Advertisement
২০ মে ২০২৪
আদিগঙ্গার দূষণ

মেয়র শোভনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে মন্ত্রী শোভন

এক ব্যক্তি। দুই দফতর। সমস্যা নিয়ে দুই দফতরের দাবি ঠিক উল্টো। সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবে কে? নেওয়াই বা হবে কার বিরুদ্ধে? আপাতত এই প্রশ্নেই ঝুলছে আদিগঙ্গার দূষণ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

এক ব্যক্তি। দুই দফতর। সমস্যা নিয়ে দুই দফতরের দাবি ঠিক উল্টো। সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবে কে? নেওয়াই বা হবে কার বিরুদ্ধে? আপাতত এই প্রশ্নেই ঝুলছে আদিগঙ্গার দূষণ।

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কলকাতা পুরসভা দাবি করেছিল, আদিগঙ্গার পাড় থেকে খাটাল ও শুয়োরের খামার তুলে দিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অধীনস্থ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালতে হলফনামা দিয়ে জানাল, আদিগঙ্গার পাড়ে এখনও খাটাল ও শুয়োরের খামার রয়ে গিয়েছে। গত ২ নভেম্বর পরিদর্শন করে এমনটাই দেখে এসেছে তারা!

মেয়র ও পরিবেশমন্ত্রী একই ব্যক্তি। কিন্তু তাঁর অধীনস্থ দু’টি সংস্থার বক্তব্যের ফারাকে স্বাভাবিক ভাবেই তাজ্জব পরিবেশকর্মীরা। এ দিন আদালতে কলকাতা পুরসভার কৌঁসুলি অলোক ঘোষ ও গোপালচন্দ্র দাস দাবি করেছেন, তাঁরা খাটাল ও খামার উচ্ছেদ করেছিলেন। কিছু খা়টাল কল্যাণীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে উচ্ছেদ হওয়া খাটাল ও খামারের বেশ কিছু আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। এ ব্যাপারে পুলিশি সহায়তাও চায় পুরসভা। সেই আর্জির প্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, খাটাল উচ্ছেদে পুলিশি সাহায্যের কথা আদালত তার আগের নির্দেশেই স্পষ্ট করে দিয়েছে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, খাটাল-খামার উচ্ছেদ করে সেখানে উদ্যান তৈরি করে সৌন্দর্যায়নের পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা। তাতে জমি ফের দখল হওয়া আটকানো যাবে। এ দিন পরিবেশ আদালতও একই পরামর্শ দিয়েছে। আদিগঙ্গায় জঞ্জাল ফেলা নিয়েও সচেতনতার প্রসার ও প্রয়োজনে জরিমানা করার কথাও বলেছে আদালত।

কালীঘাট মন্দির চত্বরের দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা হয়েছিল। পরে সেই মামলায় জুড়ে যায় আদিগঙ্গার দূষণও এবং কার্যত সেটাই মুখ্য ভূমিকা নেয়। মামলায় আদালতবান্ধব হিসেবে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তকে নিয়োগ করে ডিভিশন বেঞ্চ। এ দিন সুভাষবাবু আদালতে অভিযোগ করেন, আদিগঙ্গা দূষিত করার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উচিত মেয়রকে জরিমানা করা। কিন্তু মেয়রই এ রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী। ফলে পর্ষদকর্তারা নিজেদের উপরওয়ালার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কী ভাবে?

আদিগঙ্গা যে মারাত্মক ভাবে দূষিত, তা বারবারই বলেছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, খাটাল এবং নিকাশি নালা থেকেই দূষিত হচ্ছে আদিগঙ্গা। এ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আশপাশের মানুষও। এ দিন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করে জানান, আদিগঙ্গার জলে কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়ার মাত্রা মারাত্মক। জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন খুবই কম। এমনকী কোথাও তার পরিমাণ শূন্য! এমন দূষিত জলে জীববৈচিত্র টিকে থাকা কঠিন। পরিদর্শনে দেখা গিয়েছে, এখনও বহু জায়গায় নিকাশি পাইপের মুখ খোলা রয়েছে। পলি পড়ে আদিগঙ্গার বহু জায়গা ভরাটও হয়ে গিয়েছে।

পুরসভা সূত্র জানিয়েছে, নিকাশি নালা বন্ধ করে এবং পলি সাফ করে কী ভাবে দূষণ ঠেকানো যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে। এ দিন আদালতেও তা জানানো হয়েছে। সুভাষবাবু এ দিন আদালতে জানান, গত বছরের ২৭ মে রাজ্যের মুখ্যসচিব এ ব্যাপারে সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির কথা আদালতকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তা তৈরি হয়নি। এ ব্যাপারে আদালত কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করে মুখ্যসচিবকে তড়িঘড়ি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। কাজের কী অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরসভার কাছেও রিপোর্ট চেয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sovan chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE