Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Covid patients

আক্রান্তদের পাশে থাকার বার্তা ক্লাব সদস্যদের

গত কয়েক মাসে এ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কোভিড আক্রান্তদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের বিপদের দিনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় বহু ক্লাব বা সংগঠন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৪৮
Share: Save:

কোভিড আক্রান্তকে সমাজে ‘একঘরে’ করে রাখার মতো ঘটনা গত কয়েক মাসে বার বার ঘটেছে। কোনও সাহায্য না পেয়ে বাধ্য হয়ে প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে প্রতিবেশীদের গঞ্জনাও শুনতে হয়েছে বহু আক্রান্তের পরিবারকে। তবে করোনা-কালে ব্যতিক্রমও রয়েছে। গত কয়েক মাসে এ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কোভিড আক্রান্তদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের বিপদের দিনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় বহু ক্লাব বা সংগঠন।

যেমন, বিজয়গড়ের একটি ক্লাব এই দুঃসময়ে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের অধিকর্তা শেখর রায়ের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। শেখরবাবুর পরিবারের সাত জন সংক্রমিত হয়ে গৃহবন্দি। শেখরবাবুর কথায়, ‘‘দু’বেলা খাবার, ওষুধ পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে নানা আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ফোন করলেই দরজায় হাজির হয়ে যাচ্ছেন ওঁরা। এই সাহায্য কোনও দিন ভুলব না।’’ সেই লকডাউনের সময় থেকেই গরিবদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে এলাকার বয়স্কদের ওষুধ সরবরাহ— সবই করে এসেছে যাদবপুরের নারকেলবাগানের ওই ক্লাব। তার সভাপতি, পেশায় শিক্ষক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ‘‘বিপদের সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই তো কর্তব্য।’’

যাদবপুরের আনন্দপল্লি এলাকার রমেন ঘোষাল এবং তাঁর পুরো পরিবারও সংক্রমিত হয়েছিলেন। দিন কয়েক আগে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী রমেনবাবুর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও তাঁর পরিবারের বাকি আট সদস্য এখনও পজ়িটিভ রয়েছেন। আর তাঁদের গৃহবন্দি থাকার এই সময়ে তাঁদের বাড়ি প্রতিদিন ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে যাদবপুরের আনন্দপল্লি এলাকার একটি সংগঠন। রমেনবাবুর কথায়, ‘‘করোনা হলে কাউকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিত নয়। জীবনের এই কঠিন সময়ে ওই সংগঠন যে ভাবে সাহায্য করছে, তা ভুলব না।’’

উত্তর কলকাতার আনন্দমোহন কলেজের কর্মী সুজিত সিংহরায় ও তাঁর স্ত্রীর করোনা রিপোর্ট সম্প্রতি পজ়িটিভ আসে। যদিও তাঁদের মেয়ের রিপোর্ট নেগেটিভ। সল্টলেকের বাসিন্দা সুজিতবাবুর কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকায় কাজ করার সুবাদে সেখানকার একটি ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ ছিল। আমার পরিবারে দু’কুলে কেউ নেই। ফলে আমরা দু’জনেই আক্রান্ত হয়েছি এই খবর পেয়ে ওরাই আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে আলাদা একটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।’’

এলাকার বাড়ি বাড়ি জীবাণুমুক্ত করা থেকে শুরু করে কোনও পরিবার সংক্রমিত হলে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া— গত কয়েক মাস ধরে এ সবই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই ক্লাবের সম্পাদক প্রিয়ঙ্ক পাণ্ডে। মধ্য কলকাতার একটি ক্লাবের সভাপতি সজল ঘোষ আবার বলছেন, ‘‘করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন এলাকার ক্লাবকে একত্রিত করে সাহায্য করছি।’’

উল্টোডাঙার বস্তি থেকে আবাসন সর্বত্র নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করে চলেছে মুচিবাজারের একটি সংগঠন। লকডাউনের টানা তিন মাস প্রায় এক হাজার দুঃস্থ পরিবারের বাড়িতে রেশনসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া থেকে রান্না করা খাবার পাঠানোর সব কাজ করেছে তারা। ক্লাবঘরেই খোলা হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেয়েছেন পথচারী থেকে বস্তিবাসী সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Patients Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE