Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ম্যাডক্স-কাণ্ড

ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু ঘিরে বাড়ছে ধন্দ, অসঙ্গতিও

মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা করা হয়েছিল রমিত মণ্ডলকে। শুক্রবার রাতে সোনারপুরের বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ওই যুবকের রহস্য-মৃত্যুর পরে বুধবার এমনই ইঙ্গিত মিলেছে ময়না-তদন্তের রিপোর্টে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৫:৫২
Share: Save:

মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা করা হয়েছিল রমিত মণ্ডলকে। শুক্রবার রাতে সোনারপুরের বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ওই যুবকের রহস্য-মৃত্যুর পরে বুধবার এমনই ইঙ্গিত মিলেছে ময়না-তদন্তের রিপোর্টে। আরও বলা হয়েছে— ধারালো নয়, আঘাত করা হয়েছিল ভোঁতা অস্ত্র দিয়েই। যে কারণে তাঁর মাথার একটা বড় অংশ থেঁতলে যায়, প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তার জেরেই মৃত্যু হয় রমিতের। এর পাশাপাশি রিপোর্ট বলছে, ঘটনার সময়ে মত্ত অবস্থায় ছিলেন ওই যুবক। অথচ পুলিশের কাছে রমিতের বন্ধুদের দাবি ছিল, ওই রাতে তাঁরা কেউ মদ্যপান করেননি। তবে কি রমিত একাই মদ্যপান করেছিলেন নাকি বন্ধুরা মিথ্যে বলছেন? দেখা হচ্ছে তা-ও।

বছর উনত্রিশের রমিত গত শুক্রবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বিরিয়ানি খেতে বেরিয়েছিলেন। পরে বন্ধুরাই পুলিশকে জানান, রাত দেড়টা নাগাদ বালিগঞ্জ থানা এলাকার ম্যাডক্স স্কোয়ারের কাছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁরা বিরিয়ানি খাওয়ার সময়ে স্থানীয় এক দল যুবকের সঙ্গে তাঁদের বচসা-হাতাহাতি হয়। অভিযোগ, ওই যুবকেরা রমিতদের গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে দেয়। গাড়ি নিয়ে ম্যাডক্স স্কোয়ার থেকে চলে যাওয়ার সময়ে আচমকাই বন্ধুরা দেখেন, পিছনের সিটে বসা রমিতের মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সোমবার রাতে সেখানেই মারা যান ওই যুবক। বন্ধুদের দাবি, তাঁরা গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার সময়ে স্থানীয় যুবকদের কেউই বাইরে থেকে টালি ছোড়ে। তাতেই ঘায়েল হন রমিত।

যদিও মঙ্গলবার ওই যুবকের মৃত্যুর পরে তাঁর বাবা মনোরঞ্জন মণ্ডল অভিযোগ জানান, রমিতকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। অভিযোগের তির ছিল ওই রাতে রমিতের সঙ্গে থাকা বন্ধুদের দিকেই। তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, কাউকেই সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা হচ্ছে না। রমিতের সঙ্গে থাকা বন্ধুদের সোমবারের পরে মঙ্গলবারও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, চলন্ত গাড়ির বাইরে থেকে ছোড়া টালির আঘাত কি এতটা গুরুতর হতে পারে? তা ছাড়া, ঠিক যে মূহূর্তে রমিতের এত বড় আঘাত লাগল, ছোট গাড়ির পিছনের সিটে পাশাপাশি বসা বন্ধুরা তখনই বুঝতে পারেননি কেন? অথচ, বন্ধুরা জানান, গাড়ি চলতে থাকার কিছুক্ষণ পরে তাঁরা দেখেন রমিতের মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।

শুক্রবার রাতে বাইপাসের যে হাসপাতালে রমিতকে তাঁর বন্ধুরা ভর্তি করেছিলেন, তাদের তরফে কেন পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি— এ দিন সে প্রশ্নও উঠেছে। মারামারির ফলে এমন আঘাত লেগেছে জানতে পারলে, নিয়ম মেনে তা পুলিশকে জানানোর কথা ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাই ওই রাতে ঠিক কী বলে ওই যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, এর পাশাপাশিই মদ্যপানের বিষয়টি নিয়ে অসঙ্গতি মিলেছে বন্ধুদের বয়ানে।

আবার, ম্যাডক্স স্কোয়ারের যে অঞ্চলে গণ্ডগোল হয়েছে বলে রমিতের বন্ধুদের দাবি, পুলিশ সেই এলাকায় গিয়ে দেখেছে, ফুটপাথের কোনও টালি ভাঙা নেই। এমনকী, ফুটপাথের টালি এমনিও পড়ে নেই সেখানে। এ দিন কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও সূত্র পায়নি পুলিশ। রমিতের বাবার দায়ের করা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

তবে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ রাখা হচ্ছে না ওই রাতে ম্যাডক্স স্কোয়ারে থাকা যুবকদেরও। ওই এলাকায় রাতে মোটরবাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যুবকদের একটি তালিকা তৈরি করছে পুলিশ। সূত্রের খবর, বেশ কিছু যুবকের নামও মিলেছে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ওই রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তেমন কোনও তথ্য পায়নি। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, রক্ষণাবেক্ষণে‌র কাজ চলার জন্য ঘটনাস্থলের সব থেকে কাছের সিসিটিভি ক্যামেরাটি সে রাতে কাজ করছিল না। অন্য একটি সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে ওই এলাকায় নজরদারি করা হলেও তাতে প্রয়োজনীয় ফুটেজ মেলেনি।

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রমিতের মাথার ডান দিকে আঘাত এবং গাড়ির ভিতরে রক্তের চিহ্ন দেখে বাইরে থেকে টালি ছোড়ার তত্ত্বও পুরোপুরি খারিজ করা যাচ্ছে না। এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে যান গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার অফিসাররা। রমিতের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা।

রমিতের পরিবারের তরফে এ দিন দাবি করা হয়, রমিত এর আগে কখনওই সন্ধ্যায় বেরিয়ে এত রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকেননি। শুক্রবারও সারাদিন বাড়িতেই ছিলেন তিনি। শরীর ভাল না-থাকায় নিজের ঘরেই শুয়েছিলেন তিনি। সকাল থেকেই ২০-২৫ বার ওই বন্ধুদের ফোন এসেছিল রমিতের মোবাইলে। কিন্তু ঘুমিয়ে থাকায় তিনি ফোন ধরেননি। সন্ধ্যার দিকে ফোন ধরার পরেই তিনি বেরোনোর জন্য তৈরি হন বলে পুলিশকে জানিয়েছে পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Engineer Death Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE