Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

মেট্রোর ধাক্কা! বৌবাজারে ফাটল-ধস ১৮ বাড়িতে, ঘরছাড়া ২৮৪

রবিবার রাত পর্যন্ত ১৮টি বাড়ি থেকে আতঙ্কিত ২৮৪ জন বাসিন্দাকে বিভিন্ন হোটেলে সরিয়ে দিতে হয়েছে বলে জানান কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

ভেঙে পড়ছে বাড়ির ভিতরের অংশ। রবিবার বৌবাজারে। —নিজস্ব চিত্র

ভেঙে পড়ছে বাড়ির ভিতরের অংশ। রবিবার বৌবাজারে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০৬
Share: Save:

শনি-সন্ধ্যায় একের পর এক বাড়িতে ফাটল শুরু হয়েছিল। গভীর রাতে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনের সেই বাড়িগুলিই ভেঙে পড়তে শুরু করে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরেই এই বিপর্যয়।

রবিবার রাত পর্যন্ত ১৮টি বাড়ি থেকে আতঙ্কিত ২৮৪ জন বাসিন্দাকে বিভিন্ন হোটেলে সরিয়ে দিতে হয়েছে বলে জানান কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরো ধসেছে চারটি বাড়ি। ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আরও অন্তত ১৪টি। ঘটনাস্থলেই খোলা হয়েছে স্পেশ্যাল কন্ট্রোল রুম (নম্বর: ৯৪৩২৬১০৪৭২)। কাল, মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, মাটির নীচে মেট্রোর কাজ করার আগে ভাল ভাবে সমীক্ষা করা হল না কেন? সতর্ক না-করে কেনই বা এই কাজের ঝুঁকি নিল মেট্রো? তা হলে কি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত সুড়ঙ্গের প্ল্যানে কোনও গলদ থেকে গিয়েছে?

ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের মুখোমুখি মেয়র। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

প্ল্যানে গলদ ছিল না বলে জানান কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানস সরকার। তাঁর দাবি, মেট্রোর কাজের জন্য আগে যে-ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা প্রয়োজন, সবই হয়েছিল যথাযথ ভাবে। ভারতে মেট্রোর ইতিহাসে এটি ‘বিরলতম’ ঘটনা। তবে তিনি স্বীকার করেন, এমনটা যে ঘটতে পারে, এই প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারেরা তা আন্দাজই করতে পারেননি। ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, ‘‘সাধারণত ভূগর্ভে বোরিংয়ের কাজ করার সময় জল উঠতে থাকে। সিমেন্ট ও রাসায়নিক দিয়ে তা রুখে দেওয়া হয়। কিন্তু শনিবার দেখা যায়, কোনও ভাবেই সেই জল বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরং হুহু করে আরও জল ঢুকতে থাকে সুড়ঙ্গে। তার জেরেই এই বিপত্তি।’’ রবিবার রাতেও জলস্রোত ঠেকানো যায়নি। মেট্রো-কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, জল রুখতে না-পারলে আরও বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য, জল বন্ধ করা।

দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মেয়র। দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেন পরিদর্শন করেই তিনি কলকাতা মেট্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার একে নন্দী, এমডি মানসবাবু, চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বনাথ দেওয়ানজি, পুর কমিশনার খলিল আহমেদ ছাড়াও পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে মেয়র বলেন, ‘‘যাঁদের সরানো হয়েছে, আপাতত চার-পাঁচ দিন তাঁদের হোটেলে রাখা হবে। এর মধ্যে কেএমআরসিএল-এর বিশেষজ্ঞেরা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি পরীক্ষা করবেন। যদি দেখা যায়, বাড়িগুলি রাখা যাবে, তা হলে মেট্রো-কর্তৃপক্ষ সেগুলি সারিয়ে বা পুনর্নির্মাণ করে দেবেন।’’ বাড়ি সারানো বা পুনর্নির্মাণ পর্বে সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের হোটেল থেকে সরিয়ে ফ্ল্যাটে রাখার বন্দোবস্ত করা হবে। আর বিশেষজ্ঞেরা যদি মনে করেন যে, বাড়িগুলি রাখা নিরাপদ নয়, তা হলে সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। তার জন্য জায়গা বরাদ্দ করবে পুরসভা।

শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে চোখের সামনে পরের পর বাড়িতে ফাটল ধরতে এবং পরে ভেঙে পড়তে দেখে বাসিন্দারা আতঙ্কিত। গভীর রাতে অনেককে বিভিন্ন হোটেলে ঠাঁই দেওয়া হলেও রবিবার দুপুরের পরে দেখা যায়, দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেন ছাড়াও অন্যান্য গলির বাসিন্দারা আতঙ্কিত। অনেকের বাড়ির দেওয়ালে ছোটখাটো ফাটল ধরেছে। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং পুরসভার লোকজনকে সারা রাত টহল দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনও গলির কেউ সামান্য কম্পন অনুভব করলেই সেখানকার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বার করে এনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE