Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Tala Bridge

স্থানীয়দের দাবিতে টালা সেতু ঘিরে জটিলতা, চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না উদ্বোধনের দিনক্ষণ

এ নিয়ে শুক্রবারও বৈঠকে বসেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় এবং স্থানীয় বিধায়ক অতীন ঘোষ। কিন্তু দিন ঠিক করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পূর্তমন্ত্রী।

পূর্তমন্ত্রীর দাবি,  খড়্গপুর আইআইটি-র প্রতিনিধিরা পরীক্ষা করে গেলে পুজোর আগেই খুলে দেওয়া হবে সেতু।

পূর্তমন্ত্রীর দাবি, খড়্গপুর আইআইটি-র প্রতিনিধিরা পরীক্ষা করে গেলে পুজোর আগেই খুলে দেওয়া হবে সেতু। ফাইল ছবি

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১১
Share: Save:

কাজ যেন ফুরোচ্ছেই না টালা সেতুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিত্যনতুন দাবির ঠেলায় এখন সেখানে এমনই অবস্থা বলে অভিযোগ! যার জেরে এখনও ঠিক করা যাচ্ছে না সেতুর উদ্বোধনের দিন। এ নিয়ে শুক্রবারও বৈঠকে বসেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় এবং স্থানীয় বিধায়ক অতীন ঘোষ। কিন্তু দিন ঠিক করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পূর্তমন্ত্রী। তবে তাঁর দাবি, খড়্গপুর আইআইটি-র প্রতিনিধিরা পরীক্ষা করে গেলে পুজোর আগেই খুলে দেওয়া হবে সেতু। যদিও সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার প্রধান ইঞ্জিনিয়ার শুক্রবার বললেন, ‘‘সেতু সংলগ্ন এলাকার লোকজনের যা দাবিদাওয়া, তা পূরণ করতে গেলে আর সেতুর কাজ শেষ হবে না। উদ্বোধনের দিনও তাই ঠিক করা যাচ্ছে না। তবে ২০-২২ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলার জোর চেষ্টা করা হবে। যেটুকু বাকি থাকবে, পুজোর পরে হবে।’’

মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পরে ২০১৮ সালে টালা-সহ শহরের বেশ কয়েকটি সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ২০১৯ সালে সেই রিপোর্ট জমা পড়ে। উত্তর কলকাতার সঙ্গে উত্তর শহরতলির যোগাযোগ রক্ষাকারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই টালা সেতু সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভাঙার কাজ শুরু হয়। সব মিলিয়ে খরচ ধরা হয় ৪৬৮ কোটি টাকা। কাজে নেমে সেতুর দৈর্ঘ্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫০ মিটার। সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে ডানলপের দিক থেকে এসে শ্যামবাজারের দিকে সেতুর যে অংশ মিলছে, সেই অংশের রাস্তার কাজটুকু বাকি। কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হয়ে গেলেও গত কয়েক দিনের বৃষ্টির জন্য সেখানে এখনও পিচ করা যায়নি। ওই অংশ দিয়েই সেতুর এক দিক থেকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দিকে একটি রাস্তা চলে যাচ্ছে। চলছে সেটিতে পেভার ব্লক বসানোর কাজও। এ ছাড়া সেতু রং করা, রেলিং বসানো এবং বাতিস্তম্ভ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। তবে এখনই সেতুর দু'দিকের সার্ভিস রোডের কাজ করা যাচ্ছে না বলে সূত্রের খবর।

নির্মাণ সংস্থার এক আধিকারিক জানান, সার্ভিস রোডের নীচে জলের পাইপলাইনের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে, ওই এলাকার দুটি বড় দুর্গাপুজোর ‘অনুরোধ’। এখন ওই রাস্তার কাজ করা হলে পুজোর মধ্যে তা শেষ করা যাবে না। ফলে সেই রাস্তা দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে অসুবিধা হবে বলে ওই পুজোর কর্তাদের দাবি। এর জেরে পুজোর পর ওই কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকারের তরফে অনুরোধ মঞ্জুরও হয়ে গিয়েছে।

এর সঙ্গেই সমস্যা তৈরি হয়েছে সেতুর এক দিকের সিঁড়ি তৈরি না করা নিয়ে। ওই এলাকায় টালা সেতুর ঠিক পাশেই আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল রয়েছে। সেখানে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সকাল, দুপুর মিলিয়ে অন্তত চারটি স্কুল চলে। আগে ওই স্কুলের সামনে টালা সেতু থেকে নামার একটি সিঁড়ি ছিল। কিন্তু নতুন করে তৈরি হওয়া সেতুর গায়ে তা আর রাখা হয়নি। এই নিয়েই এখন জটিলতা তৈরি হয়েছে। সেতুর নির্মাণকারী সংস্থার দাবি, ওই পাশে রেলের জমি রয়েছে। নিরাপত্তার যুক্তিতে সেতুর ওই দিকে কোনও সিঁড়ি বা র‌্যাম্প তৈরি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রেলের তরফে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, সেখানেই সিঁড়ি না হলেও একটি র‌্যাম্প যাতে তৈরি করে দেওয়া হয়। নির্মাণ সংস্থার আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা বলেছি, অন্য সিঁড়ি দিয়ে নেমে সেতুর নীচের রাস্তা পার হয়ে গেলেই হল! কিন্তু পড়ুয়ারা অত হাঁটবে কেন বলে জেদ ধরে বসে থাকা হচ্ছে।’’

এই সব জটিলতা কাটিয়ে সেতু খুলবে কবে? পূর্ত দফতরের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে নির্দেশ রয়েছে, মহালয়ার মধ্যে হলে ভাল। তবে যা-ই হয়ে যাক, পঞ্চমীর মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে আলোচনায় আসছে তৃতীয়া বা চতুর্থী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tala Bridge Firhad Hakim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE