E-Paper

প্রোমোটারকে নিগ্রহে কোর্টে আত্মসমর্পণ সমরেশের, জানতে পারল না পুলিশ!

বিধাননগর পুরসভার পুরপ্রতিনিধি সমরেশ চক্রবর্তী দু’মাস নিখোঁজ থাকার পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়ে গেলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০
সমরেশ চক্রবর্তী।

সমরেশ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

বাগুইআটি থানার পুলিশ খুঁজে পেল না।

এক প্রোমোটারকে মারধরের অভিযোগে নাম জড়ানো, বিধাননগর পুরসভার পুরপ্রতিনিধি সমরেশ চক্রবর্তী দু’মাস নিখোঁজ থাকার পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়ে গেলেন। একই ভাবে তাঁর সঙ্গে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন ওই ঘটনায় নিখোঁজ থাকা আরও তিন জন। ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাগুইআটি থানার ভূমিকা। প্রহৃত প্রোমোটারের অভিযোগ, ‘‘সমরেশ বাড়িতেই ছিলেন। পুলিশ তাঁকে ইচ্ছে করে এত দিন গ্রেফতার করেনি। কারণ, সমরেশের মাথার উপরে প্রভাবশালীর হাত রয়েছে।’’

গত ১৫ ডিসেম্বর অর্জুনপুর এলাকার বাসিন্দা কিশোর হালদার নামে ওই প্রোমোটারকে দেখা গিয়েছিল, রক্তাক্ত শরীরে নিজের নির্মাণস্থলের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করতে।
কিশোর অভিযোগ করেছিলেন, নির্মাণকাজের জন্য স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সমরেশ তাঁর কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা তোলা চেয়েছিলেন। পুরো টাকা দিতে না পারায় ১৫ ডিসেম্বর সমরেশ তাঁর লোকজন দিয়ে কিশোরকে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। কিশোর অভিযোগে জানিয়েছিলেন, রিভলবারের বাট দিয়ে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।

তদন্তে নেমে বাগুইআটি থানার পুলিশ ঘটনার রাতেই দু’জনকে এবং পরে এক জনকে
গ্রেফতার করে। তিন জনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন। অভিযুক্ত সমরেশ-সহ আট জনের মধ্যে ওই তিন জন ছাড়া আর কাউকে খুঁজেই পায়নি পুলিশ। কিন্তু, শনিবার সমরেশ-সহ চার জন বারাসতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ চার্জশিটও জমা দিতে পারেনি বলে খবর।

বিধাননগর কমিশনারেটের এক পদস্থ আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘সমরেশকে থানায় হাজির হওয়ার কথা বলে তাঁর বাড়িতে নোটিস ঝোলানো হয়েছিল। ওই পুরপ্রতিনিধির খোঁজে উত্তরবঙ্গে তাঁর চিলাপাতার রিসর্টেও হানা দেওয়া হয়। কলকাতা এবং রাজ্যের বাইরেও বিভিন্ন সময়ে তাঁর খোঁজ চালানো হয়েছে। অস্ত্র আইন-সহ জামিন অযোগ্য ধারায় সবার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’’

উল্লেখ্য, বিধাননগর পুর এলাকার অধীন রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা এলাকার এক যুবনেতার অতি ঘনিষ্ঠ বলেই এলাকায় পরিচিতি রয়েছে সমরেশের। ওই ঘটনার পরে একটি ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) দেখা গিয়েছিল, সমরেশ সেই যুবনেতার নাম করে এক জনের সঙ্গে তোলা নিয়ে দর কষাকষি করছেন। কিশোর দাবি করেছিলেন, ভিডিয়োটি তাঁরই তৈরি করা।

কিশোরের আইনজীবী অলোক সমাজপতি বলেন, ‘‘জামিন পাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার।
তবে, ঘটনায় প্রশ্ন থেকে গিয়েছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। দু’মাস ধরেও পুরপ্রতিনিধি তো বটেই, অন্য কাউকেও খুঁজে পেল না পুলিশ, এটা সত্যিই আশ্চর্যের। আমরা এই জামিন বাতিলের আবেদন জানিয়ে জজ কোর্টে যাচ্ছি।’’

প্রহৃত প্রোমোটার কিশোর জানান, ঘটনাটি নিয়ে তাঁরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আইনি লড়াইয়ে নামবেন। কিন্তু তিনি ও তাঁর পরিবার আপাতত চিন্তিত নিরাপত্তা নিয়ে। কিশোর বলেন, ‘‘নিরাপত্তার জন্য আদালতের নির্দেশে ডেপুটি কমিশনারের দফতরে চিঠি লিখেছি। বাগুইআটি থানাতেও আদালতের নির্দেশের কথা জানিয়েছি। কেন আমার নিরাপত্তার প্রয়োজন, সেটা জানতে থানা থেকে মাত্র এক দিন ডেকে পাঠিয়েছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু হয়নি। ইতিমধ্যে সমরেশ জামিন পেয়ে গেলেন।’’

গোটা ঘটনা নিয়ে কথা বলতে এ দিন সমরেশকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Promoter Baguiati Police Station

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy