E-Paper

প্রতিমা-গয়নারও বিমা হয়, শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সচেতনতা আসবে কবে

কয়েক দিন আগেই এন্টালির কাছে একটি পুজো মণ্ডপ চত্বরে এক শ্রমিকের দেহ উদ্ধার হয়।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:২৪
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পুজোয় নিরাপত্তার বন্দোবস্ত কেমন, আলাদা করে সেই বিষয়টি দেখে নম্বর দেন পুজোর বিচারকেরা। ফলে মণ্ডপ থেকে গয়না, প্রতিমা থেকে দর্শনার্থীদের জন্য কে কত টাকার বিমা করিয়ে রেখেছেন, তা ফলাও করে বলেন পুজোর উদ্যোক্তারা। এই বিমার অঙ্ক নিয়েও প্রতিযোগিতা চলে তাঁদের মধ্যে। মনে করা হয়, যাঁদের বিমার জোর যত বেশি, তাঁদের পুরস্কার জেতার সুযোগও বেশি। কিন্তু এ সবের মধ্যে আড়ালেই থেকে যায় পুজোয় রাত-দিন কাজ করা শ্রমিকদের নিরাপত্তা। এর মধ্যেই উঁচু থেকে পড়ে কারও হাত-পা ভাঙে, কেউ কর্মক্ষমতা হারিয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে প্রচুর। তবু এ শহরে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরির কাজে যুক্ত শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় না। অভিযোগ, পুজোকর্তাদের একটি বড় অংশ এখনও শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য বিমা করানো নিয়ে মাথাই ঘামান না।

কয়েক দিন আগেই এন্টালির কাছে একটি পুজো মণ্ডপ চত্বরে এক শ্রমিকের দেহ উদ্ধার হয়। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়। তিনি কোনও ভাবে উপর থেকে পড়ে গিয়েছিলেন কিনা, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। কিন্তু খোঁজ করে জানা গেল, ওই শ্রমিকের পরিবার এই মুহূর্তে কোনও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার মতো জায়গায় নেই। পুজো কর্তৃপক্ষের সামান্য বিমাও করানো নেই। তবে, এ কোনও বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শহরের বেশির ভাগ নামী পুজো কমিটিই শ্রমিকদের বিমার ব্যাপারে উদাসীন। দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার পুজোয় বিমা করানো একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিমা সংক্রান্ত পরামর্শদাতা অশোককুমার দাস বললেন, ‘‘শহরের প্রায় সমস্ত বড় পুজোই মণ্ডপ, প্রতিমা, এমনকি দর্শনার্থীদের জন্য বিমা করালেও এখনও পর্যন্ত একটি পুজোও শ্রমিকদের জন্য বিমা করাতে চেয়ে আবেদন করেনি। বিজ্ঞাপনের অভাব বা আর যে কারণেই হোক, বিষয়টি চিন্তার।’’

তিনি আরও জানাচ্ছেন, মূলত মণ্ডপের বিমাই বেশি করানো হয়। আগুন লাগা, ধস নামা, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য মূল মণ্ডপের ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। তবে, সে ক্ষেত্রে মণ্ডপটি যে উপকরণ দিয়ে তৈরি, তার দাম মেলে। শ্রমিকের খরচ, শিল্পীর খরচ-সহ মণ্ডপ তৈরির বাকি আনুষঙ্গিক খরচের কিছুই মেলে না। এ ক্ষেত্রে বিমা সংস্থাকে আগাম জানাতে হয়, মণ্ডপটি কী দিয়ে তৈরি। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য মণ্ডপ তৈরির উপকরণ কেনার বিলও জমা করতে হয়। নিরাপত্তা কী রকম ছিল এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে কত জন করে দর্শনার্থীকে মণ্ডপে ঢোকানো হয়েছে— সে সবও দেখা হয়। জানা যাচ্ছে, প্রতি এক লক্ষ টাকায় মণ্ডপের বিমার জন্য খরচ পড়ে কমবেশি ৩৫৪ টাকা। কোনও পুজো কমিটি ৫০ লক্ষ টাকার বিমা করিয়ে রাখে, কেউ বা করায় আরও বেশি টাকার।

২০১৫ সালে দেশপ্রিয় পার্কে ‘বড় দুর্গা’ ঘিরে জটিলতার পরে দর্শনার্থীদের জন্য বিমার ভাবনা শুরু হয়। দর্শনার্থীরা পদপিষ্ট হতে পারেন ভেবে সে বছর দেশপ্রিয় পার্কে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছিল। করোনা-কালেও নতুন করে দর্শনার্থীদের বিমায় জোর দেওয়া হয়। চলতি বছরে প্রতি এক লক্ষ টাকায় দর্শনার্থীদের বিমার জন্য খরচপড়ছে কমবেশি ২৩৬ টাকা। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য বিমা করানোর খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি। প্রতি এক লক্ষ টাকায় সাড়ে চার হাজার টাকা করে দিতে হয় বলে জানাচ্ছেন বিমা সংস্থার লোকজন।

বেশি খরচের কারণেই কি শ্রমিক-নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে উদাসীন থাকে পুজো কমিটিগুলি?

‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোকর্তা অঞ্জন উকিল বললেন, ‘‘আমরা মণ্ডপের বিমা করাই, তার মধ্যেই দর্শনার্থীদের বিমাও ধরা থাকে। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য কোনও পুজো কমিটি আলাদা করে বিমা করায় কিনা, তা জানা নেই।’’ ত্রিধারা পুজো কমিটির কর্তা তথা কলকাতার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘মণ্ডপ, দর্শনার্থী সব বিমা করিয়ে রাখা হয়। কিন্তু শ্রমিকদের বিষয়টা ঠিকাদারের দেখা উচিত!’’ একই রকম দাবি শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোকর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামীর। তিনি বললেন, ‘‘আমরা মণ্ডপের বিমা করাই। গয়নারও বিমা হয়। শ্রমিকদেরটা ঠিকাদারের ভাবনা।’’ যদিও হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘শ্রমিকদেরও বিমা করাই আমরা, পুজোটা সবার। সকলের কথাই ভাবতে হয়।’’ একই দাবি সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা স্বরূপ বিশ্বাস ও চেতলা অগ্রণীর পুজোকর্তা সমীর ঘোষেরও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy