা নিয়ে পরিবহণ দফতরের নিয়মের কড়াকড়ি সত্ত্বেও বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা। বেপরোয়া গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শব্দদূষণের মাত্রাও। পুলিশকর্মীরাই জানাচ্ছেন, নানা রঙের হেডলাইট, মিউজিক্যাল হর্নের ব্যবহার ছাড়াও এখন কেউ কেউ মোটরবাইক নিয়ে শব্দ-তাণ্ডব চালাতে খুলে ফেলছেন বাইকের সাইলেন্সারই!

মোটরবাইক চালকেরাই জানাচ্ছেন, রাস্তায় অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এমন বিকট আওয়াজ করে বাইক চালানো হয়। তার জন্য সাইলেন্সার খুলে ফেলা ছাড়াও অন্য পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, কেউ সাইলেন্সার পাইপের ভিতরে থাকা জালটি ফাটিয়ে দেন। কেউ আবার ২-৩ হাজার টাকা খরচ করে ‘ফ্রি ফ্লো’ সাইলেন্সার কিনে বাইকে লাগান। যদিও উত্তর কলকাতার ‘মোটর র‌্যালি ক্যাম্প’-এর সদস্যরা জানাচ্ছেন, ওই ধরনে সাইলেন্সার যুক্ত বাইক ব্যবহার করা হয় ট্র্যাক রেসিংয়ে। কারণ ওই ‘ফ্রি ফ্লো’ সাইলেন্সার লাগানো থাকলে মোটরবাইকের ওজন ৮-১০ কেজি কমে যায়। তাতে রেসিংয়ের সময়ে গতি তুলতে সুবিধা হয়।

কিন্তু মোটরবাইকের কান ফাটানো আওয়াজে তো সাধারণ মানুষের প্রাণান্তকর অবস্থা হচ্ছে। কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ? সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সব দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে পুলিশ। তবে অভিযোগ মানতে নারাজ লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তারা। এক ট্র্যাফিক কর্তার কথায়, ‘‘চোখ ধাঁধানো রঙিন আলো, বিকট আওয়াজ করা বাইক দেখলে আটকে কেস দেওয়া হয়। বেপরোয়া বাইক রুখতে সব সময়েই কড়া ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।’’

কিন্তু তার পরেও কি জব্দ হচ্ছে বিকট আওয়াজ করে ‘উড়ে’ চলা মোটরবাইক? শহরবাসীরা অবশ্য বলছেন, বাইক নয়, বাইকের শব্দে ‘জব্দ’ হচ্ছেন সাধারণ মানুষই।

Sound Pollution Modified Silencer Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy