Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Corona

ছোটদের মধ্যে বাড়ছে কোভিড, তবে ভর্তি কম হাসপাতালে

দৈনিক সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে করোনায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩০
Share: Save:

সংক্রমণের প্রথম পর্বে তারা অনেকেই ছিল উপসর্গহীন বাহক। কিন্তু এ বার বিভিন্ন উপসর্গে বাচ্চাদেরও কাবু করছে করোনা।

দৈনিক সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে করোনায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক অসীম মল্লিক বলছেন, ‘‘গত বার বেশির ভাগ বাচ্চা উপসর্গহীন ছিল। কিন্তু এ বার উচ্চ তাপমাত্রা, বমি, পায়খানা, সর্দি, কাশি, চোখ লাল হওয়ার মতো বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, কোভিড সেরে যাওয়ার পরেও ‘মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়িজ’-এ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তাতে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি, মস্তিষ্ক-সহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সমস্যা হতে পারে। তবে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার পিছনে পরিবারিক ইতিহাস থাকে বলেই জানাচ্ছেন আর এক শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসা শিশুদের কয়েক জনের কোভিড পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসছে। তবে বাড়ির বড়দের থেকেই বাচ্চারা সংক্রমিত হচ্ছে। তাই বাড়ির কারও করোনা হয়েছে বা হয়েছিল কি না, তা-ও জানা প্রয়োজন।’’

সংক্রমণ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাসের ‘ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন’-এর কারণে বেশি মাত্রায় ছড়াচ্ছে সেটি। তাই বাড়ির কেউ সংক্রমিত হলে এ বার বাচ্চারাও ছাড় পাচ্ছে না বলে মত কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকারের। তিনি বলছেন, ‘‘ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ নিয়ে বাচ্চারা অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে সৌভাগ্যবশত এখনও বাচ্চাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাটা কম। কিন্তু কোনও ভাবেই তা নগণ্যও নয়। দিল্লি, মহারাষ্ট্র, বেঙ্গালুরুর কিছু মর্মান্তিক কেস রিপোর্ট রয়েছে। সেখানে বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।’’ তিনি এটাও জানাচ্ছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকায় বাচ্চাদের প্রতিষেধক দেওয়ার পদ্ধতি শুরু হলেও এ দেশে এখনও পর্যন্ত যে যে প্রতিষেধক এসেছে, তার কোনও ট্রায়ালেই শিশুরা ছিল না। তাই কোন প্রতিষেধক কার্যকর, তা বলা যাচ্ছে না। গত দু’সপ্তাহ ধরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলেই জানাচ্ছেন শিশুরোগ চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায়। তবে ওই বাচ্চাদের শুরুতেই কোভিড পরীক্ষা না করিয়ে প্রথমে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বাচ্চাদের নাক থেকে সোয়াব নেওয়া ঝক্কির। তাই উপসর্গ বুঝে আগে ওষুধ দিতে হবে। কিন্তু জ্বর যদি অনেক দিন থাকে বা গুরুতর ডায়েরিয়া হয় কিংবা বাড়িতে করোনার ইতিহাস থাকে, তা হলে পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’’

বাচ্চা বলতে এ ক্ষেত্রে নবজাতক থেকে ১৮ বছরের আগে পর্যন্ত ধরা হয়। সেখানে এখন নবজাতকের মা যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তা হলে তাঁর কাছে সন্তানকে রাখতে কোনও বাধা নেই। এমনকি, মা শিশুকে স্তন্যপানও করাতে পারেন বলেই মত শিশুরোগ চিকিৎসক অরুণ সিংহের। তিনি বলছেন, ‘‘নবজাতকের কোভিড হলেও কোনও ওষুধের প্রয়োজন নেই। পাঁচ বছরের নীচে বাচ্চাদের কোভিড হলে জ্বরের ওষুধই যথেষ্ট। পাঁচ থেকে বারো বছরেও জ্বরের ওষুধই চলবে। তবে খুব বেশি মাত্রায় সর্দি-কাশি হলে ইনহেলার নেওয়া প্রয়োজন। কাজ না হলে স্টেরয়েড খেতে হবে।’’ তিনি আরও জানান, ১২ বছরের উপরের বয়সিদের কোভিড হলে তাদের জ্বর, অক্সিজেনের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। তাদেরও স্টেরয়েড খেতে হতে পারে। বার বার স্নান করাতে হবে। অরুণবাবুর মতে, ‘‘শরীরে হাইপার ইমিউনিটি কাজ করলে সাইটোকাইন বেশি মাত্রায় বেরিয়ে বিভিন্ন কোষের ক্ষতি করে, তাতেই রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়। এই সাইটোকাইন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে একমাত্র স্টেরয়েড।’’

তবে বাচ্চাদের মধ্যে এখনও সাইটোকাইন ঝড় খুব বেশি দেখা যায়নি বলেই মত রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চারা করোনায় আক্রান্ত হওয়া সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। এ বার যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে ওদের ইমিউনিটি সিস্টেম ভাল কাজ করার জন্যই হয়তো মারাত্মক গোলমাল বাধছে না।’’ তবে বাচ্চাদের কোভিড চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বেলেঘাটা আই ডি-সহ বেশ কিছু জায়গায় আলাদা শয্যা রাখা হয়েছে বলেও জানান অজয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘যে জেলায় আলাদা কোভিড শয্যা নেই, সেখানে চিকিৎসা হবে না তা নয়। বড়দের শয্যাতেই চিকিৎসা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE