শুভময় পাল
দুর্গম পথে মোটরবাইক চালানো ছিল তাঁর নেশা। তার জেরে একাধিক বার শরীরে আঘাতও পেয়েছেন। কিন্তু তাতে গুরুত্ব দেননি কখনও। প্রতি বারই দুর্গম অভিযান সেরে ফেরার পরে হাড় ভাঙার বিষয়টা তাঁর কাছে যতটা সহজ ছিল, ততটাই ছিল তাঁর পরিবারের কাছেও। তাই দশমীর সকালে যখন প্রথম ফোনটা এসেছিল, স্ত্রী ভেবেছিলেন হয়তো এ বারও তেমন কিছু ঘটেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ফোনটাই তাঁর সব ধারণা ভেঙে দেয়। তিনি জানতে পারেন, এ বার হাড় ভেঙে নয়, দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁর স্বামী, পেশায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শুভময় পাল (৪৭)।
চতুর্থীর দিন কলকাতা থেকে মানালির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন লেকটাউনের বরাট কলোনির বাসিন্দা শুভময়বাবু। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়োজিত ওই মোটরবাইক র্যালির যাত্রাপথ ছিল মানালি থেকে শুরু করে লেহ্, লাদাখের বিভিন্ন বিপদসঙ্কুল পথ ঘুরে ফের মানালি ফেরা। এ বারের মানালি-যাত্রা ছিল দুর্গম পথে শুভময়বাবুর সপ্তম অভিযান।
শুভময়বাবুর পরিবার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার মানালি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। কিন্তু কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তা সঠিক ভাবে জানেন না পরিবারের সদস্যেরা। তাঁরা শুধু শুনেছেন, বরফ জমা রাস্তায় চাকা পিছলে একটি পাথরে গিয়ে ধাক্কা মারে শুভময়বাবুর বাইকটি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বরাট কলোনির ফ্ল্যাটে বসে শুভময়বাবুর স্ত্রী লুসাই দাসপাল বলেন, ‘‘ও যে এ ভাবে চলে যাবে, কখনও ভাবিনি। দুর্ঘটনার ফোন পাওয়ার পরে ভাবলাম বোধহয় আবার হাড় ভেঙেছে। ভেবেছিলাম, বাড়ি ফিরলে মজা করে জানতে চাইব যে এ বার কোন হাড় ভাঙলে। কিন্তু তার পরেই আবার ফোন করে জানানো হল, ও মারা গিয়েছে।’’
আকস্মিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ শুভময়বাবুর পরিবারের লোকজন। একে অন্যকে সামলাতে প্রকাশ্যে কেউই কান্নাকাটি করছেন না। শুভময়বাবুর ছ’বছরের মেয়ে সৌর্য্যানী বুধবারই জেনেছে, বাবা আর কোনও দিন ফিরবে না। তবে সে বাড়ির সকলকে জানিয়েছে, মায়ের কথা ভেবে সে কাঁদবে না। শুভময়বাবুর ছেলেবেলার বন্ধু জ্যোতিপ্রকাশ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘ও বাইক চালাতে ভালোবাসত। আমরা যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি, তখন থেকে ওকে দেখছি। খুব দ্রুত গতিতে বাইক চালাত। এমনও হয়েছে, শুধু বাইক চালানোর নেশায় নিজের বাইকে চাপিয়ে কাউকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে।’’ বৃহস্পতিবার বিকেলে মানালি থেকে শুভময়বাবুর দেহ বিমানে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় রতনবাবুর ঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy