রাজ্যে জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে গৃহীত রাজ্য সরকারের নতুন নীতি ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সম্প্রতি রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর একটি মেমো প্রকাশ করেছে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে— এ বার থেকে জলাশয় ভরাট করতে চাইলে আবেদনকারীকে বাধ্যতামূলক ভাবে তৈরি করতে হবে ক্ষতিপূরণমূলক জলাশয়। আবেদনের নিষ্পত্তি সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে করতে হবে। প্রতি ধাপের জন্য নির্দিষ্ট ১৫ দিনের সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে।
এত দিন পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। ফলে, আবেদন বছরের পর বছর ঝুলে থাকত। একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ভরাটের অনুমতি দেওয়া হলেও বিকল্প জলাশয় তৈরি হয়নি। নতুন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি) সেই ফাঁক বন্ধ করার জন্য আনা হয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবেদন জমা পড়ার পরে ব্লক ভূমি আধিকারিক তৃণমূল স্তরে তদন্ত করবেন। জেলা ভূমি আধিকারিক নথি পাঠাবেন পরিবেশ দফতরে। অনুমোদন মিললে আবেদনকারীকে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হবে বিকল্প জলাশয় তৈরির। জলাশয় তৈরি হওয়ার পরে সেটির ছবি-সহ প্রমাণ জমা দিতে হবে এবং ফের তৃণমূল স্তরে তদন্ত হবে। সব শেষে মাছ চাষ ও মৎস্য সম্পদ দফতর নতুন জলাশয় খতিয়ে দেখে অনুমোদন দেবে। তৈরি হওয়া জলাশয় ভূমি রেকর্ডে নথিভুক্ত করা হবে।
তবে এতে আপত্তি তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এত দিন ফিশারিজ অ্যাক্টে ৫ কাঠার বেশি জলাশয় ভরাটের উপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাঁদের আশঙ্কা, নতুন এসওপি কার্যত সেই সুরক্ষাকে দুর্বল করছে, কারণ বিকল্প জলাশয়ের প্রস্তাব থাকলে ভরাটের অনুমতি পাওয়া সহজ হতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, শহরতলি ও কলকাতায় প্রশাসনের উদাসীনতা বা কোথাও অতি সক্রিয়তার কারণে গত কয়েক দশক ধরে অবৈধ ভরাট চলে এসেছে। নতুন নীতিতে সরকারি অনুমতি নিয়ে ভরাটের ঘটনা আরও বাড়বে বলেই তাঁদের আশঙ্কা।
‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত বলেন, “কলকাতায় গত তিন দশকে চার হাজার পুকুর-ঝিল ভরাট হয়েছে। এ বার সরকারি সম্মতিতে বাকি জলাশয়ও বুজিয়ে ফেলা হবে। গাছ কেটে বিকল্প গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেমন সরকারি অনুমতিতে গাছ কাটা চলছে, তেমনই বিকল্প জলাশয়ের ভাঁওতা দিয়ে দেদার জলাশয় ভরাট করা যাবে।”
যদিও রাজ্যের ভূমি দফতরের এক কর্তা জানান, এত দিন বহু ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণমূলক জলাশয় তৈরি হচ্ছিল না। নতুন নিয়মে সেই সুযোগ থাকবে না। তাঁর কথায়, “যাঁরা জলাশয় ভরাট করতে চাইবেন, তাঁদের একই সঙ্গে নতুন জলাশয় তৈরির দায়িত্বও নিতে হবে। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে এটি অত্যন্ত জরুরি।”
নতুন নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে সব জেলা ভূমি আধিকারিক, কমিশনার, ভূমি জরিপ দফতর, পরিবেশ দফতর, মৎস্য দফতর এবং মুখ্যসচিবের কার্যালয়ে। এখন থেকে রাজ্যের সর্বত্র জলাশয় ভরাটের যে কোনও প্রক্রিয়া এই নিয়ম মেনেই চালাতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)