Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দমদমে দমকলের কেন্দ্রই আস্ত জতুগৃহ

দমদম, বাগুইআটি, বিরাটি, রাজারহাট, নিউ টাউন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ভার যে দমকল কেন্দ্রের উপরে, তার ফায়ার অডিট কবে হবে, গড়িয়াহাট-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিপজ্জনক: দমকলের কার্যালয়ে সিলিংয়ে ব্যবহৃত হয়েছে থার্মোকল। নীচেই রয়েছে গ্যাসে রান্নার ব্যবস্থা (চিহ্নিত)। মঙ্গলবার, দমদমে। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: দমকলের কার্যালয়ে সিলিংয়ে ব্যবহৃত হয়েছে থার্মোকল। নীচেই রয়েছে গ্যাসে রান্নার ব্যবস্থা (চিহ্নিত)। মঙ্গলবার, দমদমে। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৫
Share: Save:

অগ্নিসুরক্ষা-বিধি মানা হচ্ছে কি না যাঁরা দেখবেন, তাঁদের কার্যালয়ই কার্যত জতুগৃহ! তাই দমদমের দমকল কেন্দ্রের ফায়ার অডিট হলে আদৌ পাশ নম্বর জুটবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।

গড়িয়াহাটের বহুতলে অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সোমবার সল্টলেকের বিকাশ ভবনের দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানিয়েছেন, কলকাতা ও বৃহত্তর কলকাতার বাজার, শপিং কমপ্লেক্স-সহ যে সব জায়গায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়, আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে সেগুলির ফায়ার অডিট করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে এই অডিট হবে, সেখানকার দমকল

কার্যালয়ের অফিসার ইন-চার্জের নেতৃত্বে কমিটিতে থাকবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার পুরসভা, পুলিশ ও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার প্রতিনিধিরা। এই ঘোষণার প্রেক্ষিতেই দমদমের দমকল কার্যালয়ের বেহাল অবস্থার বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

কেমন হাল সেই দমকল কেন্দ্রের? বছর পনেরো আগে জমি-বিতর্কের জেরে নাগেরবাজার থেকে দমদমে কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত হয়। সেই থেকে দমদম পুরসভার উল্টো দিকে একটি সিনেমা হলের সাইকেল স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত অ্যাসবেস্টস দিয়ে ঘেরা ছাউনিই হল অতি গুরুত্বপূর্ণ সেই দমকল কেন্দ্রের অস্থায়ী ঠিকানা। কার্যালয়ের বাইরে বাতিল ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ, গার্ডরেল, পিচ গলানোর যন্ত্র, টিন ডাঁই করে রাখা আছে। দমকলের ইঞ্জিন রাখার জন্য একটি টিনের শেড ছিল। দমকল সূত্রের খবর, গাড়ির সংখ্যা বাড়ায় দমকলের ইঞ্জিন এখন খোলা আকাশের নীচেই দাঁড়িয়ে থাকে। ভিতরের অবস্থা আরও করুণ। ছাউনি ও দেওয়ালের মাঝের ফাঁকা অংশ দিয়ে উত্তুরে হাওয়া আটকাতে প্লাস্টিক টাঙানো হয়েছে। সিলিংয়ের নামে বাঁশের খাঁচার মধ্যে থার্মোকল গোঁজা রয়েছে।

তারই গা দিয়ে বিদ্যুৎবাহী তার এঁকেবেঁকে বিভিন্ন সুইচ বোর্ডে গিয়ে মিশেছে। বেশ কিছু জায়গায় সেলোটেপ দিয়ে জোড়া হয়েছে বিদ্যুৎবাহী তার।

দমকল সূত্রের খবর, বৃষ্টি হলে সিলিং বেয়ে জল চুঁইয়ে পড়ে। দমকল কেন্দ্রের বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক নয় বলে মত আধিকারিকদের একাংশের। দমকল সূত্রের খবর, ভিতরের বৈদ্যুতিক সংযোগের অবস্থা এমনই যে, সেখানে ল্যাপটপ ব্যবহার করারও ঝুঁকি নেন না কর্মীরা। সেখানেই শেষ নয়। কার্যালয়ের ঢোকা-বেরোনোর পথ বলতে একটি সঙ্কীর্ণ দরজা। তারই মধ্যে বাধ্য হয়ে আগুন জ্বেলে রান্না করেন কর্মীরা। দমকল সূত্রের খবর, পরিকাঠামোর এতই অভাব যে, কর্মীদের জন্য কোনও শৌচাগার পর্যন্ত নেই।

দমদম, বাগুইআটি, বিরাটি, রাজারহাট, নিউ টাউন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ভার যে দমকল কেন্দ্রের উপরে, তার ফায়ার অডিট কবে হবে, গড়িয়াহাট-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে সেই প্রশ্ন উঠেছে। দমকল সূত্রের খবর, দমদমের কার্যালয়ের বেহাল পরিকাঠামোর কথা দফতরের কর্তাদের অজানা নয়। এ নিয়ে দফতরের অন্দরে চিঠি চালাচালিও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু তার পরেও জমির অভাবে অবস্থা বদলায়নি দমদমের ওই দমকল কেন্দ্রের। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, দমদম বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে একের পর এক বহুতল নির্মাণের অন্ত নেই। সেখানে দমকলের মতো জরুরি পরিষেবার কার্যালয়ের জন্য এত দিনেও কেন জমি পাওয়া গেল না?

সদ্য দমকল দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তথা দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুজিত বসু বলেন, ‘‘দক্ষিণ দমদম এলাকায় নতুন দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য জমির খোঁজ চলছে। কেএমডিএ-র একটি জমি প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিতও করা হয়েছে। বিষয়টি দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Dum Dum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE