Advertisement
E-Paper

শিশুর আকাল, ভিক্ষা করতে চাহিদা বাড়ছে কমবয়সিদের

দেশের মধ্যে ভিখারির সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৮-২০১৯ সালে দেশে ভিখারির সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৭০ জন।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০১:৪৫
বিবর্ণ: এ ভাবেই ওদের ভিক্ষার ব্যবসায় ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার, পার্ক স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

বিবর্ণ: এ ভাবেই ওদের ভিক্ষার ব্যবসায় ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার, পার্ক স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

রাস্তায় শিশু কোলে নিয়ে ভিক্ষা করার জন্য দু’তিন বছরের শিশুর চাহিদা ছিল এত দিন। অভিযোগ, ভিক্ষা করার জন্য শিশুকে দিলে মিলত ৫০ টাকা! আর তাকে সারা দিনের জন্য রেখে গেলে মিলত ৫০০ টাকা। কিন্তু পুলিশ ও শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন সূত্রের খবর, শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করানোর এই ব্যবসাতেও বদল এনেছে লকডাউন। পথে নেমে হাত পাতানোর জন্য এখন বেশি চাহিদা ৮ থেকে ১২ বছরের নাবালক-নাবালিকাদের।

দিন কয়েক আগে কালীঘাট থানার একটি পকসো মামলার সূত্রে সামনে আসে শহরের ভিক্ষা-ব্যবসার এই চেহারা। সেখানে দুই নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে দুই নাবালক-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে। নিগৃহীতা এক নাবালিকার মা জানিয়েছিলেন, কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন এলাকায় এক ‘মাসি’র কাছে মেয়েকে রেখে তিনি পরিচারিকার কাজে যেতেন। সেই সুযোগে তাঁর মেয়েকে শিশু কোলে নিয়ে ভিক্ষা করানো হত। তার আয়ের থেকে ১৫০ টাকা দেওয়া হত তার মাকে। শিশুটি কে, তা কেউ জানতে চাইলে কিশোরী বলত— “আমার বোন। মা ছেড়ে চলে গিয়েছে।”

ওই মামলার এক তদন্তকারী অফিসার জানালেন, ওই নাবালিকা সম্প্রতি থানায় এসে জানিয়েছে, ট্রেন বন্ধের কারণে শিশু ভাড়া দেওয়ার লোক ঢুকতে পারছে না শহরে। তাই এখন সে পথে নেমে ভিক্ষা করছে একাই!

আরও পড়ুন: সাইবার হানা নিয়ে ফেসবুকে প্রচার হাওড়া পুলিশের

একাধিক পাচার সংক্রান্ত মামলার সঙ্গে যুক্ত, লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক পুলিশ আধিকারিক জানাচ্ছেন, শিশু ভাড়া দিতে এত দিন ভোরের ট্রেনে শহরে আসতেন অনেকে। ভিক্ষা ব্যবসা চালায় যারা, তারাই ঠিক করত, কোন বাচ্চা কার সঙ্গে কোথায় যাবে।

ওই পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “পার্ক স্ট্রিট বা মধ্য কলকাতার রাস্তায় এই ধরনের শিশু কোলে নিয়ে মেয়েদের পাঠানো হত বেশি। এখন নাবালক-নাবালিকাদের বেশি কাজে লাগানো হচ্ছে।”

রাজ্যের শিশু অধিকার ও সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, “এমন যে হতে চলেছে, তা লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম।” সুন্দরবনের গোসাবায় ত্রাণের পাশাপাশি শিশুদের জন্য বই দেওয়ার উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমপানে ওদের বই জলে ভিজে গিয়েছে। বিকল্প কিছু না দিতে পারলে এমন ঘটনা আটকানো কঠিন। বাচ্চাদের এই ধরনের কাজে জড়িয়ে যাওয়ার আরও একটি বড় কারণ হল, মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ থাকা।”

আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে অমিল অ্যাম্বুল্যান্স, ভোগান্তি চরমে

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্টও। তাতে বলা হয়েছে, দেশের মধ্যে ভিখারির সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৮-২০১৯ সালে দেশে ভিখারির সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ৬৭০ জন। সেখানে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ভিখারির সংখ্যা ৮১,২২৪ জন। এর পরেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (৬৫,৮৩৫ জন) এবং অন্ধ্রপ্রদেশ (৩০,২১৮ জন)। অনেকেই মনে করছেন, লকডাউনের পরে আর্থিক অনটনের কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সূত্রের খবর, প্রতি মাসে এ দেশে প্রায় ৪০ হাজার শিশু অপহৃত হয়। দেশে প্রায় তিন লক্ষ শিশু প্রতিদিন হয় নেশার কবলে পড়ে, আর না-হলে ভিক্ষা ব্যবসায় ব্যবহৃত হয়।

রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “নতুন করে কেউ ভিক্ষা করতে নামছেন বলে মনে হয় না। তবে বাচ্চাদের জড়ানো হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”

তা সত্ত্বেও সরকারি রিপোর্টে কেন প্রথমেই পশ্চিমবঙ্গের নাম? মন্ত্রী বলেন, “আমরা তো করছিই, পুলিশেরও বিষয়টা দেখার কথা।” লালবাজারের কেউ এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে না চাইলেও যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই শহরের বেশ কিছু মোড়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Begging coronavirus lockdown Lalbazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy