Advertisement
E-Paper

পুলিশ বসে দূরে, সঙ্গী আতঙ্ক

কালীঘাটের ওই জমি নিয়ে গোলমালের জেরে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জনা হালদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৩৩
অরক্ষিত: আদালতের নির্দেশই সার, ব্যবস্থা হয়নি কোনও রকম পাহারার। বৃহস্পতিবার, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

অরক্ষিত: আদালতের নির্দেশই সার, ব্যবস্থা হয়নি কোনও রকম পাহারার। বৃহস্পতিবার, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বিতর্কিত জমিটি যে অবস্থায় রয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তা সেই অবস্থাতেই থাকবে বলে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। গণ্ডগোল এড়াতে আগেই বিতর্কিত জমি ও গ্যারাজের জায়গায় পুলিশ পিকেট বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এ দিনও ওই জমি নিয়ে গোলমাল আটকাতে ও এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ পিকেট রাখতে বলে আদালত।

কিন্তু, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে এক জন পুলিশকর্মীরও দেখা মেলেনি। পুলিশ ছিল ঠিকই, তবে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০ ফুট দূরে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির নীচে। এ দিন সেখানে দেখা যায়, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট লাগোয়া গ্যারাজের গেট তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে। রাস্তার উল্টো দিকেই অজিতবাবুর পাঁচতলা ফ্ল্যাটবাড়ি। নীচে সাত জন পুলিশকর্মী চেয়ারে বসে পাখার হাওয়া খাচ্ছেন। এ দিন রাতে অবশ্য কালীঘাট থানা দাবি করে, কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।তবে অভিযোগকারিণী মহিলা তা অস্বীকার করেন।

কালীঘাটের ওই জমি নিয়ে গোলমালের জেরে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জনা হালদার। এ দিন সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি বাগচী স্থিতাবস্থা বজায় রাখার
নির্দেশ দেন। রঞ্জনার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ওই জমি নিয়ে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাদার গোলমাল চলছে।

এ দিন কোর্ট থেকে বাড়ি ফেরার পরে রঞ্জনাদেবী বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মতো গ্যারাজে পুলিশ পিকেট বসেনি। যাঁর বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ, তাঁর বাড়ির নীচেই পুলিশ বসে আছে। এটা থেকেই পুলিশের ভূমিকা কী, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।’’ হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে অজিতবাবুর বাড়ির পাশেই রঞ্জনাদেবী ও তাঁর ভাই দীপক হালদারের বাড়়ি। উল্টো দিকেই ওই বিতর্কিত জমি ও গ্যারাজ। গত ৩১ অগস্ট বিচারপতি বাগচী নির্দেশ দিয়েছিলেন, রঞ্জনাদেবী ও তাঁর ভাইয়ের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা থানার ওসি-কে নিশ্চিত করতে হবে।

অভিযোগ, আদালতের নির্দেশের পরেও গত ৭ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত পক্ষের লোকজন রঞ্জনাদেবীর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে ও তাঁর ভাইকে মারধর করে। তাঁদের বাড়ির দরজাও
ভেঙে দেওয়া হয়। তাই হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও স্বস্তিতে নেই রঞ্জনাদেবী ও তাঁর পরিবার। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে আছি। ওরা আমাদের এলাকাছাড়া করার হুমকি দিয়েছে আগেই। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও ফের যে আক্রমণ হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?’’ এ দিন ওই এলাকায় অজিতবাবুর বাড়ি গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। মোবাইলেও যোগাযোগ করা যায়নি। অজিতবাবুর বাড়ির নীচে পুলিশ মোতায়েন প্রসঙ্গে এ দিন রাত সওয়া আটটা নাগাদ কালীঘাট থানার ওসি শান্তনু সিংহ বিশ্বাস বলেন, ‘‘৮০এ ও ৮০বি হরিশ চ্যাটার্জি
স্ট্রিটে দু’টি বাড়ির সামনেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’’ যদিও ৮০বি বাড়ির মালিক রঞ্জনাদেবী রাতেই জানান, তাঁর বাড়ির সামনে কোনও পুলিশ নেই।

আগের শুনানিতে রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ওই জমি নিয়ে গোলমালের জেরে দু’পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে কালীঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তা শুনে বিচারপতি বাগচী কালীঘাট থানার পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে
বলেন, গোলমাল নিয়ে আদালতে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট দিতে হবে। এ দিন অমিতেশবাবু সেই রিপোর্ট পেশ করে জানান, পুলিশ দু’টি অভিযোগেরই তদন্ত করছে। বিচারপতি নির্দেশ দেন, পুলিশকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভাবে তদন্ত করতে হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে পুজোর ছুটি শেষে আদালত খোলার চার সপ্তাহ পরে।

Land Problems Kalighat Harish Chatterjee Street police কালীঘাট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy