Advertisement
E-Paper

বাড়ি বাড়ি বৃদ্ধাশ্রম, এই লকডাউনে কী ভাবে কাটছে ওঁদের?

“আমার তো মনে হচ্ছে, করোনার আগে না খেতে পেয়ে মরে যাব।”

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ১৬:০৭
জানলা দিয়ে যতদূর দেখা যায়। নিজস্ব চিত্র।

জানলা দিয়ে যতদূর দেখা যায়। নিজস্ব চিত্র।

দেশ জুড়ে টানা একুশ দিনের লকডাউন। একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বেরতে পারবেন না। কিন্তু যাঁরা অসুস্থতার কারণে বেরতেই পারেন না?

“আমার তো মনে হচ্ছে, করোনার আগে না খেতে পেয়ে মরে যাব।” ফোনের অন্য প্রান্তে আতঙ্কিত আশা মণ্ডলের (নাম পরিবর্তিত) গলা।

রাজারহাট নিউটাউনের বাসিন্দা আশা আর তাঁর স্বামী শক্তি মণ্ডল বেঙ্গালুরু ছেড়ে এখন কলকাতায়। প্রথম জন ৬৭। স্পন্ডিলসিস আর লাম্বারোসিসে আক্রান্ত, তাঁর দুই হাত সচল নয়। দ্বিতীয় জন ৭৮। ক্যান্সার রোগী, সদ্য পেসমেকার বসেছে। এ রকম অবস্থায় আচমকা একুশ দিনের লকডাউনে তাঁরা যেমন বাজারে যেতে পারছেন না, তেমনই ওষুধপত্র কেনার পথও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

“আমার মেয়েরা বেঙ্গালুরু থাকে। ওদের কাছেই যাওয়ার কথা ছিল। তাই বাড়িতে খুব বেশি খাবার মজুত করিনি। এখন তো যাওয়া বন্ধ। বাড়িতে খুব বেশি স্টক নেই। খাবারের অনলাইন সাইট বার বার আমাদের অর্ডার বাতিল করছে। আমার হাত নড়ে না। স্বামী ক্যান্সার পেশেন্ট, আমাদের পথে নেমে দুহাতে বাজার তোলা সম্ভব নয়। তা হলে খাব কী?” আতঙ্কিত আশা মণ্ডলের স্বর। অনেক বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন পরিষেবার নম্বর পেয়েছেন। কেউ সব্জি দিয়ে যাবে, কেউ খাবার, কেউ ওষুধ। ‘‘সকাল থেকে ফোন করছি এই সব নম্বরে, কিন্তু বেজে যাচ্ছে বা বন্ধ।” ক্ষোভ আশা মণ্ডলের গলায়।

অসহায় আশা মণ্ডল। যেখানে নিয়মিত তাঁকে ডাক্তার ফিজিয়োথেরাপির পরামর্শ দিয়েছে সেখানে এই ধরনের পরিষেবাও পাচ্ছেন না তিনি। বেসরকারি হাসপাতালের ফিজিয়োথেরাপিস্ট বাড়িতে এসে ফিজিয়োথেরাপি করবে বলে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ চাইছে তা তিনি দিতে রাজি নন।

সল্টলেকের এফডি ব্লকের বাসিন্দা অনিতা দেবী এখন সম্পূর্ণ একা। সদ্য দুটো হাঁটুর অপারেশন হয়েছে তাঁর। আয়া আর অন্য গৃহপরিচারিকাকে তিনি বেতন সমেত বাড়িতে চলে যেতে বলেছেন। কিন্তু তার পর?

“চাল, ডাল আর আলু দিয়ে সামনের একুশ দিন কাটাতে হবে। কী করব? পাড়ার একটা ছেলেকে ধরে ওষুধ আনিয়েছিলাম। তবে যা আছে তা একুশ দিনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। অনলাইনের নম্বর বেজে যাচ্ছে। হয়তো ওষুধ না খেয়েই মরে যাব। করোনাকে আসতে হবে না।” বললেন অনিতা দেবী। তাঁর দুই মেয়েই এখন বিদেশে।

সল্টলেক থেকে নিউটাউন, সর্বত্র এখন এই ছবি। বয়স্ক মানুষেরা নানা কারণে ভয় পেয়ে যাচ্ছেন। সচল নন বলে খাবার পাচ্ছেন না অনেকেই। এই সময় যেমন পরিষেবার প্রয়োজন, তেমনই দরকার মানসিক জোর। মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায় বললেন, “কোনও ভাবেই দিনটাকে একুশ দিন হিসেবে ভাবা যাবে না। তা হলে প্যানিক বাড়বে। এই লকডাউনের সময় বয়স্কদের জন্য অনেক পরিষেবাও তৈরি হয়েছে, কিন্তু আমাদের দায়িত্ব সেই পরিষেবা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। ফোন করে বাড়ির বয়স্ক আত্মীয়দের খোঁজ নিন। তাঁদের ইনফরমেশনগুলো দিন। তাঁরা তো বেশির ভাগই টেক স্যাভি নয়।” কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও এ ক্ষেত্রে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, কলকাতায় যে সমস্ত বয়স্ক মানুষ একা রয়েছেন যে কোনও প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশ তাঁদের পাশে থাকবে।

আরও পড়ুন: করোনা এড়াতে বাজার-দোকানে ‘সুরক্ষারেখা’ টানল কলকাতা পুলিশ

রিমা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, মানুষকেই এই বয়স্কদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। আর যে সব মানুষজন একা বোধ করছেন, যাঁদের সাহায্য প্রয়োজন, তাঁরাও যেন পরিচিত বন্ধুদের ফোন করে তাঁদের অসহায় অবস্থার কথা জানান। রিমা বলেছেন, “সারা ক্ষণ টিভিতে খবর দেখবেন না। তাতে প্যানিক বাড়ে। মন হাল্কা করার জন্য গান শুনুন, সিনেমা দেখুন, বিপদে পড়লে জানান, মানুষকে কাছে পাবেন।”

এমন অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন যাঁরা নিজেরাই টানা একুশ দিন বাড়ি থেকে বেরোন না। কিন্তু এই সময় এ ভাবে বলা হয়েছে বলেই তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। রিমা বলছেন, “বয়স্ক মানুষদের বাড়ি যেতে না পারলেও ওঁদের সঙ্গে অন্তত যোগাযোগ রাখুন। ভরসা দিন। কথা বলুন।”

প্রত্যক্ষ সাহচর্য না দিতে পারলেও, স্নেহের স্বর করোনা-আতঙ্ককে ছাপিয়ে যাবেই।

আরও পড়ুন: সংক্রমণ ঠেকাতে ফুটপাতবাসীরা যাবেন কোথায়

Coronavirus Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy