টানা দশ মাস আর্থিক সঙ্কটের পরে ডিসেম্বর থেকে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমতেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর আদায়ে দিশা দেখিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। গত চার মাসে ওয়েভার স্কিমে (সুদ ও জরিমানায় ছাড়-সহ সম্পত্তিকর) একাধিক বিভাগে আশানুরূপ কর আদায় করতে পেরেছিল তারা। কিন্তু চলতি মাস থেকে করোনার প্রকোপ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ফের রাজস্ব সংগ্রহে ভাটা পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, গত বছরের মার্চের শেষ থেকে টানা লকডাউনের জেরে পুর কোষাগারের হাল সঙ্গীন ছিল। আর্থিক অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়েছিল যে পুরকর্মীদের বেতন দিতে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল কলকাতা পুরসভাকে। পরে সঙ্কট কাটাতে পুরসভা গত অক্টোবর থেকে ওয়েভার স্কিম চালু করে। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত ওয়েভার স্কিমে পুরসভা প্রায় ৫৩০ কোটি টাকা আদায় করেছিল। যা সর্বকালীন রেকর্ড। ওয়েভার স্কিম-সহ সম্পত্তিকর আদায় হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও, গত চার মাসে করোনা সংক্রমণের হার বেশ কমে যাওয়ায় লাইসেন্স, বিজ্ঞাপন, বিনোদন বিভাগে কর আদায়ে সুবিধা হয়েছিল। আগামী দিনে কর আদায়ে আরও জোর দিতে একাধিক পরিকল্পনাও করেছিল সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
কিন্তু পুর মহল মনে করছে, সব আশায় ফের জল ঢেলে দেবে নতুন করে করোনার বাড়বাড়ন্ত। পুরসভার রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এপ্রিল মাসে আর্থিক বছরের শেষে বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানোর পরিকল্পনা ছিল। বকেয়া কর না দিলে করখেলাপিদের বিরুদ্ধে নোটিস ধরানো হত। কিন্তু নতুন করে করোনা দাপট আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে দিল।’’
ওই আধিকারিক জানান, নোটিস যাঁরা ধরাবেন সেই পুর কর্মীরাই এখন করোনার জন্য বেশির ভাগ অনুপস্থিত। করোনা ঠেকাতে সপ্তাহখানেক আগেই পুর কমিশনার বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের ৫০ শতাংশ হাজিরার কথা বলেছেন। আবার অধিকাংশ বিভাগের পুর কর্মীরা জ্বরে ভুগছেন। এক আধিকারিক বুধবার বলেন, ‘‘আমার বিভাগের অধিকাংশ কর্মী জ্বর বলে আসেননি। বেশ কিছু শুনানি বাকি আছে। কর্মীরা না থাকায় এই সব কাজ কী ভাবে হবে জানি না!’’
চলতি মাস থেকেই লাইসেন্স বিভাগে বকেয়া কর আদায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মীদের অভিযানে যাওয়ার কথা ছিল। লাইসেন্স বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখন করোনার জন্য কর্মী না থাকায় ওই অভিযান স্থগিত রাখতে হচ্ছে।’’ লাইসেন্স বিভাগে প্রায় কুড়ি কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে সূত্রের খবর। সম্পত্তিকর বিভাগ সূত্রের খবর, শহরের একাধিক ঠিকানা রয়েছে, যেখানে এত দিন সম্পত্তিকরের নোটিস পাঠানো সত্ত্বেও সেই নোটিস ফের পুর ভবনে ফিরে আসত। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সম্ভবত ওই ঠিকানাগুলির অস্তিত্ব এখন নেই। ঠিক করেছিলাম, ওই সমস্ত ঠিকানা ধরে ধরে পুরকর্মীদের পাঠিয়ে অনুসন্ধান করব। কিন্তু করোনা সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে দিল।’’
পুরসভার এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘এখন সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই মূল লক্ষ্য। আগে মানুষ বাঁচুক। তার পরে কর আদায়ের কথা ভাবা যাবে!’’