Advertisement
E-Paper

‘সময় নেই’ জেনেই কি চরম সিদ্ধান্ত

৯ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর। টানা ন’দিনের লড়াই শেষ হয়েছিল গঙ্গাবক্ষে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৬
সুজাতা বাজপেয়ী ও অভিষেক সাউ।

সুজাতা বাজপেয়ী ও অভিষেক সাউ।

৯ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর। টানা ন’দিনের লড়াই শেষ হয়েছিল গঙ্গাবক্ষে!

ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত সুজাতা বাজপেয়ী ওরফে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে এই ন’দিন অভিষেক সাউ শহরের একাধিক হাসপাতালে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ভালবাসার মানুষকে বাঁচাতে তাঁর শেষ গন্তব্য ছিল মুম্বইয়ের এক ক্যানসার হাসপাতাল। সেখান থেকেও নিরাশ হয়ে কলকাতায় ফিরতে হয় তাঁদের। জানিয়ে দেওয়া হয়, ক্যানসার শেষ পর্যায়ে। প্রিয়াঙ্কার ভাল হয়ে ওঠার আশা নেই। যে দিন মুম্বই থেকে ফেরেন, সেই ১৮ ডিসেম্বর বিকেলেই ওই যুগল গঙ্গায় ঝাঁপ দেন বলে পুলিশ জেনেছে।

এ দিকে মঙ্গলবারের ঘটনার পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও খোঁজ মেলেনি মল্লিকবাজারের ওই যুগলের। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গঙ্গাবক্ষে নতুন করে তল্লাশি চালায় পুলিশ। যুগলের ছবি-সহ বিভিন্ন থানাতেও খবর পাঠানো হয়েছে। এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, এ ধরনের ঘটনায় বহু ক্ষেত্রেই খোঁজ পেতে মাসের পর মাস পেরিয়ে যায়।

পরিবারের লোকজন অবশ্য বলছেন, ক্যানসার ধরা পড়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন সুজাতা। তাঁর মা অপর্ণাদেবী অভিযোগ করেছেন, ক্যানসার আক্রান্ত জেনেই স্ত্রী ও তাঁর তিন বছরের মেয়েকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সুজাতার স্বামী। তিনি জানিয়েছেন, সুজাতার সঙ্গে আর থাকতে পারছিলেন না তিনি। এ দিন অপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘আমার মেয়ে চাকরি করতে চেয়েছিল। তা-ও করতে পারেনি ক্যানসারের জন্যই।’’

অপর্ণাদেবী জানান, ২০১২ সালে বিমানসেবিকার কাজের জন্য পড়াশোনা করেন সুজাতা। ২০১৫ সালে পরীক্ষায় পাশও করেন। গত বছর কাজে যোগ দেওয়ার জন্য চিঠি আসে। যদিও কাজে যোগ দেওয়া হয়নি সুজাতার। তাঁর মায়ের কথায়, ‘‘ব্রেন ক্যানসারের কথা জানিয়ে সুজাতাকে বলে দিতে হয় কাজে যোগ দিতে পারবে না। তার পর থেকেই মন মরা হয়ে থাকত ও। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করাত। তাতে কী কাজ হয়?’’ মেয়ের পরীক্ষার শংসাপত্র হাতে কাঁদতে কাঁদতে এর পরে তিনি বলেন, ‘‘অনেক বুঝিয়েও ফেরাতে পারলাম না ওকে।’’ দিদাকে দেখে পাশে বসা সুজাতার তিন বছরের মেয়েও এর পরে কাঁদতে শুরু করে।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ছোটবেলার বন্ধু অভিষেকের সঙ্গে সম্প্রতি ফের মেলামেশা শুরু হয় সুজাতার। পুলিশকে ওই যুগলের বন্ধুরা জানিয়েছেন, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরে সুজাতা এবং তাঁর মায়ের থাকার ব্যবস্থা করে দেন অভিষেক। ক্যানসারের চিকিৎসা করানোরও আশ্বাস দেন। গত ৯ ডিসেম্বর সে জন্যই বাড়ি থেকে বেরোন যান দু’জন। প্রথম কয়েক দিন শহরের একাধিক হাসপাতালে ঘোরার পরে শেষে মুম্বইয়ের একটি ক্যানসার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। গত ১৩ ডিসেম্বর ট্রেনে হাওড়া থেকে রওনা দেন সুজাতারা। গত ১৮ ডিসেম্বর কলকাতায় ফিরে অভিষেকের সঙ্গে তাঁদের বাড়িতে ওঠেন সুজাতা। অভিষেকের এক বন্ধু বলেন, ‘‘অভিষেক অনেক চেষ্টা করছিল। কিন্তু সব হাসপাতালই বলেছিল, আর বেশি সময় নেই। হতাশায় মরে যাওয়ার কথা বলত সুজাতা। অভিষেকও আর সহ্য করতে পারেনি। তাই হয়তো একসঙ্গে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছে।’’

লঞ্চ থেকে গঙ্গায় তলিয়ে গেলেন সুজাতা-অভিষেক। পড়ে রইল কিছু প্রেসক্রিপশন এবং বাঁচার লড়াই!

Death Suicide Ganges Cancer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy