E-Paper

ছেলে হাজতে, খবর জানার পরেই ট্রেনের নীচে মৃত্যু দম্পতির

পুলিশ সূত্রের খবর, জগন্নাথ স্বাস্থ্য দফতরের অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। সেখানে গাড়ি চালাতেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে জয়ন্ত দাস ওরফে শুভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫ ০৯:০৩
জগন্নাথ দাস, মণিকা দাস।

জগন্নাথ দাস, মণিকা দাস। নিজস্ব চিত্র।

একমাত্র ছেলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার রেললাইন থেকে উদ্ধার হল তাঁর মা-বাবার মৃতদেহ। রেল পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের নাম জগন্নাথ দাস (৫২) ও মণিকা দাস (৪৮)। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা থানা এলাকার পশ্চিম প্রতাপগড়ে। এক তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করার অভিযোগে সে দিনই ওই দম্পতির ছেলেকে গ্রেফতার করেছিল মানিকতলা থানার পুলিশ। দম্পতির মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যা, না কি দুর্ঘটনা, তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, ঘটনাটি আত্মহত্যা বলেই অনুমান তদন্তকারীদের।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দম্পতি ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে তাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয় বারাসত রেল পুলিশ থানা এলাকার বিরাটি এবং দুর্গানগর স্টেশনের মাঝের ডাউন লাইন থেকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। জগন্নাথের এক ভাই ওই দু’জনের দেহ শনাক্ত করেন। প্রাথমিক তদন্তে রেল পুলিশ জেনেছে, ওই দম্পতি মঙ্গলবার রাতে দীর্ঘক্ষণ রেললাইনের ধারে ঘোরাঘুরি করেন। এমনকি, তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটিও হতে দেখেছেন স্থানীয় লোকজন। ঠাকুরনগর-শিয়ালদহ ডাউন লোকাল ধাক্কা মারে ওই দম্পতিকে। বারাসত রেল পুলিশ থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, জগন্নাথ স্বাস্থ্য দফতরের অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। সেখানে গাড়ি চালাতেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে জয়ন্ত দাস ওরফে শুভ। রেল পুলিশ জেনেছে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করার অভিযোগে মঙ্গলবার বিকেলেই জয়ন্তকে গ্রেফতার করে মানিকতলা থানার পুলিশ। বুধবার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক সব শুনে তাঁকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রের খবর, এক তরুণী অভিযোগে জানান, তাঁর সঙ্গে জয়ন্তের দীর্ঘদিন সম্পর্ক ছিল। এক সময়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লেও ওই যুবক বিয়ে করতে রাজি হননি। ওই তরুণী আগেও পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই সময়ে মধ্যস্থতা করা হয়েছিল। সম্প্রতি তরুণী ফের পুলিশের দ্বারস্থ হন। সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যে জয়ন্তের বিয়েও হয়ে যায়। এর পরেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। ছেলে গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাবা-মায়ের দেহ মেলে রেললাইনের ধারে। দু’টি ঘটনার মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে রেল পুলিশ জানিয়েছে।

পরিবার সূত্রের খবর, ছেলের গ্রেফতারের খবর জানার পরেই জগন্নাথ স্ত্রীকে ফোন করে ডেকে নেন। মণিকা দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এর পরে বাড়ির কেউ তাঁদের কোনও খবর পাননি। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ওই দম্পতিকে বিরাটি স্টেশনের কাছেই দুর্গানগর স্টেশনের দিকের ডাউন লাইনের ধারে দেখা গিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিয়ালদহগামী ডাউন ঠাকুরনগরের ট্রেন আসছে দেখে তাঁরা হাত ধরাধরি করে লাইনের উপরে দাঁড়িয়ে পড়েন। ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। যদিও এই তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Crime

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy