Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
College Square

কোভিড-আতঙ্কে বন্ধ সাঁতার প্রশিক্ষণ থেকে প্রতিযোগিতা

কলেজ স্কোয়ারের বিশাল জলাশয় ঘিরে রয়েছে সাঁতারের ছ’টি ক্লাব।

জনশূন্য কলেজ স্কোয়ারের সুইমিং পুল চত্বর। রবিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

জনশূন্য কলেজ স্কোয়ারের সুইমিং পুল চত্বর। রবিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০৫:০৯
Share: Save:

করোনা আতঙ্কে স্বাস্থ্য-বিধির কথা ভেবে বন্ধ রয়েছে সাঁতার প্রশিক্ষণ। প্রতি বছর গ্রীষ্মেই শুরু হয় এর মরসুম। এ বছর সাঁতার প্রশিক্ষণের ক্লাবগুলি বন্ধ থাকায় স্থগিত ওয়াটার পোলো-সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। ক্লাবের কর্তারা জানাচ্ছেন, যা পরিস্থিতি তাতে এই বছর ক্লাব খোলা সম্ভব নয়। ফলে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপার্জনের পথ বন্ধ ক্লাবগুলির। যে কারণে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে তারা।

কলেজ স্কোয়ারের বিশাল জলাশয় ঘিরে রয়েছে সাঁতারের ছ’টি ক্লাব। তাদেরই একটি কলেজ স্কোয়ার সুইমিং ক্লাব। ১৯১৭ সালে শুরু হওয়া এই ক্লাবের এক কর্তা সন্তোষ দাস জানান, প্রতি বছর কম করে ৮০০ জন সাঁতারের প্রশিক্ষণ নেন। খুদেরাই বেশি। এ বার সব বন্ধ। মরসুমে নানা প্রতিযোগিতা, ওয়াটারপোলো এখানকার আকর্ষণ। সন্তোষবাবু বলেন, “সাঁতার প্রশিক্ষণের মেম্বারশিপ ফি ক্লাবের উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। সেটাই বন্ধ। সাঁতারের সঙ্গে যুক্ত প্রশিক্ষক ও অন্য পেশাদারদেরও আয় বন্ধ। ক্লাব চলবে কী করে জানি না।”

সাঁতার প্রশিক্ষণ তো সামাজিক দূরত্ব মেনে সম্ভব নয়। তা ছাড়া জল থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে এই পরিস্থিতিতে ক্লাব খোলার কথাও ভাবতে পারছেন না কর্মকর্তারা। এ শহরের আরও কয়েকটি পুরনো সাঁতার প্রশিক্ষণ ক্লাব রয়েছে হেদুয়ায়। তারই একটি একশো পেরোনো সেন্ট্রাল সুইমিং ক্লাব। সেই ক্লাবের কর্মকর্তা বিষ্ণু গঙ্গোপাধ্যায় জানান, এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে না ক্লাব খোলার। তা ছাড়া সাঁতারের মরসুম চলে সেপ্টেম্বরের শেষ বা অক্টোবরের প্রথম পর্যন্ত। হেদুয়ার জলাশয়ে নতুন জল ভরার আগেই লকডাউন হয়। ফলে এখন সাঁতার ক্লাব খোলার নির্দেশ এলেও নতুন করে জল ভরে প্রশিক্ষণ দেওয়া কার্যত অসম্ভব। বিষ্ণুবাবু বলেন, “সারা বছরের ক্লাব চালানোর খরচ তো এই মরসুম থেকেই ওঠে। বছরভর ক্লাব কী ভাবে চালাব বুঝতে পারছি না।”

একই বক্তব্য দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর লেকের অ্যান্ডারসন ক্লাবের কর্মকর্তা অমিত বসুর। তিনি বলেন, ‘‘২০২২ সালে ক্লাবের শতবর্ষ। ২০২১ সাল থেকেই অনুষ্ঠান করব ভেবেছিলাম। সাঁতার প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকায় ক্লাবের আয়ও বন্ধ। শুধু কি ক্লাব? আর্থিক অনটনে পড়ছেন সাঁতারের সঙ্গে জড়িত পেশাদারেরাও।’’

তেমনই এক প্রশিক্ষক ভোলানাথ পাল। সারা বছর ধরে এই মরসুমের দিকে তাকিয়ে থাকেন তিনি। দক্ষিণ কলকাতার এক ক্লাবের প্রশিক্ষক ভোলানাথ বলেন, ‘‘এই ক’টা মাসই তো সাঁতার শিখিয়ে যেটুকু আয় হয়। এ বার পুরো বন্ধ। তা ছাড়া ছোটদের সঙ্গে থাকায় যে মনের আনন্দ হয়, সেটাও খুব মিস করছি এ বার।”

সাঁতার শিখতে যেতে না পেরে মন খারাপ ছোটদেরও। মানিকতলার পঞ্চম শ্রেণির আরিত্রিক মজুমদার গত বছর থেকে কলেজ স্কোয়ারে সাঁতার শিখছে। গত বার মরসুমের প্রায় শেষে ভর্তি হয়েছিল। ইচ্ছে ছিল এই বছর সাঁতার শিখে জলে দাপাবে। আরিত্রিক বলে, “সাঁতারের কাকু আমাকে বলেছিল, এ বার আমি অনেকটা শিখে গেলে তার পরে প্রতিযোগিতায় নামতে পারব। সে সব কিছুই না হওয়ায় খুব মন খারাপ লাগছে। কিন্তু সামনের বছরও কী শিখতে পারব?’’

আরও পড়ুন: বর্ষায় আবার ভাসতে পারে শহর, কতটা তৈরি পুর প্রশাসন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

College Square Swimming Covid-19 Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE