Advertisement
E-Paper

কলেজকক্ষে ধর্ষণ: অভিযুক্তের তৃণমূল যোগ ‘স্পষ্ট’! অভিষেক, ফিরহাদ, চন্দ্রিমা-সহ অনেকের বৃত্তেই দেখা গিয়েছে ‘এম’-কে

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে কসবাকাণ্ডে অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে আসায়, তা নিয়ে শাসকদলকে বিঁধতে শুরু করেছে বিরোধীরা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ ১৭:২৭
তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কসবাকাণ্ডে অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে আসায় বিতর্ক।

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কসবাকাণ্ডে অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে আসায় বিতর্ক। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কসবার ল’ কলেজে ধর্ষণে অভিযুক্ত ‘এম’-এর তৃণমূল যোগ আরও ‘স্পষ্ট’ হল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের সঙ্গেও অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে আসায়, তা নিয়ে শাসকদলকে বিঁধতে শুরু করেছে বিরোধীরা।

তৃণমূল কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সে তো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের সঙ্গে ব্রিজভূষণ এবং সেই প্রজ্বল রেভান্নাদের ছবি। প্রধানমন্ত্রী যে টুইট করছেন, সেই টুইটেও ধর্ষকদের সঙ্গে ছবি রয়েছে। বংশগোপাল, সুশান্ত ঘোষেদের সঙ্গেও তো সিপিএম নেতাদের ছবি রয়েছে। তাতে কী এল-গেল! পাবলিক লাইফে এগুলো হয়। এতে যদি আমাদের কৈফিয়ত দিতে হয় তো, ওঁদের দিতে হবে।’’ অভিষেকের সঙ্গে অভিযুক্তের যে ছবিটি প্রকাশ্যে এসেছে, তা দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে, ছবিটি অনেক পুরনো। এ ছাড়াও অভিযুক্তকে যে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ছবিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিস কুমার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়।

দেবাশিস কুমারের সঙ্গে এক মঞ্চে অভিযুক্ত।

দেবাশিস কুমারের সঙ্গে এক মঞ্চে অভিযুক্ত। ছবি: সংগৃহীত।

তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের সঙ্গে অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে।

তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের সঙ্গে অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে। ছবি: সংগৃহীত।

অভিযুক্ত ‘এম’-এর ফেসবুক প্রোফাইলেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে নিজেকে তিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলা টিএমসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। এ ছাড়া, তিনি সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। নিজের পেশাগত পরিচয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন আলিপুর আদালতে ‘ক্রিমিনাল লইয়ার’ বা ফৌজদারি আইনজীবী। অভিযোগ, বাকি দুই ধৃতও টিএমসিপির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত।

মালা রায়েল সঙ্গে অভিযুক্তের ছবি।

মালা রায়েল সঙ্গে অভিযুক্তের ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘তৃণমূলের আশীর্বাদের হাত মাথার উপরে না থাকলে এত বড় সাহস হয় নাকি? এখন বেকায়দায় পড়ে তৃণমূল নানা ভাবে অভিযুক্তের সঙ্গে যোগাযোগ অস্বীকার করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখন কলেজে কলেজে কিছু অশুভ চক্র তৈরি হয়েছে। তারা নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বা ছাত্র সংসদে পদ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ছাত্রীদের নানা ভাবে শোষণ করছে। এই প্রত্যেকটা অশুভ চক্রের সঙ্গে তৃণমূল যুক্ত।’’

কুণাল অবশ্য বলেন, ‘‘২০২২ সালের পর থেকে ছেলেটি দলের আর কোনও পদে নেই। কোনও কমিটিতেও নেই। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কার সঙ্গে যোগাযোগ করছে, কার গোষ্ঠীতে নাম লেখাচ্ছে, তা কারও জানার কথা নয়।’’

সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিযুক্ত।

সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিযুক্ত। —ছবি: সংগৃহীত।

কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিযুক্ত ‘এম’।

কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিযুক্ত ‘এম’। ছবি: সংগৃহীত।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কসবা থানায় তরুণী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পার্ক সার্কাসের কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ওই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। বয়ান রেকর্ড করা হয় সাক্ষীদের। এর পর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের সামনে থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তৃতীয় অভিযুক্ত ধরা পড়েন। শুক্রবার তাঁদের আলিপুরের আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

‘এম’-এর ছবি নিয়ে বিতর্কে সার্থক বলেন, ‘‘যে অভিযুক্তদের সঙ্গে টিএমসিপির যোগের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা ছাত্র পরিষদের পদাধিকারী নন। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাক বা না থাক, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সে বর্তমানে কলেজের কর্মচারী। ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত নয়। যদি এই ঘটনা এবং অভিযোগ সত্যি হয়, তার বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ আইনানুগ ব্যবস্থা যাতে নেওয়া হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে হয়, তার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ লড়বে।’’

(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম কসবার ধর্ষণকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে)

kasba Abhishek Banerjee Chandrima Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy