প্রতীকী ছবি
এক সপ্তাহের ব্যবধানে পানিহাটিতে গঙ্গার গিরিবালা ঘাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল দু’টি মৃতদেহ। মৃত দু’জনেরই বয়স ছিল ৪০-এর আশপাশে। দু’জনের শরীরেই আঘাতের চিহ্ন ছিল। কে বা কারা ওই খুন করল, তা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে ধন্দে পড়েছিলেন তদন্তকারীরা। শেষে দ্বিতীয় দেহটি উদ্ধার হওয়ার পরে সেটির সূত্র ধরেই রবিবার রাতে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে খড়দহ থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ নিশ্চিত, দু’টি খুনেই জড়িত রয়েছে বিপ্লব দাস নামে ওই যুবক।
ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ব্যক্তিকে যে বিপ্লবই খুন করেছে, সে বিষয়ে আমরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। প্রথমটির ক্ষেত্রেও ওই যুবকই জড়িত বলে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কেন সে দু’জনকে খুন করল, তা স্পষ্ট নয়। ধৃতের কথাতেও অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’’ সোমবার বিপ্লবকে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১৯ ডিসেম্বর পানিহাটির গিরিবালা ঘাট থেকে উদ্ধার হয় মধ্যমগ্রামের গঙ্গানগরের বাসিন্দা শেখর পালের দেহ। তিনি দু’দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। সাঁতার জানা সত্ত্বেও শেখরবাবু কী ভাবে জলে ডুবে গেলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিজনেরা। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলাকালীনই গত ২৬ ডিসেম্বর ফের ওই ঘাট থেকেই উদ্ধার হয় শিবনাথ দাস নামে এক চটকল-কর্মীর দেহ। তিনি ২৪ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, গঙ্গার পাড়ের ওই জায়গায় মাটির মধ্যে দেহের কিছুটা অংশ পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জোয়ারের জল আসতেই মাটি আলগা হয়ে দেহটি বেরিয়ে এসে ভাসতে থাকে। তখনই তা চোখে পড়ে স্থানীয়দের।
জানা গিয়েছে, গিরিবালা ঘাটের কাছেই থাকতেন শিবনাথ। তাঁর বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকে বিপ্লব। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, শিবনাথ যে সময়ে গঙ্গার ঘাটে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে বিপ্লবও একই দিকে গিয়েছিল। এর পরেই বিপ্লবকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। জেরায় শিবনাথকে খুনের কথা স্বীকার করে সে।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় বিপ্লব জানিয়েছে, গঙ্গার ঘাটে শিবনাথকে একটি ব্যাগ নিয়ে পায়চারি করতে দেখেছিল সে। ক’টা বাজে, সে জানতে চায় তাঁর কাছে। এর পরেই কোনও একটি বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। বিপ্লব স্বীকার করেছে, তার পরেই সে শিবনাথের মাথা গঙ্গার ঘাটের দেওয়ালে বার বার ঠুকে তাঁকে খুন করে। পরে দেহটি টেনে সিঁড়ির নীচে নিয়ে গিয়ে চড়ায় ফেলে তার উপরে পলি চাপা দিয়ে দেয়।
সূত্রের খবর, শেখরকেও ওই যুবকই খুন করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বিপ্লব নেশা করে। তার মানসিক বিকারও রয়েছে। নেশামুক্তি কেন্দ্রেও সে বেশ কিছু দিন ছিল। কিন্তু নেশার টাকা জোগাড় করতেই সে দু’জনকে খুন করেছে, না কি এর নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে, সে সব খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy