অসতর্ক: বালিগঞ্জে এ ভাবেই চলছে যাত্রীদের অবাধে লাইন পারাপার। —নিজস্ব চিত্র।
সিঁড়ি ভেঙে উড়ালপুল পেরোনো কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ। এই অজুহাতেই যাত্রীরা নিয়মিত রেললাইন দিয়ে পারাপার করেন। তাঁদের যুক্তি, স্টেশনে সাবওয়ে নেই, চলমান সিঁড়ি নেই। ও সব থাকলে কে ঝুঁকি নিয়ে লাইন পেরোয়? কিন্তু সে সব থাকলেও দেখা যাচ্ছে, ছবিটা বদলাচ্ছে না। অন্তত বালিগঞ্জ স্টেশনের রেললাইন পারাপারের চিত্র তাই বলছে।
অসমর্থ এবং প্রবীণ যাত্রীদের জন্য দেশ জুড়ে বিভিন্ন স্টেশনে চলমান সিঁড়ি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেল। সেই প্রকল্পেই বছর খানেক আগে বালিগঞ্জ স্টেশনেও চলমান সিঁড়ি বসানো হয়। কিন্তু তাতেও ঠেকানো যাচ্ছে না রেললাইন পারাপার। চলমান সিঁড়ি থাকা সত্ত্বেও অন্য স্টেশনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই বালিগঞ্জে রেললাইন দিয়েই এ পার –ও পার করছেন যাত্রীরা। স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে ফিরছিলেন অর্চনা মল্লিক। ছেলেকে নিয়ে রেললাইন পেরোচ্ছেন? প্রশ্ন শুনে অর্চনাদেবীর সলজ্জ মন্তব্য, ‘‘আসলে রেললাইন দিয়ে হাঁটলে তাড়াতাড়ি হয়।’’ অন্য এক যাত্রী অবশ্য দুষছেন চলমান সিঁড়ির দূরত্বকে। যাত্রী মনিরুল ইসমালের বক্তব্য, ‘‘আপ-ডাউন ট্রেনের অধিকাংশ চলে এক আর দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে। অথচ চলমান সিঁড়িটি এমন জায়গায় করা হল, যেখানে যাত্রীদের খুব একটা কাজেই লাগবে না।’’ মানতে নারাজ রেল কর্তারা। এক আধিকারিকের মতে, ‘‘এর পরে তো তা হলে রেলকে একটা প্ল্যাটফর্মে একাধিক চলমান সিঁড়ি রাখতে হবে!’’
রেললাইন পারাপার এবং কানে হেডফোন নিয়ে লাইন পারাপার, দুটোই রেলের আইনে অবৈধ। এ নিয়ে মাইকে নিয়মিত ঘোষণাও করা হয়। ধরা পড়লে আইন মোতাবেক পাঁচশো টাকা জরিমানা হওয়ার কথা। অনাদায়ে অপরাধীকে ছ’মাস জেল খাটতে হবে। কিন্তু সেই আইন রয়েছে আইনেই, বলছেন যাত্রীদের একাংশ। কার্যক্ষেত্রে তার প্রয়োগ কতটা? অনবরত আইন ভাঙার প্রবণতা সেই প্রশ্নও তুলছে।
গত সাত বছর ধরে ব্যারাকপুর থেকে দমদমের নিত্যযাত্রী স্নেহাংশু কর বলছেন, ‘‘লাইন পারাপার করার জন্য জরিমানা দিতে তো কাউকে দেখিনি। টিকিট না কাটার জন্য ধরা পড়লে জরিমানা দিতে দেখেছি, তা না দিলে ধরে নিয়ে যেতেও দেখেছি।’’ তবে দমদমে সেই প্রবণতাটা তুলনায় কম। কারণ সাবওয়ে রয়েছে এবং
তার অনেকগুলো মুখ রয়েছে। কিন্তু ঝুঁকির এই পারাপারে প্রায় প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে এবং মৃতের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তবুও টনক নড়ছে না মানুষের।
এ সবের মধ্যেও আশাবাদী পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নিয়মিত মাইকে ঘোষণা, গণমাধ্যমে প্রচার, আধুনিক পরিষেবা দেওয়া— রেল এ সব কিছুই করছে। তবুও লাইন পারাপারের প্রবণতা বন্ধ করা যায়নি। তবে কিছু যাত্রী চলমান সিঁড়ি ব্যবহার করছেন। ধীরে ধীরে মানুষের অভ্যাস বদলাবে, আশা রাখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy