বুকভাঙা: খবর পাওয়ার পরে নুরের (ইনসেটে) মা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
আর পাঁচ দিনের মতোই বিকেলে বন্ধুর সঙ্গে খেলতে বেরিয়েছিল বছর আটেকের শিশুটি। রাস্তার পাশে খেলতে খেলতেই হাত লেগে গিয়েছিল একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে। তাতেই মৃত্যু হল তার। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছে ছ’বছরের একটি মেয়ে। রবিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ গার্ডেনরিচ থানা এলাকার ধানখেতির ঘটনা।
পুলিশ জানায়, মৃত শিশুর নাম নুর হাসান খান (৮)। বাড়ি জে, ১২৩ রামনগর লেনে। সে স্থানীয় একটি উর্দু মাধ্যম স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। আহত শমা পরভিনও স্থানীয় বাসিন্দা। তাকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছে়ড়ে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, খেলতে খেলতেই নুরের হাত তারে লেগে যায়। এর পরে নুরের থেকেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় শমাও।
এ দিন রামনগর লেনে মৃত শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মেঝেতে শোয়ানো একরত্তি ছেলেটির দেহ। পাশে বসে পরিজনেরা। পড়শিরা জানান, নুরের দুই দিদি এবং এক বোন রয়েছে।
শিশুমৃত্যুর খবর ছড়াতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গার্ডেনরিচ এলাকা। স্থানীয়দের একাংশ ক্ষতিপূরণের দাবিতে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ গার্ডেনরিচের কাচ্চি সড়ক মোড় অবরোধ করেন। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
এই ঘটনার পরেই ফের সামনে এসেছে বন্দর এলাকার হুকিং ও বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এবং পুরকর্তাদের অনেকেই বলছেন, ওই এলাকায় বিদ্যুৎ চুরি বেড়েই চলেছে। হুকিংয়ের ঝুলে থাকা তার থেকেই এই বিপত্তি ঘটেছে। সইফ খান নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘হুকিং যারা করে, তাদের কিছুই বলা হয় না।’’ তবে স্থানীয় আর একটি সূত্রের দাবি, একটি ভাঙা বিদ্যুতের খুঁটিই দুর্ঘটনার কারণ।
কলকাতা পুরসভার দাবি, তাদের বিদ্যুতের তার বা খুঁটি থেকে কিছু হয়নি। পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই এলাকায় প্রায়ই বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ চুরি করা হয়। ফলে যেখান-সেখান থেকে তার বেরিয়ে অনেক সময়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে বলে পুর প্রশাসনের একাংশের অনুমান। পুর বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ক্রমাগত বিদ্যুৎ চুরি হয় ওখানে। বারবার আমরা সতর্ক করেছি। তাও আটকানো যায়নি।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর তথা ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল বলেন, ‘‘ওখানে বিদ্যুতের পোস্টে কোনও গোলমাল হয়েছিল। কিছু তার বেরিয়েছিল। তাতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ প্রসঙ্গত, এর আগেও একাধিক বার ওই এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। তা নিয়ে পুরসভার তরফে বিশেষ প্রচারও চালানো হয়েছিল। তার পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মেয়র পারিষদ (আলো) মনজর ইকবাল বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। পুরসভার পোস্ট বা তার থেকে ঘটনাটি ঘটেনি। তবে পুরসভার তরফে একটি অন্তর্বর্তী তদন্ত করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy