কোভিডে মৃতের সৎকার যাতে সম্মানজনক ভাবে হয়, তার জন্য সম্প্রতি নিয়মবিধি জারি করেছিল রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু তার পরেও একাধিক জায়গা থেকে অভিযোগ আসায় এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোভিড-দেহ পড়ে থাকার ঘটনার ভিত্তিতে ফের সংশোধিত নিয়মবিধি জারি করা হল প্রশাসনের তরফে। সেখানে শুধু সৎকারের সময়েই নয়, শববাহী গাড়িতে করোনা রোগীর দেহ তোলার ক্ষেত্রে মর্যাদা বজায় রাখার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে— শববাহী গাড়িতে দেহ তোলা ও নামানোর পদ্ধতিতে যেন পূর্ণ সম্মান বজায় থাকে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এক বার এ বিষয়ে নিয়মবিধি জারি করা সত্ত্বেও কেন ফের তা করতে হল? এর উত্তরে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রথম বার নিয়মবিধি জারি হলেও অনেক ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না, এমন বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তা ছাড়া, কোভিডে মৃতের সৎকারে প্রাপ্য সম্মান না থাকার প্রবণতা শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সারা দেশের ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যাবৃদ্ধি যেমন রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয় সরকারকেই উদ্বেগে রেখেছে, তেমনই কোভিডে মৃতের সৎকার যথাযথ ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানাচ্ছেন, বহু জায়গায় শববাহী গাড়িতে দেহ তোলা এবং নামানোর ঘটনা এমন ভাবে হচ্ছে, যেখানে মৃতের সম্মানহানি হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘মৃতের অসম্মান হবে, এমন কোনও কিছুর সঙ্গে আপস করা হবে না।’’
সে কারণে নতুন নির্দেশে ফের জোর দেওয়া হয়েছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু থেকে দাহ বা কবর দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে মর্যাদা বজায় রাখার জন্য। (‘দ্য ক্রিমেশন/বেরিয়াল অব দ্য ডিসিজ়ড ডিউ টু কোভিড-১৯ ইজ টু বি ক্যারেড আউট ইন আ ডিগনিফায়েড অ্যান্ড গ্রেসফুল ম্যানার অ্যাট অল প্লেসেস’।) আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দ্বিতীয় বারের নিয়মবিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তা হল—বৈদ্যুতিক চুল্লি নেই, এমন পুর এলাকাকে প্রশাসনের তরফে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং সেই এলাকাগুলিকে যুক্ত করা হয়েছে এমন পুরসভার সঙ্গে যেখানে বৈদ্যুতিক চুল্লি রয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এ-ও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট শ্মশান বা কবরস্থানে যদি অত্যধিক মৃতদেহের চাপ থাকে, তা হলে কোথায় সৎকার-পর্ব অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক। এ ব্যাপারে তাঁকে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পুরসভা ও পুর নিগমকে একটি নির্দিষ্ট সেল তৈরির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সেই সেলের তরফেই মৃতদেহ সৎকার হওয়া পর্যন্ত মৃতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সৎকারের সময়, তারিখ— সেলের তরফেই পরিবারকে বলে দেওয়া হবে।’’
কিন্তু এত কিছুর পরেও করোনায় আক্রান্ত মৃতেরা যে শুধু সংখ্যা নন, বরং তাঁরা কোনও না কোনও পরিবারের প্রিয়জন, সৎকার প্রক্রিয়ার সময়ে তা নিশ্চিত করা যাবে কি? সেই প্রশ্ন থাকছেই। যে প্রশ্নকে আরও উস্কে দিয়েছে কোভিডে মৃতের সৎকার প্রসঙ্গে সম্প্রতি তেলঙ্গানা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ— ‘ইভেন ইন ডেথ, হিউম্যান বডিজ আর নট বিয়িং ট্রিটেড উইথ দ্য ডিগনিটি দে ডিজ়ার্ভ’! অর্থাৎ, মৃত্যুর পরেও মৃতদেহ উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছে না। ফলে সংশয় থাকছেই।