Advertisement
E-Paper

শব্দবাজি রোখায় এ বার হেনস্থা কাউন্সিলরকেই

শব্দবাজি রুখতে গিয়ে নিগৃহীতের তালিকায় ঢুকে পড়লেন খোদ কাউন্সিলরও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫১
এই আবাসনেই ফাটানো হচ্ছিল শব্দবাজি, দেখাচ্ছেন কাউন্সিলর সুবিমানবাবু।

এই আবাসনেই ফাটানো হচ্ছিল শব্দবাজি, দেখাচ্ছেন কাউন্সিলর সুবিমানবাবু।

শব্দবাজি রুখতে গিয়ে নিগৃহীতের তালিকায় ঢুকে পড়লেন খোদ কাউন্সিলরও।

কালীপুজোর মরসুমে শব্দবাজির তাণ্ডবের বিরুদ্ধে মুখ খুলে পুলিশ বা সাধারণ মানুষের হেনস্থা হওয়া এখন নতুন কিছু নয়। গত কয়েক দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেই তার নজির মিলেছে। কিন্তু যেটা নতুন, তা হল— খোদ শাসক দলের জনপ্রতিনিধির শারীরিক ভাবে হেনস্থা হওয়া। মঙ্গলবার রাতে বরাহনগরের রামলাল অগ্রবাল লেনের এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিয়েছে, আইনের চোখরাঙানিকে থোড়াই কেয়ার করে এক শ্রেণির মানুষ এখনও দেদার ফাটাচ্ছেন শব্দবাজি।

বরাহনগর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ওই ঘটনায় প্রথমে শব্দবাজির প্রতিবাদ করেছিলেন স্থানীয় এক আবাসনের বাসিন্দারা। তাতে কাজ না হওয়ায় তাঁরাই স্থানীয় কাউন্সিলরকে খবর দেন। এর পরে কাউন্সিলর হস্তক্ষেপ করলে অভিযুক্তেরা তাঁর উপরেই চড়াও হয় বলে অভিযোগ।

৪৬/১ রামলাল অগ্রবাল লেনের ওই আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের ফ্ল্যাটের পিছন দিকের আর একটি আবাসনে বেশ কয়েকটি অবাঙালি পরিবারের বাস। কালীপুজোর আগের দিন থেকেই তাঁরা আতসবাজি পোড়াচ্ছেন। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে শব্দবাজি ফাটানো। প্রথমে বিষয়টিকে তেমন আমল দেননি প্রতিবেশীরা। ভেবেছিলেন, এক-দু’দিন পরে বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু উল্টে প্রতিদিনই শব্দবাজি ফাটানোর মাত্রা বাড়ছে বলে অভিযোগ।

পড়ে রয়েছে বাজির খোল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে মাত্রাছাড়া শব্দের তাণ্ডব শুরু হওয়ায় প্রতিবাদ করেন গৌতম মুন্সী নামে এক বাসিন্দা। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ওই অবাঙালি পরিবারের কর্তা কালীপ্রসাদ সাউয়ের কাছে গিয়ে শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ করতে বলেন তিনি। অভিযোগ, সে কথা না শুনে উল্টে পরিবারের মহিলারা অকথ্য ভাষায় গৌতমবাবুকে গালিগালাজ করেন। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘বারণ করলে ওঁরা সাফ জানিয়ে দেন দেওয়ালির অনুমতি রয়েছে। তাই শব্দবাজি ফাটানো চলবেই। অন্য জায়গাতেও তো ফাটছে, আগে গিয়ে সেগুলো বন্ধ করুন।’’ আরও কয়েক জন প্রতিবেশী প্রতিবাদ করলেও সাউ পরিবার তাঁদের সঙ্গেও একই আচরণ করে বলে অভিযোগ।

বুধবার গৌতমবাবু জানান, শেষমেষ তাঁরা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুবিমান ঘোষকে (রাতুল) ফোন করে বিষয়টি জানান। তিনি এসে কালীপ্রসাদবাবুদের বাড়িতে ঢুকতে গেলে কয়েক জন মহিলা বাধা দেন বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়। প্রথমে সুবিমানবাবুর চশমা ভেঙে দিয়ে তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয়। কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘ওই পরিবারের কয়েক জন মহিলা তেড়ে এসে প্রথমে গালিগালাজ করে। এর পরে পুরুষ-মহিলা সকলে মিলে মত্ত অবস্থায় ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে আমাকে। জামা ধরে টানাটানিও করে।’’ অভিযোগ, বাধা দিতে গেলে মৌসুমী দাস, সন্ধ্যা দাস নামে স্থানীয় দুই মহিলাকেও হেনস্থা করেন কালীপ্রসাদবাবুরা।

গৌতমবাবুদের আবাসনেই থাকেন রাজ্য কো-অপারেটিভ সোসাইটির সহকারী রেজিস্ট্রার সেঁজুতি চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কালীপুজোর আগে থেকেই বাজির ফোয়ারা চলছিল। আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। আমাদের আবাসনে একজন বৃদ্ধ বাসিন্দা রয়েছেন, যিনি হৃদরোগে আক্রান্ত। তাই শব্দবাজি ফাটাতে বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কারও কথা না শুনে ওঁরা কাউন্সিলরকেই শারীরিক ভাবে হেনস্থা করলেন।’’ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সেঁজুতিদেবীই।

কালীপুজো ও দেওয়ালির রাতে শব্দবাজি আটকাতে গিয়ে বাগুইআটি থানার পুলিশের কপালে জুটছিল বাঁশপেটা ও কিল-ঘুষি। আর বরাহনগরের কাউন্সিলরের প্রাপ্তি হয়েছে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও গলাধাক্কা। বুধবার সুবিমানবাবু বলেন, ‘‘খুব অবাক লাগছে। এত নিয়ম করা হয়েছে। আমরাও এত করে বোঝাচ্ছি। তাতেও এক শ্রেণির মানু‌ষের হেলদোল নেই। তাঁরা নিজেদের ইচ্ছেমতো শব্দবাজি ফাটিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে উল্টে চড়াও হচ্ছেন।’’

ওই কাউন্সিলর আরও জানান, ঘটনার রাতেই তাঁরা বরাহনগর থানায় অভিযোগ করেন। তার পাশাপাশি মোটরবাইকে চেপে দলবল নিয়ে থানায় হাজির হন কালীপ্রসাদবাবুরাও। পুরুষেরা বাইরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেও মহিলারা থানায় ঢুকে চেঁচামেচি শুরু করেন। তবে যে পাঁচটি বাইক নিয়ে অভিযুক্তেরা এসেছিলেন, তার কোনওটিরই নথি দেখাতে না পারায় এবং প্রত্যেক বাইক-আরোহী বিনা হেলমেটে থাকায় বাইকগুলি আটক করে পুলিশ। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘মহিলাদের এগিয়ে দিয়ে অশান্তি তৈরি করতে চেয়েছিলেন অভিযুক্তেরা। শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করায় কাউন্সিলরকে হেনস্থার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত হচ্ছে। কারও অন্যায় রেয়াত করা হবে না।’’

—নিজস্ব চিত্র।

firecracker councillor assault
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy