Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
KMC

লক্ষ লক্ষ টাকা গরমিল মিড ডে মিল প্রকল্পে! কলকাতা পুরসভার অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে বিতর্ক

২০১৮-’১৯ সালে পুর বিদ্যালয়গুলিতে যেখানে মিড-ডে মিল পরিচালনার জন্য খরচ হওয়ার কথা ৭৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৩০ টাকা, সেখানে দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩১ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৮ টাকা।

KMC

পুরসভার অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে পুর বিদ্যালয়গুলির মিড-ডে মিলের খরচে এই অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে। প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৪২
Share: Save:

ফের বিতর্কে মিড-ডে মিল প্রকল্প। এ বার এই খাতে খরচের বড়সড় পরিমাণে গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। পুরসভার অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে পুর বিদ্যালয়গুলির মিড-ডে মিলের খরচে এই অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে।

গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত অভ্যন্তরীণ ওই অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮-’১৯ ও ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে মিড-ডে মিল পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ‘অতিরিক্ত’ ৯৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৫৪৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে যে রকম‘হিসাব-বহির্ভূত’ ভাবে প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতে মিড-ডে মিলের মতো প্রকল্প চালানোরউদ্দেশ্য হতাশাজনক বলে রিপোর্টে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র অডিট অফিসার। বাড়তি ওই টাকা সংস্থাগুলিকে কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হল, পুরসভার শিক্ষা দফতরের কাছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে অডিট রিপোর্টে।

২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, কলকাতা পুরসভা পরিচালিত ২৫৩টি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮১টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের মিড-ডে মিল পরিচালনার দায়িত্বে ছিল পুরসভার শিক্ষা দফতর। তবে মিড-ডে মিলের রান্না করা এবং স্কুলে খাবার বিতরণের দায়িত্ব বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে থাকে পুরসভা।

অডিট রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০১৮-’১৯ সালে পুর বিদ্যালয়গুলিতে যেখানে মিড-ডে মিল পরিচালনার জন্য খরচ হওয়ার কথা ৭৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৩০ টাকা, সেখানে দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩১ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৮ টাকা। আবার ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে পুর বিদ্যালয়গুলিতে ওই বাবদ খরচ হওয়ার কথা ছিল ৭৬ লক্ষ ৭৫ হাজার ৩৬৩ টাকা। তা দেখানো হয়েছে ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭৩ টাকা।

২০২০-’২১ অর্থবর্ষেও মিড-ডে মিলের খরচ নিয়ে অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে বিস্তর ‘অনিয়ম’ প্রকাশ্যে এসেছে। রিপোর্ট বলছে, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে পুরসভার শিক্ষা দফতরের তরফে মোটা টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। কিন্তু ওই টাকা কিসের ভিত্তিতে খরচ করা হচ্ছে, তারহিসাব দীর্ঘদিন ধরে নেই। রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই টাকার পরিমাণ ৪০ লক্ষ ২৩ হাজার ১৫৭ টাকা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই টাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অগ্রিম দিলেও বছর শেষে তার হিসাব নেই। অগ্রিম সেই টাকার খরচের হিসাবও শিক্ষা দফতরকে দ্রুত জমা দিতে বলা হয়েছে।

অডিট রিপোর্টে রয়েছে, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর, করোনাকালে থালা, গ্লাস, বাটি, স্যানিটাইজ়ার বাবদ ১৬ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার জিনিস কেনা হয়েছে। মোটা অঙ্কের ওই সমস্ত জিনিস কিসের ভিত্তিতে (দরপত্রের বিস্তারিত বিবরণ, ভাউচার, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন) কেনা হয়েছে, তার প্রামাণ্য নথি দ্রুত অডিট অফিসে পেশ করতে বলা হয়েছে।

রিপোর্ট বলছে, গরমিলের ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের সময়কালে মেয়র পারিষদের (শিক্ষা) দায়িত্বে ছিলেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, যিনি এখন মেয়র পারিষদ (রাস্তা)। গরমিল প্রসঙ্গে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলের হিসাব সম্পর্কে কিছু জানতাম না। তদানীন্তন এডুকেশন অফিসার বলতে পারবেন।’’ ওই সময়ে এডুকেশন অফিসার ছিলেন রুমানা খাতুন। রুমানা বর্তমানে পুরসভার ইনস্টিটিউট অব আর্বান ম্যানেজমেন্টে (আইইউএম) ম্যানেজার পদে রয়েছেন। মিড-ডে মিলের অডিট রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চেয়ে তাঁকে একাধিক বার ফোন করা হলেও সেটি বেজে গিয়েছে। এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ করা হলেও উত্তর মেলেনি।

এই গরমিলের বিষয়ে জানতে চেয়ে বর্তমান মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) সন্দীপন সাহাকে একাধিক বার ফোন করা হলে তাঁর ফোনও বেজে গিয়েছে। এসএমএস করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কলকাতার বাইরে আছি।’’

বিজেপি পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের দাবি, ‘‘মিড-ডে মিল নিয়ে যথাযথ তদন্ত হোক। কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Mid Day Meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE