Advertisement
E-Paper

গাফিলতির দায়ে ডাক্তারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ কোর্টের

অ্যানাস্থেটিস্ট আসেননি। তাই অর্থোপেডিক সার্জেনই ১১ বছরের তৃষ্ণাকে অজ্ঞান করার ওষুধ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই জ্ঞান আর ফেরেনি। অকালে মারা গিয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১০

অ্যানাস্থেটিস্ট আসেননি। তাই অর্থোপেডিক সার্জেনই ১১ বছরের তৃষ্ণাকে অজ্ঞান করার ওষুধ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই জ্ঞান আর ফেরেনি। অকালে মারা গিয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী।

২০১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর এই ঘটনা ঘটেছিল হাওড়ার বাকসাড়ায়। মৃত ছাত্রীর বাবা দেবদাস রায় ২০১৪ সালে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেছিলেন। বছর দুয়েক মামলা চলার পরে সম্প্রতি হাওড়ার ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ওই চিকিৎসককে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, মামলা চালানোর খরচ বাবদ মৃতার পরিবারকে আরও ২০ হাজার টাকা ও ক্রেতা-সুরক্ষা তহবিলে ৮০ হাজার টাকা-সহ মোট ২১ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের গোড়ার দিকে সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে বাঁ হাত ভেঙে গিয়েছিল দেবদাস রায় ও কৃষ্ণা রায়ের একমাত্র মেয়ে তৃষ্ণার। অস্ত্রোপচার করে সেই হাতে স্টিলের প্লেট লাগিয়ে দিয়েছিলেন অর্থোপেডিক চিকিৎসক শুভাশিস সাধুখাঁ। তাঁর নির্দেশেই হাত থেকে প্লেট বার করার জন্য ১৯ ডিসেম্বর ভোরবেলা ব্যাঁটরার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় তৃষ্ণাকে। অভিযোগ, ওটি-তে নিয়ে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক বাদে ওই চিকিৎসক তার বাবা-মাকে জানান, অজ্ঞান করার ওষুধ দেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তৃষ্ণা। আইসিইউ আছে, এমন কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে তাকে। কারণ, যে নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার হচ্ছিল, সেখানে আইসিইউ ছিল না। এর পরে ওই চিকিৎসকের উদ্যোগেই তৃষ্ণাকে মধ্য হাওড়ার অন্য এক নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছনোর কিছুক্ষণ পরেই চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এই ঘটনায় মৃতার পরিজনেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। চিকিৎসককে মারধর, বিক্ষোভ থেকে পথ অবরোধ— সবই হয়। মেয়েটির পরিবার ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ জানানো হয় হাওড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেও। তাঁর নির্দেশে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও জানানো হয়, অ্যানাস্থেটিস্ট না ডেকে ওই চিকিৎসক নিজেই অজ্ঞান করার জন্য ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন। তাতেই মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে ও পরে মারা যায়।

হাওড়ার ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতের আইনজীবী কমলকুমার সাউ বলেন, ‘‘আদালতে চিকিৎসকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, অজ্ঞান করার জন্য কোনও অ্যানাস্থেটিস্টকে কেন ডাকেননি তিনি? এ প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। এর পরেই আদালত ওই চিকিৎসককে দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়।’’

এ বিষয়ে ওই চিকিৎসকের কোনও বক্তব্য মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।

কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ঘটনার পরেও ওই চিকিৎসক এখনও চিকিৎসা করেন কী করে? মেডিক্যাল কাউন্সিল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন?

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজি বলেন, ‘‘কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল, খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে, ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত যেহেতু চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে, কাউন্সিল এ বার বিষয়টা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’

Doctor fined compensation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy