Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Nakhoda Masjid

বাড়িতেই ইদ পালন সর্বত্র, নাখোদায় ভাঙল করোনা-বিধি

নাখোদা মসজিদের ট্রাস্টি নাসের ইব্রাহিমের সাফাই, ‘‘ভিড় ঠেকাতে এ বার দু’ঘণ্টার ব্যবধানে দু’টি জামাত করেছিলাম। তাই ভিড় অনেকটাই কম ছিল।

লঙ্ঘন: নাখোদা মসজিদে ইদের জমায়েতে ভাঙল করোনা-বিধি। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

লঙ্ঘন: নাখোদা মসজিদে ইদের জমায়েতে ভাঙল করোনা-বিধি। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ০৭:৩৯
Share: Save:

করোনা পরিস্থিতির জেরে গত বছরের মতো এ বারও বাড়িতে বসেই ইদ পালন করলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের সিংহভাগ মানুষ। শুক্রবার ইদ উপলক্ষে কোথাও যাতে বড় ধরনের জনসমাগম না ঘটে, তার জন্য গত কয়েক দিন ধরে মানুষকে বার বারই সচেতন করা হচ্ছিল। সেই কারণে এ দিন রেড রোডেও নমাজ পড়ার কোনও আয়োজন ছিল না। তবে, বিধি পালনের পাশাপাশি বিধি লঙ্ঘনের ছবিও এ দিন দেখা গিয়েছে। রাজ্যের সব থেকে বড় মসজিদ বলে পরিচিত, জাকারিয়া স্ট্রিটের খোদ নাখোদা মসজিদেই কোভিড-বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ। এ দিন সেখানে ইদের নমাজ পড়ার সময়ে দেখা গিয়েছে, দূরত্ব-বিধি মানার কোনও বালাই নেই। এমনকি, অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাখোদা মসজিদের ট্রাস্টি নাসের ইব্রাহিমের সাফাই, ‘‘ভিড় ঠেকাতে এ বার দু’ঘণ্টার ব্যবধানে দু’টি জামাত করেছিলাম। তাই ভিড় অনেকটাই কম ছিল। দ্বিতীয় জামাতে যাঁরা নমাজ পড়তে এসেছিলেন, তাঁরা আগে এসে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই কারণেই ভিড় হয়ে গিয়েছিল। তবে মসজিদের ভিতরে বিধি মানা হয়েছে।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কেউ মাস্ক না পরলে আমরা কী করব? আমরা তো গ্রেফতার করতে পারি না। ইদের নমাজের আগে আমরা বার বার নোটিস দিয়ে, মাইকে বলে সতর্ক করেছি। তা সত্ত্বেও মানুষ সচেতন না হলে আমাদের কিছু করার নেই।’’

এ দিন বিভিন্ন জায়গায় বাড়িতে ইদের নমাজে পুরুষদের পাশাপাশি শামিল হয়েছিলেন মহিলারাও। শহর ও শহরতলির বহু আবাসনেই ছাদে উঠে নমাজ পড়তে দেখা গিয়েছে মানুষকে। আবার বাড়ির ভিতরেও পরিবারকে নিয়ে নমাজ পড়েছেন অনেকে। কোথাও কোথাও দেখা গিয়েছে, পাড়ার মসজিদে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নমাজ পড়েছেন মানুষ।

নিউ টাউনে বিশ্ব বাংলা গেটের কাছে একটি আবাসনে থাকেন নিউ ব্যারাকপুর প্রফুল্লচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক এক্রামুল চৌধুরী। তিনি জানান, এ দিন সকালে আবাসনের ৩০ জন বাসিন্দা মিলে ছাদে উঠে নমাজ পড়েন। এক্রামুল বললেন, ‘‘নিজেদের সবার আগে সচেতন হতে হবে। একমাত্র তা হলেই করোনাকে হারানো সম্ভব।’’ বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে একযোগে নমাজ পড়তে পারায় দারুণ খুশি এক্রামুলের কন্যা, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রেনেসাঁ হক চৌধুরী।

বারাসতের পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর নিলুফা মল্লিক থাকেন বারাসতের অদূরেই। পর পর দু’বছর এ রকম ঘরবন্দি ইদ কখনও কাটাননি নিলুফা। বাড়িতে বসে বাবা, মা, দিদি ও ভাইয়ের সঙ্গে নমাজ পড়েছেন তিনিও। তাঁর কথায়, ‘‘ইদের দিন বেরোতে পারছি না। সেই কষ্ট তো আছেই। তবে সকলে মিলে একসঙ্গে নমাজ পড়ার আনন্দটাও কিন্তু কম নয়। হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। তা হলে করোনাও হার মানবে না।’’

সংক্রমণ এড়াতে এ বছরও যাতে ইদের নমাজ সকলে বাড়িতে বসে পড়েন, তার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাতার প্রচার চালাচ্ছিলেন এক দল তরুণ। তাঁদেরই এক জন শেখ সাহেবুল হকের কথায়, ‘‘করোনা অতিমারির এই পরিস্থিতিতে ইদের নমাজ বাড়িতেই পড়তে হবে। নিজেরা সচেতন থাকলে নিজেদেরই মঙ্গল।’’

এ দিন কলকাতার বিভিন্ন মসজিদে ইদের নমাজ পড়ার ক্ষেত্রে জারি হয়েছিল নানা বিধিনিষেধ। মাস্ক না-পরলে যে ঢুকতে দেওয়া যাবে না, সে কথা আগেই জানানো হয়েছিল। এ দিন নাখোদা মসজিদে দু’টি জামাতে নমাজ হয়। টিপু সুলতান মসজিদে নমাজ পড়ার সময়ে শারীরিক দূরত্ব-বিধি মানা হয়েছিল বলেই দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। শহরের একাধিক মসজিদে এ দিন সকাল থেকেই জীবাণুনাশের কাজ শুরু হয়েছিল। বন্দর এলাকার বেশ কিছু মসজিদে আবার মাস্ক বিতরণ করা হয়। ভিতরে ঢোকার সময়ে দেওয়া হয় স্যানিটাইজ়ারও।

এ দিন সকালে ইদের নমাজ পড়েই করোনা-যুদ্ধে নেমে পড়তে দেখা যায় মুসলিম যুবকদের অনেককেই। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত দু’নম্বর ব্লকের শাসনের খড়িবাড়ি এলাকার চৌমুহা গ্রামে করোনা সচেতনতায় পথে নামেন যুবকেরা। পথচারীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হয়।

বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কোলাকুলির পরিবর্তে এ দিন প্রধানত সমাজমাধ্যমেই ইদের শুভেচ্ছা বিনিময় চলেছে। এ দিন ইদের পাশাপাশি ছিল অক্ষয় তৃতীয়াও। সেই কারণে দুই সম্প্রদায়ের মানুষই পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানান।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বলেন, ‘‘অতিমারিতে সচেতন মুসলিম মানুষেরা প্রায় ভার্চুয়ালি ইদ পালন করলেন। করোনা-বিধি মেনে এ ভাবে ইদ পালনের জন্য তাঁদের অভিনন্দন। প্রতিটি উৎসবে মানুষ এ রকম সচেতন থাকলে করোনা হার মানবেই।’’

অন্যান্য বার রেড রোডে ইদের নমাজে যিনি ইমাম হিসেবে থাকেন, সেই ফজলুর রহমান সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘‘আমি আগেই বলেছিলাম, সচেতন হলেই করোনা হার মানবে। আপনারা সচেতনতার নজির গড়েছেন। আগামী দিনে এই ভাবে পথ চললে আমাদের জয় হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 Nakhoda Masjid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE