Advertisement
E-Paper

মুর্শিদাবাদের জমির সূত্রেই চলছে নিউটাউনের প্রোমোটার চঞ্চল খুনের কিনারার চেষ্টা

মুর্শিদাবাদ যোগ ধরেই নিউটাউনের প্রোমোটার চঞ্চল মণ্ডল খুনের কিনারা করতে চাইছেন গোয়েন্দারা। সেখানে কী সূত্র পেলেন

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৩২
নিজের বাড়িতেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন চঞ্চল মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজের বাড়িতেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন চঞ্চল মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

খুনের আগে দুষ্কৃতীরা একটি জমির সাইট প্ল্যান বানাতে দিয়েছিল। মুর্শিদাবাদের সেই জমির সূত্রেই এ বার নিউটাউনের প্রোমোটার চঞ্চল মণ্ডল খুনের কিনারা করতে চাইছেন গোয়েন্দারা। রবিবার রাতে যে ভাবে দুষ্কৃতীরা চঞ্চলের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে গুলি করে খুন করে, তাতে এই খুনের পেছনে পেশাদার অপরাধীরা রয়েছে বলেই ধারণা তদন্তকারীদের।

পাথরঘাটা মণ্ডলপাড়ায় বাড়ি চঞ্চলের। তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে মেয়ে এবং ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। ওঁরা প্রত্যেকেই খুনের প্রত্যক্ষদর্শী। চঞ্চলের মেয়ে পুলিশকে জানিয়েছে, শনিবার সকালে দু’জন অপরিচিত যুবক আসেন বাবার সঙ্গে দেখা করতে। তাঁরাই মুর্শিদাবাদের একটি জমির সাইট প্ল্যান বানাতে বলেন চঞ্চলকে। সেই সময় ৫০০ টাকা অগ্রিমও দিয়ে গিয়েছিলেন ওই দু’জন।

ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন

আরও পড়ুন: নিউটাউনে বাড়ি ঢুকে প্রোমোটারকে গুলি করে খুন

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চঞ্চলের মূল পেশা জমি জরিপ হলেও, ইদানীং তিনি জমির দালালিও করছিলেন। পাশাপাশি কয়েকটি স্থানীয় নির্মাণ প্রকল্পেও টাকা ঢেলেছিলেন। ক্যানোপি প্রোজেক্ট, গ্রিনফিল্ড, পিএস গ্রুপের মতো বড় ডেভেলপারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চঞ্চল। তিনি ওই প্রোজেক্টগুলিতে জমি মাপার কাজ করতেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সূত্রে জমির দালালিও করতেন চঞ্চল। সেই দালালি সংক্রান্ত বিষয়ে বাইরে থেকেও বহু লোক আসতেন তাঁর কাছে। যে ভাবে এসেছিল আততায়ীরাও।

পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার আততায়ীরা যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বর দিয়েছিল। বলে গিয়েছিল, সাইট প্ল্যান হয়ে গেলে যেন ওই নম্বরে ফোন করে খবর দেওয়া হয়। রবিবার ফের ওই যুবকেরা এসে দেখা করে। চঞ্চল তখন বাজারে চিলেন। সাইট প্ল্যান রেখেই গিয়েছিলেন। সেটা ওই যুবকদের হাতে তুলে দেওয়ার পর তারা চঞ্চলকে ডেকে পাঠাতে বলে। দাদার ফোন নম্বর তাদের ফের দেন চঞ্চলের ভাই দেবু। দুষ্কৃতীরা সেই নম্বরে ফোন করে দেবুর হাতে ধরিয়ে দেন। এর পর তিনি দাদাকে বাড়ি আসতে বলেন। পরে চঞ্চলের ফোন খতিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, দিয়ে যাওয়া নম্বর এবং যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, দুটোই এক। তবে, ঘটনার পর থেকে সেই নম্বরটি বন্ধই পেয়েছেন তদন্তকারীরা। রাজারহাট এলাকায় পাওয়া গিয়েছে শেষ টাওয়ার লোকেশন। পুলিশের সন্দেহ নম্বরটি ভুয়ো।

অন্য দিকে ভাই দেবুর বক্তব্যেও কিছু অসঙ্গতি পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। রবিবার তিনি বলেছিলেন আততায়ীদের মুখ খোলা ছিল। এ দিন তিনি দাবি করেন আততায়ীদের মুখ মাফলার দিয়ে আংশিক ভাবে ঢাকা ছিল। এ সমস্ত তথ্যই খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

চঞ্চলের পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, রবিবার রাতে ওই দুই যুবকই বাড়িতে আসেন। তাঁরা জমির সাইট প্ল্যান চান। চঞ্চলের মেয়ে সেই জমির নথি ওই দুই যুবককে দিলে তাঁরা কাজের জন্য আরও পাঁচশো টাকা দেন। আগের ওই দুই যুবকের সঙ্গে আরও এক জন ছিলেন। পুলিশকে চঞ্চলের ছোট ভাই বলেন, ‘‘টাকা মেটানোর পর ওই যুবকরা দাদার খোঁজ করেন।’’ দেবুর ফোন পেয়ে বাড়ি ফেরেন চঞ্চল। ওই যুবকদের সঙ্গে কথা বলেন। তখনই কোনও প্রসঙ্গে বচসা হয়। তার মধ্যেই এক যুবক পিস্তল বের করে পর পর গুলি চালায়। দেবুর দাবি, তিনি দাদাকে বাঁচাতে গেলে তাঁকে লক্ষ্য করেও গুলি চালায় আততায়ীরা। তবে তা কোনও ভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তদন্তকারীরা দেবুর বয়ানও খতিয়ে দেখছে।

আরও পড়ুন: ‘পাশে আছি, কিছুতেই মাকে সরাতে দেব না’

এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, গোটা অপারেশন যে ভাবে হয়েছে তাতে পরিষ্কার, এটা পেশাদার অপরাধীর কাজ। খুন করার পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল আততায়ীরা। পরিবারের এত লোকের উপস্থিতিতেও ঘাবড়ে যায়নি। সর্বোপরি, আততায়ীরা নিজেদের মুখ ঢাকেনি, একাধিক বার এসেছে বাড়িতে। অর্থাৎ আততায়ীরা নিশ্চিত ছিল যে তাঁদের পরিবারের কেউ চিনতে পারবে না। এর থেকে আঁচ পাওয়া যায় আততায়ীরা কেউ স্থানীয় নয়।

অন্য দিকে ওই আধিকারিক বলেন, “আততায়ীরা স্থানীয় না হলেও, তাঁদের কোনও স্থানীয় যোগ আছে। না হলে পাড়ার মধ্যে বাইক নিয়ে ঢুকে খুনের সাহস দেখাত না।” সব মিলিয়ে একটি বিষযে তদন্তকারীরা নিশ্চিত যে এই খুনের পিছনে রয়েছে ব্যবসায়িক শত্রুতা। তাই বেলডাঙার সূত্র হাতিয়ার করেই আপাতত এগোচ্ছেন তদন্তকারীরা।

(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনা, কলকাতার আবহাওয়া, কলকাতার হালচাল জানতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)

Crime Murder New Town
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy