Advertisement
০১ মে ২০২৪

বহুতল বিপণিতে যুবকের অপমৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা

আলোয় ঝলমলে বিরাট বিপণিতে তখন কেনাকাটার ব্যস্ততা। তারই মধ্যে গাড়ি রাখার জায়গায় পাওয়া গেল এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ। বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ওই ঘটনাকে ঘিরে দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি মলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মলের পার্কিং এলাকায় প্রথমে দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন নিরাপত্তাকর্মীরা।

গাড়ি রাখার এই জায়গাতেই পড়ে ছিল যুবকের দেহ। বুধবার সাউথ সিটি মলে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

গাড়ি রাখার এই জায়গাতেই পড়ে ছিল যুবকের দেহ। বুধবার সাউথ সিটি মলে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:০০
Share: Save:

আলোয় ঝলমলে বিরাট বিপণিতে তখন কেনাকাটার ব্যস্ততা। তারই মধ্যে গাড়ি রাখার জায়গায় পাওয়া গেল এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ। বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ওই ঘটনাকে ঘিরে দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি মলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

মলের পার্কিং এলাকায় প্রথমে দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন নিরাপত্তাকর্মীরা। তাঁরাই তড়িঘড়ি খবর দেন যাদবপুর থানায়। পুলিশ এসে ওই যুবককে এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম অর্কপ্রভ দে (২৫)। তিনি আলিপুরের বাসিন্দা। পড়ে গিয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। তবে ঠিক কী ভাবে এবং কোন তলা ওই যুবক পড়ে গেলেন, গভীর রাত পর্যন্ত তা জানা যায়নি। এটা আত্মহত্যা না অন্য কিছু, তারও মীমাংসা হয়নি। এই অপমৃত্যুকে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে।

ঠিক কী ঘটেছিল?

নিরাপত্তাকর্মীরা পুলিশকে জানান, মলে বেচাকেনার তুঙ্গ ব্যস্ততার মধ্যে লাগোয়া বহুতল পার্কিংয়ের নীচে আচমকাই ভারী কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে তাঁরা ছুটে যান। দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন এক যুবক। তিনি কী ভাবে ওখানে পৌঁছলেন, প্রথম রহস্য সেটাই। কারণ, মলের কর্মী ছাড়া তাঁরাই ওখানে যেতে পারেন, যাঁরা গাড়ি রাখতে চান বা কাজ সেরে নিজের গাড়ি ফিরিয়ে নিতে চান। পুলিশ জেনেছে, ওই যুবক মলের কর্মী ছিলেন না। গাড়ি রাখতে বা নিতেও যাননি। তাই প্রশ্ন উঠছে, তিনি পার্কিং এলাকায় পৌঁছলেন কী ভাবে?

পুলিশ জানাচ্ছে, রক্ষীদের চোখ এড়িয়ে ওই এলাকায় একেবারেই যে পৌঁছনো যায় না, তা নয়। তক্কে তক্কে থেকে কেউ ইচ্ছে করলে সেটা করতেই পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক নীচের তলায় রক্ষীর নজর এড়িয়ে গাড়ি রাখার জায়গায় পৌঁছে যাওয়া নয় বলেই তাদের সন্দেহ। মলের উপরের কোনও তলা থেকে পড়েই মৃত্যু ঘটেছে যুবকের। প্রশ্ন, কোন তলা থেকে তিনি পড়লেন আর কী ভাবে পড়ে গেলেন?

পুলিশি সূত্রের খবর, সিসিটিভি-র ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, উপর থেকে কেউ পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ক্যামেরার অস্পষ্টতার জন্য বোঝা যাচ্ছে না, কোন তলা থেকে তিনি পড়ছেন, কী ভাবেই বা পড়ছেন। বহুতল বিপণির প্রতিটি তলায় এবং পার্কিং যথেষ্ট সংখ্যায় নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন থাকেন। অর্কপ্রভ তাঁদের নজর এড়িয়ে কী ভাবে পড়ে গেলেন, প্রশ্ন সেটাও। গাড়ি ছাড়া পার্কিংয়ের ওই এলাকায় কার্যত ঢোকাই যায় না। তা হলে কি গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন অর্কপ্রভ? কারও সঙ্গে এসেছিলেন? হাজারো প্রশ্ন উঠে এলেও সাউথ সিটি মল কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে চাননি।

পারিবারিক সূত্র জানাচ্ছে, অ্যানিমেশন নিয়ে পড়াশোনা করার পরে চাকরি সূত্রে অর্কপ্রভ থাকতেন চেন্নাইয়ে। মাসখানেক আগে চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন তিনি। তাঁর যম়জ ভাই ঋতপ্রভ দে জানান, অর্কপ্রভ সাধারণত একা কোথাও যেতেন না। এ দিন এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন। বেরোনোর আগে ওই বন্ধুকে ফোনও করেন। ভাইয়ের মৃত্যু ‘স্বাভাবিক ঘটনা নয়’ বলে মন্তব্য করেন ঋতপ্রভ। পরিবারের দাবি, অর্কপ্রভের মধ্যে কখনও কোনও অবসাদও লক্ষ করা যায়নি।
তাই এই অপমৃত্যু তাঁদের কাছে রহস্যময় ঠেকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE