Advertisement
E-Paper

Maniktala Main Road: ঠিকানা-বিভ্রাট, শহরের গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় রোগী খুঁজে পেতেই নাজেহাল অবস্থা পুলিশের

সোমবার পুরভবনে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ২৫টি মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকা ঘোষণা করেন।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৬
বিতর্কিত: (উপরে) ৯ নম্বর লাউডন স্ট্রিটের ঠিকানা রয়েছে মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকায়। অথচ আদতে সেটি একটি বেসরকারি হাসপাতাল। মঙ্গলবার।

বিতর্কিত: (উপরে) ৯ নম্বর লাউডন স্ট্রিটের ঠিকানা রয়েছে মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকায়। অথচ আদতে সেটি একটি বেসরকারি হাসপাতাল। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

৯ ও ১১ নম্বর লাউডন স্ট্রিট। দক্ষিণ কলকাতার এই দু’টি ঠিকানায় রয়েছে এক বেসরকারি হাসপাতাল এবং একটি নামী বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। সোমবার রাতে কলকাতা পুরসভা শহরের ২৫টি ঠিকানায় মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনের যে তালিকা ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে থাকা এই দু’টি ঠিকানা ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই তালিকায় থাকা ১৯০-১৯৪ মানিকতলা মেন রোডের ঠিকানা-বিভ্রাটকে কেন্দ্র করেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

সোমবার পুরভবনে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ২৫টি মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকা ঘোষণা করেন। রাজ্য সরকারের ‘এগিয়ে বাংলা’ ওয়েবসাইটে গিয়ে তালিকাটি যে কেউ দেখতে পারবেন। সেই তালিকার এক নম্বরে থাকা ১৯০-১৯৪ নম্বর মানিকতলা মেন রোডের বাসিন্দা করোনা আক্রান্তদের বস্তিবাসী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আদতে ওই ঠিকানায় কোনও বস্তিই নেই। আছে কয়েকটি দোকান। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘উলটপুরাণ’-এর সেই ছবিই চোখে পড়ল।

এ দিন কাঁকুড়গাছি মোড়ে ১৯০-১৯৪ মানিকতলা মেন রোডের ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একাধিক দোকান রয়েছে। মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনে পুলিশের যে ঘেরাটোপ থাকার কথা, তেমন কিছুও সেখানে চোখে পড়েনি। এক দোকানি বললেন, ‘‘সোমবার রাতে পুলিশ এসেছিল। আমরা পুলিশকে জানাই, ১৯০-১৯৪ নম্বর মানিকতলা মেন রোডে আমাদের কয়েকটি দোকানই শুধু রয়েছে। পুলিশ অনেক রাত পর্যন্ত খুঁজেও করোনা আক্রান্ত কাউকে না পেয়ে চলে গিয়েছে।’’ স্থানীয় ফুলবাগান থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুরসভা যে তথ্য দিয়েছে, তাতে ওই ঠিকানায় আমরা কোনও কোভিড
আক্রান্তকে খুঁজে পাইনি।’’ ওই বরোর চেয়ারম্যান অনিন্দ্যকিশোর রাউতের অবশ্য দাবি, ‘‘ওই দোকানগুলির পিছনে একই ঠিকানায় একটি আবাসনও রয়েছে। সেখানেই একাধিক জন করোনায় আক্রান্ত।’’ বরো চেয়ারম্যান এই তথ্য দিলেও ওই ঠিকানায় করোনা আক্রান্ত আদৌ কেউ আছেন কি না, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশেরও তা জানা নেই।

তালিকায় থাকা মানিকতলা মেন রোডের এই ঠিকানা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার।  ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

তালিকায় থাকা মানিকতলা মেন রোডের এই ঠিকানা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

তবে এই ঘটনাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে সাত নম্বর বরোর ৯ ও ১১ নম্বর লাউডন স্ট্রিটের বিষয়টি। সেখানে রয়েছে এক বেসরকারি হাসপাতাল ও একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। সোমবার রাতে মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকা হাতে পেয়ে আক্রান্তদের ঠিকানা খুঁজতে একই ভাবে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছিল শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশকে। ওই থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকায় হাসপাতাল ও স্কুল থাকায় আমরা তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম। এটা যে পুরসভার ভুল, তা পরিষ্কার। আমরা ওদের বিষয়টি সংশোধন করতে বলেছি।’’ এ বিষয়ে সাত নম্বর বরোর এগ্‌জিকিউটিভ হেলথ অফিসার ঝুমা চক্রবর্তী ফোনে বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে কলকাতাপুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলুন।’’ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর আসেনি মেসেজের। ডেপুটি মেয়র ও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতীন ঘোষও ফোন ধরেননি। তাঁকেও মেসেজ করে উত্তর পাওয়া যায়নি।

যে ২৫টি মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োন তৈরি করা হয়েছে, তার বেশির ভাগ ঠিকানায় গিয়ে এ দিন ‘বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো’র ছবিই চোখে পড়ল। গণ্ডিবদ্ধ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত অধিকাংশ আবাসনের সামনেই দেখা গিয়েছে, শুধু পুলিশের গার্ডরেল বসানো। গুটিকয়েক ঠিকানায় পুলিশকর্মীদের দেখা গেলেও বাকি জায়গায় স্রেফ ব্যারিকেডই ছিল। আবাসনে ঢোকা-বেরোনোর ক্ষেত্রে কোনও রকম কড়াকড়ি চোখে পড়েনি। যদিও বিভিন্ন আবাসন কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, আক্রান্তেরা ছাড়া বাকি সকলে কোভিড-বিধি মেনে আসা-যাওয়া করছেন।

বিজেপি নেতা ও পুরসভার কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘ভিড় থেকে যা হওয়ার, তা তো হয়েই গিয়েছে। এখন মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োন করে কতটা লাভ হচ্ছে, তা বোঝাই যাচ্ছে।’’ কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের বক্তব্য, ‘‘যে পদ্ধতিতে মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকা ঘোষণা হয়েছে, তা হাস্যকর।’’

দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এখন আর মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োন করে কাজের কাজ কিছু হবে না। সামনে একাধিক পুরভোট, গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করতে হবে। কোভিড-বিধি নিয়ে কড়াকড়ি করতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।’’

Maniktala KMC Micro Containment Zone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy