কলকাতার রাজপথে সাধুরা। নেতৃত্বে ভারত সেবাশ্রমের কার্তিক মহারাজ। —নিজস্ব চিত্র।
গেরুয়া বসন গায়ে, খালি পায়ে কলকাতার রাজপথে নামলেন সাধু-সন্তেরা। নেতৃত্বে ভারত সেবাশ্রমের বেলডাঙা শাখার অধ্যক্ষ কার্তিক মহারাজ (স্বামী প্রদীপ্তানন্দ)। বাগবাজার থেকে হেঁটে সিমলায় স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে জড়ো হন সাধু-সন্তেরা। বিবেকানন্দ রোড এবং বিধান সরণির সংযোগস্থল এলাকায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের সমালোচনা করেন সাধুরা। তাঁদের দাবি, সাধুদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ জন্য অবিলম্বে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী যাঁর নাম নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, সেই কার্তিক মহারাজ একই সঙ্গে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নিশানা করেন।
কার্তিক মহারাজ মমতাকে নিশানা করে বলেন, ‘‘আপনি মুখ্যমন্ত্রী। আপনি পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট নিন। কোনও বুথে গিয়ে আমাদের কেউ কাউকে বলেছেন যে, আপনি তৃণমূলের, বেরিয়ে যান, এমন একটি প্রমাণ দিন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ভারত সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ইস্কন সম্পর্কে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাই এই মিছিলে এসেছেন।’’
এর আগে বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের আশ্রমে হামলা হতে পারে— এই উদ্বেগ প্রকাশ করে কলকাতা হাই কোর্টে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করার কথা জানিয়েছিলেন কার্তিক মহারাজ। সে নিয়েও মুখ খোলেন তিনি । মহারাজ বলেন, ‘‘বাংলায় তৃণমূলের রাজ। বাংলারই এক তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর প্রকাশ্য জনসভায় বলছেন, ‘আমরা এখানে ৭০ শতাংশ। হিন্দুরা ৩০ শতাংশ। হিন্দুদের ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেব।’ আর মুখ্যমন্ত্রী আমায় নিয়ে যে মন্তব্য করছেন, তা সর্বৈব মিথ্যা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আজ ধর্ম সঙ্কটে। সাধু-সন্তেরা রাজপথে নেমে এসেছেন। হাজার হাজার মানুষ সাধু-সন্তদের যে ভাবে সম্মান দেখিয়েছেন তাতে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’’ মমতার সমালোচনার পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করেন কার্তিক মহারাজ। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বিজেপির নন। তিনি ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী। আমরা বহু সৌভাগ্যবলে এমন এক জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি। এই কথা বলব না? এ কথা দ্বিধাহীন ভাবে মুক্তকণ্ঠে বলব।’’
কার্তিক মহারাজ এবং ভারত সেবাশ্রম সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহের সূত্রপাত গত শনিবার। ওই দিন হুগলির গোঘাটে একটি নির্বাচনী জনসভায় কার্তিক মহারাজের নাম করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “সব সাধু সমান হয় না। সব স্বজন সমান হয় না। আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান? এই যে বহরমপুরের এক জন মহারাজ আছেন। আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমার শ্রদ্ধার্ঘ্যের তালিকায় তারা দীর্ঘ দিন ধরে আছে। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূলের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, সে ‘ডাইরেক্ট পলিটিক্স’ করে দেশটার সর্বনাশ করছে।’’ এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। তার পরেও তৃণমূলনেত্রী জানান, তিনি সব সাধুকে নিয়ে ওই মন্তব্য করেননি। কয়েক জনকে নিয়ে বলেছেন। যাঁদের নিয়ে বলেছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন কার্তিক মহারাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy