ডিজ়েলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে রাজ্য পরিবহণ নিগমের জ্বালানি কেনার টাকার সংস্থান নিয়ে সমস্যা ছিলই। করোনা সংক্রমণ লাগামছাড়া হতেই সরকারি বাসে যাত্রী কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে নিগম জানাচ্ছে, বিশেষ পরিষেবার জন্য ফের বাস পথে নামলে যাত্রী পরিষেবায় ব্যবহৃত বাস আরও কমার আশঙ্কা আছে।
যাত্রীদের ভাড়ার টাকা থেকে আয় তলানিতে ঠেকায় ফের পথে সরকারি বাস হু হু করে কমছে। দিনে মেরেকেটে রাজ্য পরিবহণ নিগমের সাড়ে তিনশো থেকে চারশো বাস পথে নামছে এই মুহূর্তে। ওই সব বাস আগে যত ট্রিপ করত, সেই সংখ্যাও অনেক কমে গিয়েছে। সকাল এবং সন্ধ্যার ব্যস্ত সময় ছাড়া বাস প্রায় নামছেই না বলে দাবি। গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড থেকে ব্যস্ত রুটে এখনও পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা করছেন পরিবহণ নিগমের বিভিন্ন ডিপোর আধিকারিকেরা। তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ রুট বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।
পরিস্থিতি এতই খারাপ যে হাতে গোনা এসি এবং ভলভো বাস সপ্তাহে এক বা দু’দিন পথে নামছে। সপ্তাহের শুরুর দিকে দু’-এক দিন ওই সব বাস চললেও যাত্রীর অভাবে বাকি দিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ইলেক্ট্রিক বাস এবং নন এসি বাস চালিয়ে পরিষেবা সচল রাখা হচ্ছে। শহরের রুটে বৈদ্যুতিক বাস নামলেও, কিছুটা লম্বা রুটে ডিজ়েলচালিত বাস চলছে। যে সব এসি বাস এখনও চলছে, তার বেশির ভাগ ইলেক্ট্রিক।
রাজ্য পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, বাসের মেরামতি, কর্মীদের বেতন-সহ অন্যান্য খাতে সরকার খরচ করলেও ডিজ়েলের খরচ তাঁদের যাত্রীদের ভাড়া থেকেই তুলতে হয়। আগে যাত্রী-ভাড়া খাতে আয়ের টাকায় পরিবহণ নিগমের নিজস্ব আপৎকালীন তহবিল ছিল। কিন্তু গত বছর লকডাউনের সময়ে নিগম কর্তৃপক্ষকে নানা কারণে বাস চালাতে হয়েছিল। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া ছাড়াও বিশেষ পরিষেবাও চালু রাখতে হয়েছিল। লোকাল ট্রেন এবং মেট্রোর অবর্তমানে বিভিন্ন রুটে তখন বাস চলেছিল। সেই সময়ে ডিজ়েল কেনার খাতে প্রচুর ব্যয় হলেও আয় প্রায় কিছুই হয়নি। ফলে সেই সময় থেকেই ক্ষতির বিপুল বোঝা ঘাড়ে চেপে আছে। রাজ্য সরকারের কাছে পরিষেবা সচল রাখার সাহায্য চেয়ে বার বার আবেদন জানিয়েও ফল মেলেনি। গত ডিসেম্বরের শেষে রাজ্য সরকার পরিষেবা সচল রাখার জন্য অর্থ সাহায্যের আশ্বাস দিলেও এখনও সেই টাকা আসেনি।
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিগমের বাস দেওয়া হয়েছিল। ওই খাতে তিন দফায় প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা পেয়ে ডিসেম্বরের পর থেকে পরিষেবা কিছুটা সচল হয়। মাসখানেক ধরে পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি হওয়ায় ফের যাত্রী কমছে। ফলে কমছে আয়। যে জন্য পথে বাস নামছে হাতে গোনা। এই অবস্থায় জরুরি কাজে বেরোনো মানুষ বাস পেতে সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। নিগমের এক
আধিকারিক বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ রুট কোনও মতে চালু রেখেছি। বাসচালক এবং কর্মীরাও প্রায় বসে গিয়েছেন।” নিগম সূত্রের খবর, করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে থাকায় ফের স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবহণের জন্য বাস জোগান দেওয়ার ডাক পড়তে পরে। তখন রাস্তায় বাসের সংখ্যা আরও কমে যাবে।