কলকাতা পুরসভার কর্মসূচি হাতে পেয়ে জানুয়ারি থেকেই মশা বাহিত রোগ দমনে পথে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভা। কিন্তু যারা ওই কর্মসূচি তৈরি করেছে, সেই কলকাতা পুরসভাই ফেব্রুয়ারি মাসের আগে নির্ঘণ্ট মেনে ওই কর্মসূচি পালন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ, শীতের নানা উৎসব নিয়ে যে খুবই ব্যস্ত কাউন্সিলরেরা!
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর আগামী বছরে মশাবাহী রোগ দমনের কর্মসূচি তৈরি করে ফেলেছে। তা যে জানুয়ারি মাস থেকেই শুরু করতে হবে, নবান্ন থেকে তেমন নির্দেশও দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু যাঁরা এই কর্মসূচি রূপায়ণে অগ্রণী ভূমিকা নেবেন, সেই কাউন্সিলরদের বছরের প্রথম মাসেই পাওয়া যাবে না বলে পুরভবন সূত্রের খবর। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা প্রস্তুতি নিলে কী
হবে, কাউন্সিলরেরা এগিয়ে না এলে কিছুই করা যাবে না। জানুয়ারি মাস থেকে এলাকা পরিদর্শন, সচেতনতা শিবির, জঞ্জাল সাফাইয়ের মতো কাজগুলি শুরু না করলে বর্ষার পরে সমস্যা বাড়বে।’’
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, জঞ্জালের ভ্যাটে যে সব পরিত্যক্ত বোতল, ডাবের খোলা, ভাঙা কমোড, বেসিন পড়ে থাকে, সেখানেই বৃষ্টির জল জমা থাকে। ওই জমা জলেই ডিম পেড়ে যায় মশা। তাই কোথাও যেন জঞ্জাল পড়ে না থাকে, জানুয়ারি মাস থেকেই তা নিয়ে অভিযানে নামার কথা পুরসভার। কোথায় কোথায় অভিযান হবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব কাউন্সিলরদেরই। তাঁদের না পেলে ওই কর্মসূচি কার্যকর করাই যাবে না। তাই বছরের শুরু থেকেই কাউন্সিলরদের সহায়তা পাওয়ার ভরসায় ছিলেন পুরকর্তারা। এখন বাদ সেধেছে উৎসব আর পার্বণ।
উৎসবের সেই পালা শুরু বছরের প্রথম দিন থেকেই। পয়লা জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস। যা চলে দু’চার দিন ধরে। তার পরেই পৌষ সংক্রান্তি। পিঠে-পুলি উৎসবে মেতে থাকেন বহু কাউন্সিলর। তা শেষ হতে না হতেই বিবেক উৎসব। ১৪ থেকে ২০ জানুয়ারি ছাত্র-যুব উৎসব। ২৩ জানুয়ারি সুভাষ উৎসব। এ সবই সরকারের ঘোষিত অনুষ্ঠান। গত কয়েক বছর ধরে কলকাতার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তা পালন করছেন কাউন্সিলরেরা। এর পরে রয়েছে সরস্বতী পুজো এবং পৌষ মাস বলে বাড়তি উৎসব পৌষালি।
এখানেই শেষ নয়, পুরভবনের এক আধিকারিক জানান, জনসংযোগ রক্ষার জন্য কাউন্সিলরেরা পাড়ার কর্মীদের নিয়ে বনভোজনে যান। সব মিলিয়ে গোটা জানুয়ারি জুড়ে নানা উৎসবে থাকেন কাউন্সলরেরা। ফলে তাঁদের দিয়ে কাজ করানো সম্ভব হবে না বলেই মত পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোলের টিমেরও। মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেই ফেলেন, ‘‘এমনিতেই পুজোর সময়ে মাসখানেক সকলে উৎসবে মেতে থাকেন। বছর শেষে এবং শুরুতেও আবার উৎসব। তাই কর্মসূচি রূপায়ণে একটা সমস্যা থেকে যায়।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানুয়ারি মাস থেকেই ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি অভিযানে পুরসভাগুলিকে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিকে, উৎসব পালনের নির্দেশও মুখ্যমন্ত্রীরই। যা দেখেশুনে এক কাউন্সিলরের মন্তব্য, ‘‘কোনটা যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে আমরাও দোটানায়। তবে উৎসব করলে জনসংযোগও হয়।’’ তা হলে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার থেকে উৎসবই কি মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে? এক কাউন্সিলরের মন্তব্য, ‘‘উৎসব তো মাত্র ক’দিনের। মশা দমনের জন্য তো বাকি মাসগুলি পড়েই আছে!’’ এক পুরকর্তার মন্তব্য, অধিকাংশ কাউন্সিলরই শাসক দলের। তাই বুঝি এ সংক্রান্ত সমস্যাটা আরও বেশি হচ্ছে।
আসলে ২০১২–’১৩ সালের পরে এ বার ফের ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় রাজ্য জুড়েই। বাদ যায়নি কলকাতাও। তাই ২০১৮ সালে মশাবাহী রোগ দমনের জন্য জানুয়ারি থেকে কাজে নেমে পড়তে চায় পুর প্রশাসন। তার জন্য নতুন কর্মসূচি তৈরি করেছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল টিম ঘুরে দেখবে শহরের কোথায় জল-জঞ্জাল জমে আছে। সেই অভিযানে সপ্তাহে দু’দিন করে থাকবেন এলাকার কাউন্সিলর। কারণ পুরকর্তাদের মত, কোনও বাড়িতে জল জমে আছে কি না দেখতে গেলে বহু ক্ষেত্রে পুরকর্মীদের বাধা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি অফিসের ক্ষেত্রেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। কাউন্সিলর স্বয়ং গেলে বাধা থাকে না। তাই কাউন্সিলরকে ওই অভিযানে যুক্ত করলে ভাল কাজ হবে ভেবেই এমন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিরক্ত এক পুর আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘উৎসব না মানুষের জীবন— কাউন্সিলরদের কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটাই বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy