Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
COVID 19

রিপোর্টে দেরি, তাই উপসর্গ দেখেই পরামর্শ ডাক্তারদের

অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই দেরিতে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়াই বড় বিপদ ডেকে আনছে বলে মত চিকিৎসকদের।

উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা।

উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা। ছবি: সংগৃহীত

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২১ ০৫:০৯
Share: Save:

‘আপনারা কি বাড়িতে এসে কোভিড পরীক্ষা করেন?’― প্রশ্ন শুনে ফোনের উল্টো দিক থেকে উত্তর, ‘হ্যাঁ করি। নাম-ঠিকানা দিয়ে রাখুন। তবে দু’-তিন দিনের আগে কেউ যেতে পারবেন না।’

রিপোর্ট কবে পাব?’ প্যাথোলজি সেন্টারের কর্মীর জবাব, “গ্যারান্টি দিতে পারছি না। তবে নমুনা সংগ্রহের পরে আরও চার-পাঁচ দিন ধরে রাখুন।” অর্থাৎ সব মিলিয়ে সাত দিনের ধাক্কা! অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই দেরিতে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়াই বড় বিপদ ডেকে আনছে বলে মত চিকিৎসকদের।

তাঁরা বলছেন, “উপসর্গ শুরুর পরে পরীক্ষা করানো থেকে রিপোর্ট পাওয়া― সব মিলে যদি ৭-১০ দিন সময় লাগে, তা হলে চিকিৎসা হবে কবে? এর ফলে অনেক রোগীর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।” চিকিৎসক থেকে সংক্রমণ
বিশেষজ্ঞ সকলেই জানাচ্ছেন, দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই এই মুহূর্তে আরটি পিসিআর পরীক্ষার চাপ বেড়েছে। সব প্যাথোলজি সেন্টারের নিজস্ব গবেষণাগার না থাকায় নমুনা পরীক্ষার লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। চিকিৎসক কুণাল সরকারের কথায়, “গত বারের থেকে এ বছর সংক্রমণের হার ৬-৭ গুণ বেশি। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে, এই আশঙ্কা সত্ত্বেও আরটি পিসিআর পরীক্ষার ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। ফলে এখন দৈনিক সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও অপ্রতুল ল্যাবরেটরি ও টেকনিশিয়ান। ফলে রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে।” তবে এ সব ক্ষেত্রে উপসর্গযুক্ত রোগীর র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন কিংবা সিবি-নাট পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া জরুরি বলে মত কুণালবাবুর।

পিয়ারলেস হাসপাতালের চিফ এগ্‌জিকিউটিভ তথা চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র বলেন, “আমাদের নিজস্ব ছাড়াও অন্য জায়গা থেকে নমুনা আসছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন সাড়ে ৪০০ মতো পরীক্ষা করছি। কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা, কোভিড পরীক্ষার কিট পর্যাপ্ত মিলছে না।” সেই সঙ্গে কিটের অভাব, রোগীর চাপ বৃদ্ধি, নমুনা সংগ্রহকারী সংক্রমিত হয়ে যাওয়ায় চাপ আরও বেড়েছে জানিয়ে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের কামারহাটির শাখার মালিক রীতম মল্লিক বলেন, “ভোর ৫টা থেকে রাত ২টো পর্যন্ত ফোন আসছে। আমরা অসহায়। পাঁচ জন কর্মী ইতিমধ্যে সংক্রমিত। গত বছর দৈনিক ১০০ নমুনা সংগ্রহ হত। এখন সেটা দৈনিক ২০০-২৫০ হচ্ছে।” একই রকম ভাবে পুরসভা ও সরকারি ক্ষেত্রেও রিপোর্ট পেতে অন্তত ৪-৫ দিন সময় লাগছে বলে অভিযোগ। সমস্যার কথা মানছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলছেন, “সব কিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে। তাও সমস্ত পরিকাঠামো, ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দৈনিক ৫৫ হাজারের বেশি পরীক্ষা হচ্ছে। সেই কারণে কিছুটা সময় লাগছে।” তবে জরুরি ভিত্তিতে সঙ্কটজনক রোগীর র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে ১৫ মিনিটে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান অজয়বাবু। তিনি বলেন, “না হলে চিকিৎসা শুরু দেরিতে হলে বিপদ ঘটতে পারে।”

আরটি পিসিআর পরীক্ষার চাহিদা বাড়তেই এক শ্রেণির প্যাথোলজ়ি সেন্টার ইচ্ছে মতো দর হাঁকছেন বলেও অভিযোগ। সরকার ওই পরীক্ষার মূল্য ৯৫০ টাকা ধার্য করলেও বহু ক্ষেত্রেই তা ১৫০০-২০০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “অভিযোগ কানে এসেছে। খতিয়ে দেখছি।” শহরের এক প্যাথোলজি সেন্টারের দাবি, “বাড়ি থেকে সংগ্রহ, পিপিই সব মিলিয়ে ৪০০-৫০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।”

এ দিকে রিপোর্ট দেরিতে আসায় চিকিৎসা শুরুতে সমস্যা হচ্ছে। তাতে রোগীর ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এখন উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা শুরু করছেন অনেক চিকিৎসক। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, “রিপোর্ট আসতে সত্যিই অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা তো বন্ধ রাখা যায় না। তাই উপসর্গ থাকলে সন্দেহজনক করোনা রোগী ধরে চিকিৎসা করছি। প্রয়োজনে রক্তপরীক্ষা, বুকের সিটি স্ক্যান করে নিশ্চিত হতে হচ্ছে।” আবার জনস্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, যে কোনো অতিমারির সময়ে সেই রোগের উপসর্গ কারও থাকলে, জনস্বাস্থ্যের নিয়ম অনুযায়ী, ওই রোগটির কথাই সর্বপ্রথম ভাবতে হয়। সে ভাবেই চিকিৎসা করতে হয়। তিনি বলেন, “কোভিড পরীক্ষার পাশাপাশি রক্তের কিছু পরীক্ষা করে নিলে রোগের প্রকোপ কোন স্তরে রয়েছে, তা বোঝা সম্ভব। সেই মতো ওষুধ দিলে মৃত্যু আটকানো যাবে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE