Advertisement
E-Paper

‘বিদ্যুৎ নেই, সাত দিন ধরে খুঁটি উপড়ে রয়েছে, সিইএসসি বলল এখন পারবে না!’

শুধু গড়িয়ার আবাসনেই নয়, আমপানের তাণ্ডবে কলকাতার নানা প্রান্তেই করুণ অবস্থা।

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ১৯:৫৪
গত বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এক সপ্তাহ ধরে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছেন চিকিৎসক সুকান্ত দাস।

গত বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এক সপ্তাহ ধরে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছেন চিকিৎসক সুকান্ত দাস।

দুপুর থেকে প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় তোলপাড় হচ্ছিল। মড়মড় করে ভাঙতে শুরু করে গাছের ডালপালাও। সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। একটু রাতের দিকে আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন)-এর তাণ্ডবে বাড়ির বাইরের বিদ্যুতের খুঁটি সেই যে দেহ রাখল, তাকে তোলার লোক এল না এক সপ্তাহ পরেও। নিউ গড়িয়া সমবায় আবাসনের বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক সুকান্ত দাস গত বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এক সপ্তাহ ধরে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছেন। জলের জন্য হাহাকার করতে হয়েছে বছর প্রবীণ এই চিকিৎসককে।

সুকান্তবাবুর কথায়: “বাড়ির সামনে বিদ্যুতের খুঁটি উল্টেছে সাত দিন হয়ে গেল। সিইএসসি-র এক ইঞ্জিনিয়ার দেখেও গিয়েছেন। কিন্তু ওই খুঁটি সারিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের কোনও উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। সিইএসসি-র লোক বলে গেলেন, এখন পারব না।” কবে যে এই অন্ধকারময় জীবন থেকে মুক্তি মিলবে, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন সুকান্তবাবু। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত ছিলেন সুকান্তবাবু। কর্মসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, “এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। জল নেই, আলো নেই। এই ঝড়ের তাণ্ডবের পর যন্ত্রণায় জেরবার হয়ে গিয়েছি। যাঁদের বিদ্যুৎ এসেছে, তাঁদের থেকে ব্যবস্থা করে জলটুকু তোলার এখন ব্যবস্থা হয়েছে।”

প্রায় সাড়ে পাঁচশো পরিবারের বাস গড়িয়ার ওই আবাসনে। ঝড়ের তাণ্ডবের পর দিন পাঁচেক অপেক্ষা করতে হয়েছে বহু পরিবারকেই। নিউ গড়িয়া সমবায় আবাসনের সম্পাদক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একাংশে বিদ্যুৎ এসেছে ঠিকই, কিন্তু অনেক বাড়িতে কবে বিদ্যুৎ আসবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। যে খুঁটিগুলি পড়ে গিয়েছে, তা তোলার কোনও উদ্যোগ সিইএসসি-র তরফে দেখা যায়নি। ই-মেল করেও কর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।”

আরও পড়ুন: কলকাতায় বাস বাড়ল, চালু অটো, রাজ্য জুড়ে আন্তঃজেলা বাস পরিষেবাও শুরু

আরও পড়ুন: ডাঙা ডুবেই, জোয়ারে এখনও এক মানুষ জল কোথাও কোথাও

আরও পড়ুন: এখনও জলে ডুবে হিঙ্গলগঞ্জ-সন্দেশখালি-হাসনাবাদ, কবে ফিরবে আগের জীবন?

আমপানের দাপটে উল্টে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।

ওই আবাসনে চত্বরেই থাকেন প্রাক্তন ব্যাঙ্ক অফিসার অজিতকৃষ্ণ রায়। তিনি বলেন, “আমার ছেলে কর্মসূত্রে হায়দরাবাদে থাকে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে-ও বাইরে থাকে। আমাদের বয়স হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহ ধরে অন্ধকারে রয়েছি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সিইএসসি কবে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে?”

শুধু গড়িয়ার ওই আবাসনেই নয়, কলকাতার নানা প্রান্ত এমনই করুণ অবস্থা। সিইএসসি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ৩৩ লক্ষ ৭০ হাজার গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। বাকি ৩০ হাজার গ্রাহকের বাড়িতে দ্রুত বিদ্যুতের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। বুধবারও বেহালার সরশুনাতেও বিদ্যুৎ আসেনি। এই সুযোগে ওই সব অঞ্চলে এখনও চড়া দাম দিয়ে পাম্পের সাহায্যে জল তুলতে হচ্ছে। টালিগঞ্জ, যাদবপুর, গড়িয়া, বাঘাযতীনের কিছু কিছু এলাকায় একই অবস্থা। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে, এক দিকে যেমন জলের সমস্যা হচ্ছে, তেমনই গৃহস্থের অনেক কাজও হচ্ছে না। অভিযোগ উঠছে, যে সমস্ত জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে সিইএসসি-র কর্মীদের তরফে সেখানে অনুরোধ করা হচ্ছে, এখনই সব কিছু চালানো যাবে না। ফ্রিজ, এসি বন্ধ রেখে আপাতত পাখা, একটি করে লাইট জ্বালাতে বলা হচ্ছে।

—নিজস্ব চিত্র।

Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy