হাওড়া পুরসভার সঙ্গে সংযোজিত বালির ১৬টি ওয়ার্ডের উপনির্বাচন নিয়ে ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিরোধী দলের নেতারা। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে বালির ৩৫টি ওয়ার্ড ভেঙে নতুন ১৬টি ওয়ার্ড করা হয়েছে। শনিবার জেলা প্রশাসনের ডাকা ওই বৈঠকে উপস্থিত বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার জোর করে এই উপনির্বাচন চাপিয়ে দিচ্ছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, বালির ওই ওয়ার্ডগুলিতে ভোট নিয়ে অনেক দিন ধরেই জটিলতা চলছিল। কিন্তু তখন রাজ্য সরকার কার্যত চুপ করে থেকে বিষয়টি ‘ঝুলিয়ে’ রেখেছিল। তাই সরকারের এই ভোট করার সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। ফলে আগামী ৩ অক্টোবর বালির উপনির্বাচন নিয়ে ফের জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
হাওড়া পুরসভার সঙ্গে বালি সংযোজিত হওয়ার পরে ১৬টি ওয়ার্ডে কী ভাবে ভোট করা যাবে, তা নিয়ে কয়েক মাস ধরে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার দু’পক্ষই জানিয়ে দেয়, হাওড়া পুর-আইনের সাহায্যে সব জট কেটে গিয়েছে। ফলে আসানসোল, বিধাননগরের মতো বালিতেও আগামী ৩ অক্টোবর ভোট করতে অসুবিধা নেই। সেই মতো রাজ্য নির্বাচন কমিশন থেকেও নবান্নে ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য চিঠি পাঠানো হয়। রাজ্য পুর দফতরও জানিয়েছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। আর সেই কারণেই এ দিন সর্বদল বৈঠক ডাকে জেলা প্রশাসন।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, ১৯৮০ সালের হাওড়া পুর-আইনের ২১৯ (২) ধারায় বলা রয়েছে যে, কোনও ওয়ার্ডের এলাকা নির্ধারণ করতে পারবে রাজ্য সরকার। সেই মতো জুলাইয়ে হাওড়ার সঙ্গে বালি সংযোজিত হওয়ার পরেই ১৬টি ওয়ার্ডের এলাকা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। সরকারের এই ব্যাখ্যাই মেনে নিয়েছে কমিশন।
তবে এত দিন ধরে বালির নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চললেও রাজ্য সরকার আচমকা এই পুর-আইনের যুক্তি কেন খাড়া করছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘সরকার এখন ভোট করার জন্য হাওড়ার পুর-আইনের কথা উল্লেখ করছে। কিন্তু এর আগে যখন আপত্তি জানানো হয়েছিল, তখন তারা কেন ওই আইনের কথা তোলেনি, তা স্পষ্ট নয়। আসলে বিরোধীরা যাতে ভোটের প্রস্তুতিতে বেশি সময় না পায়, তার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্তকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার বালির যে সীমানা পুনর্বিন্যাস ও আসন সংরক্ষণ করছে, তা পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক। কারণ, ওই দু’টি বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা চলছে বলে জানান বিপ্লববাবু। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জেলা সভাপতি কাজী আব্দুল রেজ্জাক বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাব। সমস্ত আইন ভেঙে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ অন্য দিকে, বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার দাস বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টা আদালতের বিচারাধীন। রাজ্য সরকার নিজের ইচ্ছামতো কী ভাবে এই ভোট করছেন, তা বুঝতে পারছি না।’’
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের মধ্য হাওড়ার সভাপতি সুপ্রীতি চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, বালির উপনির্বাচনে নিজেদের ভয়াবহ ফলাফলের আগাম আঁচ পেয়েই বিরোধীরা বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘‘দল চায় শান্তিপূর্ণ ভাবে বালির নির্বাচন হোক।’’ এ দিন জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, বালির ৩৫টি ওয়ার্ডকে ভেঙে ইতিমধ্যেই ১৬টি করা হয়েছে। সেই ৫১ থেকে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটি (৫১, ৫৪, ৫৭, ৬০, ৬৩) ওয়ার্ডকে সংরক্ষিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, সীমানা পুনর্বিন্যাস কিংবা আসন সংরক্ষণ নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে তা আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে হবে।