Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

হাসপাতালের শয্যা আবার ভরে যাচ্ছে করোনা রোগীতে

গত ১ মার্চ হাসপাতালগুলিতে যত সংখ্যক করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন, এপ্রিলের শুরুতে সেই সংখ্যা প্রায় পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।

অসচেতন: তৃতীয় দফার ভোটে ডিউটি করতে যাওয়ার আগে মাস্কহীন বেশির ভাগ পুলিশকর্মী। সোমবার, বারুইপুরে।

অসচেতন: তৃতীয় দফার ভোটে ডিউটি করতে যাওয়ার আগে মাস্কহীন বেশির ভাগ পুলিশকর্মী। সোমবার, বারুইপুরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৮
Share: Save:

তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বৃদ্ধ মানুষটির। ভর্তির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে-পায়ে ধরছেন পরিজনেরা। কিন্তু শয্যা না থাকায় করোনা আক্রান্ত ওই বৃদ্ধকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এক বছর আগের সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারেন না শহরের এক চিকিৎসক। সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে প্রকাশিত বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের ভর্তির পরিসংখ্যান দেখে তিনি বললেন, ‘‘আবার হয়তো পুরনো দিন ফিরে আসতে চলেছে। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ তা বুঝছেন না। তাঁদের এই মানসিকতাই আবার হাসপাতালের শয্যা ভরিয়ে তুলছে।’’

একই কথা বলছেন শহর ও সংলগ্ন জেলার কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বঙ্গে ফের করোনার প্রকোপ বাড়তেই হাসপাতালেও রোগী ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। গত ১ মার্চ হাসপাতালগুলিতে যত সংখ্যক করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন, এপ্রিলের শুরুতে সেই সংখ্যা প্রায় পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। মার্চেও যে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল শূন্য, সেখানে এখন ৫০-এর বেশি রোগী চিকিৎসাধীন।

সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় বললেন, ‘‘আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলেই রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে পাঁচ-দশ জন ভর্তি হচ্ছেন। তবে এ বার বয়স্কদের তুলনায় কমবয়সিদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।’’ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অনেকেই কমবয়সি বলে জানা গিয়েছে। যেমন, পিয়ারলেস হাসপাতালে গত ৪ মার্চ পর্যন্ত যত রোগী ভর্তি ছিলেন, তাঁদের গড় বয়স ৫৭। এ ছাড়া, ৩০ বছর বয়সি রোগী রয়েছেন চার জন এবং ৭৫ বছরের মাত্র দু’জন। হাসপাতালের তরফে সুদীপ্ত মিত্র বললেন, ‘‘প্রতিদিন এখানে ২০০ জনের পরীক্ষা করে অন্তত ৩০ জনের পজ়িটিভ আসছে। তাঁদের অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন।’’

৪ মার্চ পর্যন্ত এম আর বাঙুরে করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২২৩। সেখানেও একশোর বেশি সংখ্যক রোগীর বয়স ৩৫ থেকে ৫৫-র মধ্যে। একই ভাবে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ওই দিন পর্যন্ত ভর্তি থাকা ৭৬ জনের মধ্যে ষাটের কম বয়সিদেরই সংখ্যা বেশি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তথা কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বললেন, ‘‘অন্যান্য দেশেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে দেখা গিয়েছে, কমবয়সিরা একটু বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এ বার করোনার উপসর্গ শুধু জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, গন্ধ-স্বাদ না পাওয়ায় আটকে নেই। দুর্বলতা, ডায়েরিয়া, গা-হাত-পা ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করাও যুক্ত হয়েছে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, সরকারি কোভিড হাসপাতালে রোগী যেমন বাড়ছে, তেমনই বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তির হার ঊর্ধ্বমুখী। যেমন, ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে ৪৬টি শয্যার মধ্যে গত ১ মার্চ ভর্তি ছিলেন ১৩ জন। ৩ এপ্রিল সেখানে সব শয্যা ভর্তি। ওই হাসপাতাল গোষ্ঠীর কর্তা রূপক বড়ুয়া বললেন, ‘‘শেষ সাত দিনে করোনা রোগীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের চাহিদাও বাড়ছে। রোগীর চাপ বাড়ায় আমাদের সল্টলেকের হাসপাতালেও শয্যা বাড়াতে হয়েছে।’’

দমদম আইএলএস হাসপাতালের ১০টি শয্যার একটিও ফাঁকা নেই। শেষ কয়েক দিনে শয্যা বাড়িয়েছে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালও। যেমন, গত ৩১ মার্চ মেডিকা শয্যা বাড়িয়ে ৬১টি করেছে। আবার ৩ এপ্রিল উডল্যান্ডস শয্যা বাড়িয়ে ৫২টি করেছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘কমবয়সিদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা কম বলেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE